চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প
চট্টগ্রাম নগরের উত্তর হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায় বে টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১৪ হাজার ৯০৮.৮৩ কোটি টাকার একটি সহায়তা প্রকল্প অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার।
প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আজ রোববার (২০ এপ্রিল) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) উপস্থাপন করা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় একটি ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল নির্মাণ করা হবে। এছাড়া কমন ফ্যাসিলিটিজ, সংযোগ সড়ক, রেলপথ, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ স্থাপন, টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ রাস্তা এবং একটি সার্ভিস জেটি নির্মাণ করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ২০৩১ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে তার আগেই তিনটি বে টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
তিনটি টার্মিনালের মধ্যে দুটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ব্যবস্থায় নির্মিত হবে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে পিপিপি কর্তৃপক্ষ এবং এন্টারপ্রাইজ অভ সিঙ্গাপুরের মধ্যে টার্মিনাল ১-এর জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছিল। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে টার্মিনাল ২ নির্মাণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আরেকটি এমওইউ সই হয়েছিল।
এছাড়া একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের একটি এমওইউ সই হয়েছে গত বছরের মে মাসে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রস্তাবিত অবকাঠামো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ শুরু না করলে পিপিপির আওতায় টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আস্থা হারাবে। এই করণে প্রকল্পটিতে গুরুত্ব দিচ্ছে বর্তমান সরকার।
এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক প্রাথমিকভাবে বিটিএমআইডিপির আওতায় ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন চ্যানেল নির্মাণের জন্য ৬৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। এই প্রকল্পের জন্য মোট ৮৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণের প্রয়োজন হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। অতিরিক্ত ঋণও বিশ্বব্যাংক দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে সম্প্রতি এই প্রকল্পটি নিয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে।
প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, প্রস্তাবিত বিটিএমআইডিপিতে ব্রেকওয়াটার নির্মাণে ৮ হাজার ২৬৯.৮৫ কোটি টাকা, নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল নির্মাণে ১ হাজার ৯৭৯.৪৫ কোটি টাকা, এইডস টু নেভিগেশন স্থাপনে ৫৭.৭০ কোটি টাকা এবং কমন ফ্যাসিলিটিজ ও অভ্যন্তরীণ সংযোগের জন্য ৩ হাজার ৪৩৪.৬৮ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।
সরকার ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে বে টার্মিনাল নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। একই বছরে জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালট্যান্ট প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে। এরপর ২০১৭ সালে পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও মাস্টারপ্ল্যান তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরে ২০২১ সালে কুনহুয়া নামক একটি কোরিয়ান কোম্পানিকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং মাস্টারপ্ল্যান তৈরির জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়, যা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতের চাহিদা মেটাতে এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এবং জাতীয় উন্নয়নকে সহায়তা করতে বে টার্মিনালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক দৈনিক চট্টলার খবরকে বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) একনেকে অনুমোদন হওয়ার পরপরই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের ঋণচুক্তি হবে। এরপর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবেন তারা। শিগগির মূল কাজ শুরু করতে পারবে চট্টগ্রাম বন্দর।
◑ ফখ|চখ