chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

লালদিঘীর জব্বারের মেলায় ‘তালপাতা পাখা’

তালের পাখা প্রাণের শখা, ভাদ্র মাসে যায় না দেখাপ্রচলিত প্রবচন অনুযায়ী তালের পাখা ভাদ্র মাসে দেখা না গেলেও চৈত্র-বৈশাখ মাসে তাল পাখার কদর বাড়ে বেশ। চৈত্র মাসের প্রচণ্ড দাবদাহ ও রুদ্ধশ্বাস গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। হাঁসফাঁস করতে করতে থাকে মানুষ। ঠিক তখনই দেহটিকে একটু শীতল করতে অনেকটা বাধ্য হয়েই মানুষ বেছে নেয় তাল পাতার তৈরি হাত পাখা।

আবহমানকালের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে তালের পাখা। সারা বছর ভুলে থাকলেও চৈত্র-বৈশাখ মাসে তীব্র দাবদাহ শুরু হলেই মনে পড়ে তালের পাখার কথা। আর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে গরমকাল আসা মানেই হাতপাখার কদর বেড়ে যাওয়া। এটা যেন তাদের পরম বন্ধু। তাল গাছের পাতা দিয়ে এক বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি এই হাত পাখা গ্রামীণ জনজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আবহমান কাল ধরে যার রয়েছে বেশ কদর। বৈদ্যুতিক পাখার বিকল্প হিসেবে তাল পাখার জুরি নেই সুদীর্ঘ কাল থেকে। তাল গাছের কান্ডসহ পাতা কেটে রোদে শুকিয়ে বাশের শলা ও সুতার সহযোগিতায় এক বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় এই হাত পাখা।

প্রকৃতির বৈরীর অসহনীয় গরমে হাঁপিয়ে উঠেছে জনজীবন। তবুও থেমে নেই মানুষের দৈনন্দিন জীবনের পথচলা। তবে বিদ্যুৎ চলে গেলেই দুর্বিসহ গরমে হাঁসফাস করছে কর্মব্যস্ত মানুষ। তাই তো গাত্র শীতল করতে কিছু সময়ের জন্য হলেও ব্যবহার করছেন সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি তাল গাছের পাতা দিয়ে তৈরি এই হাত পাখা।

চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘির জব্বারের ১১৬ তম বলী খেলার মেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি হাত পাখা বিক্রি করা হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। যা কিছুদিন আগেও বিক্রি হতো ২০-৪০ টাকায়। দূরদূরান্ত এলাকা থেকে ক্রয় করে এনে বিক্রি করার কারণে ও বিভিন্ন জিনিসের বাজার মূল্যের সঙ্গে সংগতি রাখতেই তাল পাখার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

চন্দনাইশের বাগিচা হাট এলাকা থেকে জব্বারের মেলায় আসা পাখা বিক্রেতা সুধীর বিশ্বাস বলেন, আমি আজ ১৫ বছর ধরে পাখা বিক্রি করছি। গত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছরের শুরুতেই তুলনামূলক অনেক বেশি পাখা বিক্রি হয়েছে তাতে বেশ লাভ হয়েছে।

অপর একজন পাখা বিক্রেতা অজিৎ বিশ্বাস বলেন, অন্য ব্যবসায়ের পাশাপাশি গরমের সিজন আসলেই পাখা বিক্রি করে কিছু টাকা জমা করতে পারি। তবে অন্যান্য দ্রব্যের তুলনায় পাখার দাম কম থাকায় তা আর এ বছর হবে না।

মেলা থেকে বেশ কিছু তাল পাতার পাখা কিনে খুশী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আইরিন সুলতানা।

তিনি বলেন, পাখাগুলো দেখতে সুন্দর। সহজে ব্যাগে করে বহনযোগ্য। পাখার বাতাসও ঠান্ডা।

লালদিঘীতে মেলার কোতোয়ালির মোড়ে বসে হাতপাখা তৈরি করছেন মৌটুসী দাশ।

তিনি জানান, ‘একটি তালের পাতা কিনতে হয় ১৫ টাকায়। তার সঙ্গে বাঁশ, সুতালি ও রঙ লাগিয়ে প্রতিটি পাখা তৈরি করতে খরচ হয় ২০ টাকা। বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। গরমে চাহিদা বাড়লেও লাভ থাকে না, কষ্ট করে কোনো রকমে সংসার চালাই।’

আরেক কারিগর আসলাম বিশ্বাস বলেন, ‘বাপ-দাদার কাছ থেকে শিখেছি এই কাজ। এখন আর তেমন লাভ হয় না, তবু এই পেশা ছেড়ে দিতে পারছি না। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পাখার মালামাল কিনি, পরে যা বিক্রি করি তা দিয়ে কিস্তিই মেটাতে হয়।

স্কুলপড়ুয়া শিশু শাহিন জানায়, ‘স্কুল থেকে ফিরে পাখা তৈরি করি। আব্বাকে সাহায্য করি। দাদাকে দেখেছি পাখা বানাতে, এখন আব্বা করছে। তবে আমার ইচ্ছা বড় হয়ে লেখাপড়া করে অন্য কিছু করব।’

ফখ|তাসু|চখ

এই বিভাগের আরও খবর