প্রকৃতি এখনো জীবন্ত, রঙিন, প্রেমময়
গ্রীষ্মকাল মানেই রোদ, তাপ আর ক্লান্তির ঋতু। কিন্তু প্রকৃতি যেন এই রুক্ষ সময়কেও রাঙিয়ে তোলে সৌন্দর্যের ছোঁয়ায়। পলাশ-শিমুল যেমন বসন্তের, কদম যেমন বর্ষার প্রতীক, তেমনি কৃষ্ণচূড়া নিঃসন্দেহে গ্রীষ্মের প্রতীক। বছরের এই সময়টায় রাস্তার ধারে, স্কুল প্রাঙ্গণে, অফিস চত্বর কিংবা গ্রামের কোনো প্রাচীন পথ ধরে হঠাৎ চোখে পড়ে কৃষ্ণচূড়ার আগুনরাঙা সৌন্দর্য—সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে যেন আগুন ঝরে পড়ছে।
চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ পাশের সড়কের দৃশ্য যেন রূপকথার গল্প। সেতুর দু’পাশ জুড়ে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ—যার নিচে ছায়াঘেরা পথ আর ওপরে টকটকে লাল ফুলে ঢাকা ডালপালা। কর্ণফুলী নদীর পাশে কৃষ্ণচূড়ার লাল যেন এক অপূর্ব রঙের খেলা। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে দূরদূরান্ত থেকে আগত পর্যটকরাও মুগ্ধ এই সৌন্দর্যে।
হাটহাজারি থেকে আসা সজিব আহসান বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে এসেছি, কিন্তু নিজের চোখে না দেখলে বুঝতাম না কতটা মনমুগ্ধকর।”
কৃষ্ণচূড়া শুধু দৃষ্টির আরাম নয়, হৃদয়েরও প্রশান্তি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতায় কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য রঙ, গন্ধ ও অনুভবে উঠে এসেছে। কবিগুরু লিখেছেন, “কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী”—শুধু গন্ধেই নয়, যেন গানেও দোলা দেয় এই ফুল। এই সাহিত্যিক ঐতিহ্যই প্রমাণ করে কৃষ্ণচূড়ার আবেদন কত গভীর।
উদ্ভিদবিদদের মতে, কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম Delonix regia। এটি একটি বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ, যার আদি নিবাস মাদাগাস্কার হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগেই এটি চেনা ও চর্চিত ফুল। এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত ফুল ফোটে। রুক্ষ ও উষ্ণ আবহাওয়ায় এটি খুব ভালোভাবে প্রস্ফুটিত হয়। গ্রীষ্মের শুরুতে পাতা ঝরলেও ফুল ফোটে থোকায় থোকায়, যেন পাতাহীন ডালে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রীষ্মের ক্লান্তিকর সময়েও কৃষ্ণচূড়া যেন এক নিঃশব্দ বার্তা দেয়—এই প্রকৃতি এখনো জীবন্ত, রঙিন, প্রেমময়। সৌন্দর্য বিলিয়ে দিতে এর জুড়ি নেই। প্রকৃতি আর সাহিত্যের এই অপূর্ব মিলনেই কৃষ্ণচূড়া গ্রীষ্মের এক অনবদ্য বার্তাবাহক।
যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি আর গরমের গর্জনের মাঝেও কৃষ্ণচূড়া আমাদের শেখায়—প্রকৃতি তার ভাষায় কথা বলে। আর সেই ভাষা হলো রঙ, সৌন্দর্য ও অনুভূতির মিশ্রণ। গ্রীষ্মে যখন কৃষ্ণচূড়া ফোটে, তখন প্রকৃতি নতুন করে জেগে ওঠে।
◑ ফখ|চখ