চট্টগ্রাম নগরে যানজট বাড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা
চট্টগ্রাম শহরের পরিবহন ব্যবস্থা বর্তমানে এক গভীর সঙ্কটের মুখে।সম্প্রতি, নগরের অলি-গলি থেকে প্রধান সড়কে উঠে আসা ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাগুলোর উপস্থিতি শহরের যানজট পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে আশঙ্খাজনক হারে । একসময় পাড়া মহল্লার ছোট সড়ক, পল্লী কিংবা পাহাড়ি সড়ক গুলোতে এগুলোর আনাগোনা থাকলেও, এই রিক্সাগুলো এখন চলতে শুরু করেছে নগরের মূল সড়কেও।
বিশেষত শহরের কেন্দ্রীয় সড়কগুলোতে এ অটোরিক্সাগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক হারে, যার শুরুটা হয় মূলত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই। ফলে নগরজুড়ে যানজট, দুর্ঘটনা ও জনদূর্ভোগ তীব্র আকার ধারন করেছে।
সরেজমিনে ঘুরে ও ভুক্তভোগীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, বিভিন্ন কারণে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাগুলোকে নিয়ে সমস্যা বেড়েছে। একদিকে, এই বাহনগুলো সড়কে যত্রতত্র পার্কিং করছে, ফলে যানবাহন চলাচলে ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে, অনেক চালক ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া গতিতে ওভারটেকিংসহ ব্যস্ততম রাস্তায় উল্টো পথে চলাচল, হঠাৎ করে রাস্তায় থেমে যাত্রী তোলার মত আইন বহির্ভুত কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে করে যানজট পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠছে।
এছাড়া কম বয়সী চালকরা সড়কে বিপত্তি সৃষ্টি করছে সবচেয়ে বেশি, যাদের নেই মূল সড়কে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা, নেই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে নুন্যতম ধারণা, যা সড়ক ব্যবস্থাকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে।
কলেজছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘অনেক সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরা এসব গাড়ি চালায়। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে বেপরোয়া গতিতে প্রধান সড়কে রেস দেয়। পুলিশ দেখলেও শুধু তাকিয়ে থাকে।‘
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে বারবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও, প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি অনেকটা অপরিবর্তিত। সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, তারা নিয়মিতভাবে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন, তবে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাগুলোর জন্য কোনো নির্ধারিত গাইডলাইন না থাকায় এবং রেজিস্ট্রেশনবিহীন হওয়ায় চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
এছাড়া, এসব অটোরিক্সা শহরের বিভিন্ন পাহাড়ি সড়কের প্রয়োজনীয় বাহন হওয়ায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করাটাও কিছুটা সমস্যাজনক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘যানজটের সমস্যা চট্টগ্রামের মত একটি বৃহৎ শহরে অনেক জটিল এবং এখানে যারা নিয়ম মানছে না তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে, এসব ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় স্থায়ী সমাধানের জন্য সিটি করপোরেশন ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগে আরো কার্যকর পরিকল্পনার প্রয়োজন।‘
তবে নগরবাসীর অভিযোগ, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাই এই সমস্যা বাড়াচ্ছে। অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশ চাঁদা নিয়ে অটোরিক্সা চালকদের ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
যার ফলে নগরবাসীও সহসায় এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা, বিশেষত কর্মঘন্টার শুরুতে সকালে এবং কর্মঘন্টার শেষে সন্ধ্যায় শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজটের সৃষ্টি করে। ফারহান শাহরিয়ার নামে ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘প্রতিদিন অফিস যাওয়ার পথে অসহনীয় যানজটে পড়ে থাকি। এসব অটোরিক্সার কারণে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে, আর এ কারণে ট্রাফিক সিগন্যালেও তীব্র যানজট হয়।‘
নগর গবেষক একে এম কামরুল হুদা বলে, এ পরিস্থিতির মোকাবেলায় চট্টগ্রাম নগরের পরিবহন ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। পুলিশ যদি আরো সক্রিয়ভাবে অভিযান পরিচালনা করে এবং স্থানীয় প্রশাসন যদি নির্দিষ্ট জায়গায় এসব অটোরিক্সার চলাচলের স্থান নির্ধারণ করে, তবে কিছুটা হলেও এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, সড়ক সংস্কার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি। এটি একমাত্র তখনই সম্ভব হবে, যখন নগর কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ একযোগে কাজ করবে।
এছাড়া, পরিবহন আইন প্রয়োগ এবং নিয়মিত চেকপোস্ট স্থাপন করেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হতে পারে বলে জানান তিনি।
◑ জেএফআই|ফখ|চখ