chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

দু’মাসে নগরীর ১৬ থানায় ১৯ মৃত্যু, গণধর্ষণ ১!

অপরাধে শীর্ষে আকবরশাহ এলাকা

মেহেদী হাসান কামরুল: নগরীতে বাড়ছে খুন ও ধর্ষণের মত অপরাধের ঘটনা। অক্টোবর মাসের শুরু থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত নগরীর ১৬ থানা এলাকায় প্রশ্নবিদ্ধ মৃত্যুর (ঝুলন্ত মরদেহ) সংখ্যা অন্তত ১৫টি, ছুরিকাঘাতে ১টি, গলাকেটে ১টি, শ্বাসরোধ করে ২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। গণধর্ষণের ঘটনা একটি ঘটেছে। এর মধ্যে এসব অপরাধে শীর্ষে রয়েছে নগরীর আকবরশাহ থানা এলাকা।

পুলিশের তথ্য এবং ব্যক্তিগত প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে এসব ঘটনা। এর বাইরেও অনেক ঘটনা রয়েছে যেগুলো ভুক্তভোগীরা প্রভাবশালীদের ভয়ে, চাপে কাউকে জানাতে সাহস করছেনা অথবা আইনি আশ্রয়ে  যেতেও ভরসা পাচ্ছেনা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক-উল-হক চট্টলার খবরকে বলেন, আকবরশাহ থানা এলাকায় একসময় মাদকের বড় আখড়া ছিলো। দায়িত্ব নেয়ার পর শহীদ লেইনসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি আখড়া আমার গুড়িয়ে দিয়েছি। তবে শতভাগ নির্মূল করা যায়নি। কিছু কিছু এলাকায় এখনও ভাসমান মাদক বিক্রেতা রয়েছে। মাদক নিয়েই এই এলাকায় অপরাধ বেশি ঘটে। পুলিশ সবসময় চেষ্টা করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তিনি আরো বলেন, অপরাধ কমিয়ে আনতে শুধু পুলিশের দিকে তাকিয়ে না থেকে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। আমরা সবসময় বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এলাকার লোকজনের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করি। এখন প্রয়োজন সচেতনতার বাস্তবিক প্রয়োগ।

খুনের মত জঘন্য অপরাধে প্রথম স্থান করে এগিয়ে আছে আকবরশাহ থানা এলাকা। অক্টোবর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত জনঅধ্যূষিত এই এলাকাটিতে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে অন্তত ৫টি। শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনা ১টি। এছাড়া ২২ বার ছুরিকাঘাতে খুনের মত ঘটনা রয়েছে ১টি। পুলিশের নানা তৎপরতা থাকা সত্বেও আকবরশাহ এলাকার অপরাধের পারদ কিছুতেই যেন নিচে নামছে না, বরং ঊর্ধ্বগতি।

গত ২৮ অক্টোবর রাতে আকবরশাহ’র বিজয়নগর এলাকায় সামান্য কথা কাটাকাটির জের ধরে রনি ওরফে মালু নামের ২১ বছর বয়সী এক যুবককে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশের করা সুরতহাল প্রতিবেদনে মালুর শরীরে ২২টি ছুরিকাঘাতের ক্ষত চিহ্ন পাওয়ার কথা জানায়। খুনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাৎক্ষণিক পুলিশ শহিদুল ইসলাম নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।

এছাড়া এই এলাকায় বেড়েছে প্রশ্নবিদ্ধ মৃত্যুর সংখ্যাও। প্রায়শই শিশু, কিশোরী কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়ে থাকে এই এলাকা থেকে। সর্বশেষ গত ২৯ নভেম্বর বিকেল ৫টার দিকে লতিফপুর কালিরহাটের একটি বাসা থেকে তানজিলা আক্তার (১৩) নামে এক কিশোরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে ১১ নভেম্বর  নিউ মনছুরাবাদ এলাকার একটি বাসার জানালার সাথে ঝুলে থাকা মো.শাহাদাত হোসেন নামে ৯ বছর বয়সী এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় শিশুটির মা ছেলের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পৃথক এসব ঘটনার কোন রহস্যভেদ করতে পারেনি পুলিশ।

অপরাধ শুধু হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত এসেই থামেনি। বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ধর্ষণের মত ঘটনাও।

গত (০২ নভেম্বর) নগরের আউটার রিং রোডে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে ১৮ বছর বয়সী এক গার্মেন্টস কর্মীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কথিত প্রেমিক শফিকুল ইসলাম ও তার অপর দুই সহযোগী বাদশা মিয়া ও মো. শাহীনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ তো গেল মাত্র ১ থানার অপরাধ পরিক্রমা। এর বাইরে আছে আরো ১৫ থানা।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কিছুটা উত্তেজিত হয়েছে কোতোয়ালী থানা এলাকা। চট্টগ্রামের সবচেয়ে ফোকাস পয়েন্ট এই থানা। কারণ এখানে রয়েছে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা।

সর্বশেষ গত ৪ ডিসেম্বর রাতে টেরীবাজারে আফিম গলির চার তলা একটি ভবনের নিচ তলা থেকে হত্যাকাণ্ডের ৩ দিন পর স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী মাধব দেবনাথের লাশ উদ্ধার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানান, মামাতো ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে পরকীয়া প্রেমের জেরে মাধব দেবনাথকে তিনদিন আগেই খুন করা হয়। খুনের পর লাশ খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে বীথি। পরে খাটের নিচ থেকে দুর্গন্ধ বের হলে পরিবারের লোকজন মাধবের মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। ওসি মহসিন আরো জানান, বীথি ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি তার দেবর মাধব দেবনাথ তার অন্তরঙ্গ ভিডিও নিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে বলেও জানান।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মোস্তাক আহমেদ খান আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি বলে জানিয়ে চট্টলার খবরকে বলেন, আপরাধ নির্মূলে পুলিশ সবসময় তৎপর রয়েছে। তাছাড়া আকবরশাহ এলাকায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেশি হওয়াতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে। সবগুলো ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছে।

নচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর