খালে পড়ে শিশুমৃত্যু : সিডিএ ও চসিক কার্যালয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ
উন্মুক্ত খালে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পড়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) গাফেলতির বিষয়টি খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম এই কার্যক্রমে অংশ নেন।
নগরীর কোতোয়ালীর মোড়ে সিডিএ ভবনে এবং এরপর টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সিডিএ ও চসিকের কার্যালয়ে গিয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদকের একটি দল।
দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্প্রতি খালে (নালায়) পড়ে একটি বাচ্চা মারা গেছে। চসিক ও সিডিএর এক্ষেত্রে কোনো দায়দায়িত্ব আছে কি না, মূলত আমরা সেটি যাচাই করছি। আমরা সিডিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট আরও যারা আছে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সিডিএর কাজের আওতায় ৩৬টি খাল আছে। ইতোমধ্যে ১৯টি খালের কাজ উনারা সমাপ্ত করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে হিজড়া খালে দুর্ঘটনাটা ঘটেছে, সেই খালে সিডিএ মাত্র কাজটা শুরু করেছে। কাজটা এখনও শেষ হয়নি, চলমান আছে। যেসব খালের কাজ উনারা সম্পন্ন করেছেন, সেগুলোর তীরে উনারা রেলিং দিয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা সরেজমিনে গিয়ে সেটা দেখব। যেখানে দুর্ঘটনাটা ঘটেছে, সেখানেও আমরা যাব। আমরা প্রকল্পের যে নকশা পেয়েছি, সেখানে রেলিংয়ের বিষয়টি উল্লেখ আছে। কিন্তু তারা কতটুকু কাজ করেছে, সেটা সরেজমিনে গিয়ে দেখব। তবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় সিডিএ কেন তদন্ত কমিটি গঠন করেনি সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’
এ বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুদকের নিয়মিত একটা পর্যবেক্ষণ থাকে। শুধু সিডিএ নয়, তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময় যায়, বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে, এটা তাদের নিয়মিত কাজের অংশ।’
তিনি বলেন, ‘সে হিসেবে দুদকের একটি টিম আমাদের এখানে এসেছিল। আমরা যে জলাবদ্ধতা প্রকল্পটি করছি, সেই প্রকল্পের বিষয়ে তারা কিছু তথ্য আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রকল্প পরিচালক উনাদের সবকিছু জানিয়েছেন। উনারা খুবই কনসার্ন যে, কিছুদিন আগে এখানে একটি শিশু মারা গেছে, অত্যন্ত দুঃখজনক। এ বিষয়ে উনারা জানতে চেয়েছেন। দ্রুতগামী একটি ইঞ্জিন রিকশা উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনাটা ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিডিএর ৩৬টি খাল নিয়ে কাজ চলছে, এটা সেনাবাহিনী করছে। সিডিএ সেখানে সমন্বয়ের কাজ করছে, মন্ত্রণালয় থেকে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। যে খালে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে খালটির কাজ আমরা এখনও শুরু করিনি। পর্যায়ক্রমে খালের কাজ শুরু হচ্ছে।’
নুরুল করিম বলেন, ‘যেসব খালের কাজ শেষ করেছি, তারা (দুদক) জানতে চেয়েছে যে সেখানে কোনো প্রটেকশনের ব্যবস্থা আমরা করেছি কী না। যেসব খালের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, সবগুলো খালেই আমরা প্রটেকশনের ব্যবস্থা নিয়েছি, প্রকল্প অনুযায়ী সবগুলোতে দেড় থেকে দুই ফুট করে রেলিং দেওয়া আছে। আমরা বিষয়টি দুদককে জানিয়েছি।’
উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় বৃষ্টির মধ্যে নগরীর চকবাজারের কাপাসগোলায় হিজড়া খালসংলগ্ন নালায় যাত্রীবাহী একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পড়ে যায়। অটোরিকশায় মায়ের কোলে ছয় মাস বয়সী শিশুসহ তিন যাত্রী ছিলেন। বাকিরা উদ্ধার হলেও শিশুটি তলিয়ে যায়। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর সেহেরিশ নামে ছয় মাস বয়সী মেয়েটির লাশ মেলে ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার দূরে চাকতাই খালে।
চখ/ককন