জুলাই হত্যাকাণ্ড: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জন অভিযুক্ত নতুন মামলায়
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৪০৮ জনকে আসামি করে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে চিহ্নিত পুলিশ কর্মকর্তা ও মিডিয়ার কতিপয় কর্মকর্তাদেরও নাম রয়েছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের আগ মুহূর্তে মিরপুরে মাহফুজুল আলম শ্রাবণ নামে ২১ বছর বয়সী এক তরুণকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তার ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলা করেন। এজাহারে অভিযুক্তদের চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সবার সম্পৃক্ততা ও সুনির্দিষ্ট অপরাধের ধরন উল্লেখ করা হয়েছে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) একটি সূত্র এই মামলার তথ্য জানায়।
শ্রাবণের বাবার নাম মোশাররফ হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার দোগাছী এলাকায়। তিনি মিরপুরে বসবাস করতেন। গত ৫ আগস্ট দুপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিলে আসামিরা তাকে মিরপুর থানার সামনে গুলি করে হত্যা করে বলে এজাহাজারে উল্লেখ করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, শ্রাবণের শরীরে একাধিক গুলি এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে বেরিয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরে স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন। শ্রাবণের প্রাণ হারানোর নয় মাসের মাথায় গত ২০ এপ্রিল তার ভাই আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মিরপুর থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল আদালতের নির্দেশে মিরপুর থানা মামলাটি নথিভুক্ত করে। বর্তমানে মামলাটি মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ রোমন তদন্ত করছেন। তবে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলার অগ্রগতির বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি। মিরপুর থানায় মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজিব হোসেন।
মামলার কাগজে দেখা যায়, মামলার আসামি সংখ্যা ৪০৮ জন। যাদের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টা এবং শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের জুলাই আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে হুকুমের আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল, সালমান রহমান, হাসান মাহমুদ, নসরুল হামিদ বিপুকে মামলার আসামি করা হয়েছে। এছাড়া সাবেক তিন আইজপি, স্বরাষ্ট্র সচিব, ঢাকার সাবেক পুলিশ কমিশনারসহ শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজির আহমেদ, একেএম শহীদুল হোক, হাবিবুর রহমান, আসাদুজ্জমান মিয়া, বিপ্লব কুমার, হারুনুর রশিদ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, মেয়র, দুদক চেয়ারম্যান, দুর্নীতিবাজ আমলা, চিহ্নিত ব্যবসায়ী, ব্যাংক মালিকের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া জন্য আর্থিক সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় আসামি হিসেবে আরও রয়েছেন রউফ তালুকদার, কামাল আব্দুন নাসের, নজরুল ইসলাম মজুমদার, এন আই খান, ফজলে নুর তাপস, নুর আলী, চৌধুরী নাফিস শরাফত, এস আলম প্রমুখ। মামলাটিতে চিহ্নিত সাংবাদিক ও মিডিয়া সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কমকর্তাদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার মাধ্যমে গণহত্যার সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন মোজাম্মেল বাবু, শ্যামল দত্ত, নাঈমুল ইসলাম খান, মোর্শেদ আলম, ফারজানা রূপা,সাবান মাহমুদ, আরিফ হাসান, মাসুদ ভাট্টি, মোরশেদ আলম,ইকরাম মঈন চৌধুরী।
চার শতাধিক আসামির তালিকায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের মধ্যে আসাদুজ্জমান নুর ও এশিয়াটিক গ্রুপের গ্রুপের ব্যাবস্থপনা পরিচালক ও অভিনেতা ইরেশ যাকেরকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজিব হোসেন বলেন, এই মামলাটি আদালেতর নির্দেশে মিরপুর থানা নথিভুক্ত করেছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ওসি নিজেই। তবে তিনি বর্তমানে অসুস্থ রয়েছেন। মামলার অগ্রগতির বিষয়ে আমি বিস্তারিত বলতে পারছি না। ওসি থানায় আসলে কথা বলতে পারবেন।
চখ/মীম