chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে প্রচণ্ড গরমে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী

মার্চের মাঝামাঝি চট্টগ্রামে শুরু হওয়া তীব্র তাপদাহ বিপর্যস্ত করে তুলেছে জনজীবনকে। প্রচণ্ড গরমের নগরবাসীর অবস্থা যখন নাকাল, তখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগ। সিভিল সার্জনের কার্যালয় দেওয়া তথ্যমতে, গত পনের দিনে চট্টগ্রাম জেলাজুড়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১৮০০ জন। আক্রান্তদের বড় একটি অংশই শিশু ও বয়স্ক নাগরিক।

তীব্র গরমে পানির ব্যবহারের সাথে সাথে বাড়ে পানির দূষণ এবং সংক্রমণের ঝুঁকিও। অপরিষ্কার বা অস্বাস্থ্যকর খাবার, দূষিত পানি, রাস্তার পাশে খোলা খাবার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কারণে ডায়রিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের এলাকাগুলোতে নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে এই রোগের বিস্তার সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।

এছাড়া নগরীতে রয়েছে সুপেয় পানির সল্পতা। যেখানে পানির চাহিদা মেটাতে অনেকে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে অনেক সময় না ফুটিয়ে সেই পানি পান করেন। এ ছাড়া এই তীব্র গরমে পিপাসায় অস্থির মানুষ রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ফেরিঘাট ও যানবাহনে দূষিত পানি দিয়ে বানানো শরবত ও লেবুপানি পান করেন। যা ডাইরিয়া বিস্তারের অন্যতম প্রধান কারণ।

গরমে ডায়রিয়া কেন বাড়ে?
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাইয়িদ বলেন, “গরমে বায়ুতে ধুলা, পানিতে জীবাণু এবং খাবারে দূষণ খুবই বেশি হয়। শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে, ফলে মানুষ ঠান্ডা পানীয় বা খাবারের দিকে ঝোঁকে। অনেক সময় এই খাবার বা পানি’ই কলাই, কলেরা বা রোটা ভাইরাস দ্বারা দূষিত থাকে, যা ডায়রিয়ার মূল কারণ। এছাড়া রাস্তার খোলা খাবারের প্রতি নির্ভরতা এ রোগ বিস্তারে অন্যতম সহায়ক।“

তবে ডাইরিয়া হলে ঘাবড়ে না গিয়ে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরো বলেন, বেশির ভাগ সময় ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। বেশি করে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি অন্যান্য পানীয় বেশি করে পান করতে হবে। ডায়রিয়ার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করা। আমাদের শরীর থেকে ডায়রিয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়, যা শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। তাই পানিশূন্যতা যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। বাইরের পানি, পানীয় ও খাবার পরিহার করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রস্রাব ঠিকমতো হয় কি না, কাঁদলে চোখে পানি আসে কি না, নেতিয়ে পড়ে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে বলে জানান এই চিকিৎসক।

বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই পরিষ্কার বোতলে বিশুদ্ধ পানি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরো বলেন, ডায়রিয়া যেহেতু খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে এবং খাবার গরম করে খেতে হবে। বাইরের খাবার বা পানীয় পরিহার করতে হবে। পানি ফুটিয়ে পান করা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। ফ্রিজের খাবার অবশ্যই গরম করে খেতে হবে। খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। তাছাড়া ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ডাইরিয়া প্রতিরোধে অত্যন্ত জরুরি।

সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ডায়রিয়া প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, এবং স্থানীয়ভাবে ওআরএস ও প্রাথমিক চিকিৎসা সহজলভ্য করার জন্য কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করছেন এবং হটলাইন চালু রাখা হয়েছে জরুরি প্রয়োজনে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, জনসচেতনতা না বাড়লে এই প্রস্তুতি যথেষ্ট হবে না।

ডায়রিয়া প্রতিরোধে প্রস্তুতি
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহাম্মদ ইমাম হোসেন(রানা) জানান, ডাইরিয়ার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ড, মা ও শিশু হাসপাতালসহ নগরের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ রাখছি। চসিকের প্রত্যেক ওয়ার্ডের মেডিকেল টিমকে ইতোমধ্যে সচেতন করা হয়েছে, কোথাও ডাইরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা গেলে যাতে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। পাশাপাশি আমাদের চলমান প্রক্রিয়ার আওতায় স্কুল ও মসজিদভিত্তিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে।

গেল বছর কলেরা প্রতিরোধে নগরের ৩৭ ও ৩৮নং ওয়ার্ডের নাগরিকদের গণহারে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নগরের হালিশহর এলাকায় গত বছর কলেরার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে চসিক ও ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সম্মিলিত উদ্যোগে জনসাধারণের গণহারে ভ্যাক্সিনেশন করে তা মোটামুটি আয়ত্তে আনা হয়। আমরা এখনও সচেতন আছি। নগরের কোথাও এ ধরণের সমস্যা দেখা দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ফখ|চখ

এই বিভাগের আরও খবর