chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রাম ওয়াসায় নিয়োগ ছাড়াই নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন ২৪ প্রকৌশলী! 

চট্টগ্রাম ওয়াসায় প্রকল্পভিত্তিক নিয়োগ যেন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। প্রকল্প শেষ হলেও প্রকৌশলীদের চাকরি শেষ হয় না—এমন অস্বাভাবিক বাস্তবতা এখন খোদ ওয়াসার ভেতরে রীতিমতো আলোচনার বিষয়। শর্ত ছিল স্পষ্ট—প্রকল্প শেষ, চাকরিও শেষ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রকল্প শেষ হয়ে গেলেও ২৪ জন প্রকৌশলী এখনো নিয়মিত কর্মচারীর মতো কাজ করছেন এবং পাচ্ছেন রাজস্ব খাত থেকে মাসিক বেতন।

২০১৭ সালে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ এর আওতায় এই প্রকৌশলীরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। প্রকল্পের তহবিল থেকেই তারা ছয় বছর বেতন পান। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু প্রকল্প শেষ হলেও শেষ হয়নি তাদের চাকরি। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এখন তাদের বেতন দিচ্ছে রাজস্ব খাত থেকে—যা নিয়মত রাজস্ব কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত। অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, এটি প্রশাসনিক নীতিমালা লঙ্ঘনের শামিল এবং ওয়াসার অভ্যন্তরীণ নিয়োগ ব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি করছে।

ওয়াসার একটি সূত্র জানায়, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ ছিল দৈনিক ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার পানি উৎপাদন সক্ষমতার একটি বিশাল প্রকল্প। রাঙ্গুনিয়ার পোমরা এলাকায় এই পানি শোধনাগার স্থাপন করা হয়, যেখান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি। প্রকল্পের আওতায় ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডিস্ট্রিবিউশন লাইন, আধুনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, শোধনাগার ও পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়। এসব অবকাঠামো নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন ওই ২৪ জন প্রকৌশলী। প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও তারা এখনো পানি শোধনাগার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ারা বেগম বলেন, প্রকল্প শেষ হলেও যারা কাজ করছেন, তারা অভিজ্ঞ প্রকৌশলী। ওয়াসার কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে অভিজ্ঞ লোকের প্রয়োজন। নতুন কাউকে আনলে সময় লাগবে, প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা আপাতত রয়েছেন। ভবিষ্যতে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।

তবে ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন, প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও ওই প্রকৌশলীদের রাজস্ব খাতে রেখে দেওয়ার মাধ্যমে ওয়াসার আর্থিক শৃঙ্খলা ও নিয়োগনীতিতে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ওয়াসা বোর্ডের একটি সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, নিয়মিতকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজস্ব খাত থেকে বেতন পাবেন। কিন্তু এখন সেই সিদ্ধান্তকেই ‘সুবিধাভোগী ব্যাখ্যা’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রকল্পে কর্মরত একাধিক প্রকৌশলী জানান, তারা প্রকল্পের শুরু থেকেই কাজ করছেন। ফলে শোধনাগার, পাইপলাইন ও উৎপাদন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশের সঙ্গে তারা গভীরভাবে পরিচিত। তারা বলেন,আমাদের আত্মীকরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তিন বছরেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন আমরা অনিশ্চয়তায় ভুগছি। বোর্ড যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে আমরা কর্মবিরতি দিতে বাধ্য হবো।

তারা সতর্ক করে বলেন, যদি প্রকৌশলীরা কর্মবিরতিতে যান, তবে চট্টগ্রাম শহরে পানি উৎপাদন, সরবরাহ ও বিতরণ কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়বে, এতে নাগরিক ভোগান্তি ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, প্রকল্প শেষ হলেও ওই ২৪ জন প্রকৌশলীকে রাখা হয়েছে কারণ তারা দীর্ঘদিন কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। অভিজ্ঞতার কারণে বোর্ড তাদের রাখতে অনুমোদন দিয়েছে। লোকবল ছাড়া শোধনাগার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব নয়।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০১৭ সালে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেজ-১ সমাপ্ত হওয়ার পর প্রকল্পের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়মিতকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে একই প্রকল্পে নিয়োজিতদের ক্ষেত্রে সেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে এই প্রকৌশলীরা এখন নিজের চাকরি ও ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।

ফখ|চখ

এই বিভাগের আরও খবর