আগ্রাবাদে ফুটপাত দখলের মচ্ছব
চট্টগ্রামের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ। অফিস পাড়া খ্যাত নগরের গুরুত্বপুর্ণ এ এলাকার ফুটপাত থেকে মূল সড়কের অনেকাংশ এখন ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের দখলে। আর যত্রতত্র এসব দোকান স্থাপনের ফলে প্রতিদিন নানা ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন হাজারো স্কুল, কলেজ কিংবা অফিসগামী পথচারী। তবে পথচারীদের চলাচলের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়লেও প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন এই অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
গতকাল সরেজমিনে আগ্রাবাদ ও এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায় ফুটপাত দখল করে রমরমা বাণিজ্য চলছে সড়ক সংলগ্ন এ ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে। যেখানে কেউ বসেছেন জুতা কিংবা পোশাকের দোকান নিয়ে কেউবা বসেছেন ভাতের হোটেল কিংবা ফলমূলের পসরা নিয়ে, আর ফুডকার্টের পাশাপাশি হরেক জাতের খাবার খেতে ত আলাদা ভিড় লেগে থাকে এ এলাকা জুড়ে। আর ফুটপাতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় আশপাশের সড়কেও ছড়িয়ে পড়ছে এসব দোকান।
আগ্রাবাদ এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তাসনিমা তাকি বলেন, ‘রাস্তায় গাড়ির চাপই যথেষ্ট, তার ওপর ফুটপাত না থাকায় বাধ্য হয়ে রাস্তায় হাঁটতে হয়। করপোরেশন কেন এই সমস্যা সমাধান করতে পারছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়।‘
ফুটপাতে দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন এমন অনেকেই জানান, তাদের বিকল্প কোনো জায়গা নেই। আখতারুজ্জামান সেন্টারের সামনের ভ্রাম্যমাণ একটি জুতার দোকানের বিক্রেতা মো. রফিক। তিনি দৈনিক চট্টলার খবরকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, দোকান ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। ফুটপাতে সামান্য জায়গা নিয়ে ব্যবসা করে আমাদের সংসার চলে। করপোরেশন যদি আমাদের জন্য বিকল্প জায়গা দেয়, তাহলে আমরা সেখানে যেতে রাজি আছি।‘
রুবেল মিয়া নামে আরেক দোকানদার বলেন, ‘ভাই আমরা দিন এনে দিন খায়। আমাদেরও পেট চালাতে হয়। ফুটপাতে না বসলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। সিটি করপোরেশন মাঝে মাঝে উচ্ছেদ করে, কিন্তু তারপর আবার পেটের দায়ে একই স্থানে ফিরে আসতে হয়।‘
অনেকে দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে ব্যবসা করায় তাদের একটি ‘অধিকারিক স্বীকৃতি’ রয়েছে। ফুটপাতের একটি চায়ের দোকানের মালিক করিম মোল্লা বলেন, ‘২০ বছর ধরে এই জায়গায় আছি। করপোরেশন কখনো বাধা দেয়নি। এখন হঠাৎ উচ্ছেদ করতে চাইলে আমাদের ভাতার ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষই করবে।‘
রাজনৈতিক প্রভাব ও জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে বাধা:
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কর্মকর্তারা অবশ্য ফুটপাত দখলমুক্ত করতে বারবার অভিযান চালালেও তা স্থায়ী সমাধান আনতে পারছে না। চসিকের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা অভিযান চালালে দোকানদাররা সাময়িকভাবে সরে যায়, কিন্তু কিছুদিন পর তারা আবার ফিরে আসে। পুলিশ ও প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা এর একটি বড় কারণ।‘
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদও থাকে। অনেক সময় রাজনৈতিক চাপের কারণেও আমরা টেকসই ব্যবস্থা নিতে পারি না।
তাই শুধু উচ্ছেদের মাধ্যমে সমাধানের চিন্তা না করে সবার আগে একটি বিকল্প পুনর্বাসন পরিকল্পনা দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সমাধানের উপায় কী:
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, শুধু উচ্ছেদ অভিযানই যথেষ্ট নয়, দোকানদারদের জন্য বিকল্প স্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার ইনিস্টিটিউশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও নগরবিদ দেলোয়ার মজুমদার দৈনিক চট্টলার খবরকে বলেন, ‘ফুটপাত দখল রোধে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন, পাশাপাশি ভাসমান দোকানদারদের জন্য হকার্স জোন বা নির্দিষ্ট বাজার তৈরি করতে হবে। শুধু শক্তি প্রয়োগ করলে সমস্যা সমাধান হবে না। এ সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো এবং জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন’।
◑ ফখ|চখ