chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ঈদে নিরাপত্তার শঙ্কায় উদ্বিগ্ন চট্টগ্রামবাসী, বিশেষ ব্যবস্থা পুলিশের 

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হয়েছে আজ থেকে।
আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি উপভোগ করবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আগেই চট্টগ্রাম নগর ছেড়েছেন অনেকে। তবে পোশাকশিল্পসহ বেশকিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আগামী কাল শনিবার অফিস হয়ে ঈদের ছুটিতে যাবে।

এদিকে দীর্ঘ ছুটিতে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়বে চট্টগ্রাম নগর। চট্টগ্রামের নিরাপত্তায় এরই মধ্যে তৎপরতা জোরদার করেছে পুলিশ-র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবু নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন নগরবাসী।

ঈদের ছুটিতে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতির মতো ঘটনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

তবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ বলছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দেড়গুণ বেশি পুলিশ মোতায়েন থাকবে। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকের সদস্যসহ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সব ইউনিট মাঠে থাকবে।

সিএমপির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রমজানের শুরু থেকেই নগরীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মধ্য রমজান থেকে মার্কেট ও শপিংমল কেন্দ্রিক নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। ঈদের ছুটির শুরু থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা মাঠে নামবেন।

ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাস টার্মিনালগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি ফাঁকা নগরী, ঈদ জামাত ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি-মিডিয়া) মাহমুদা বেগম জানান, ‘রমজানের শেষ ১০ দিনে মার্কেটগুলোতে প্রচুর ভিড় থাকে, তাই পেট্রল টিম কাজ করছে। আবার ঈদের ছুটিতে মানুষ বাড়ি চলে যায়, সেজন্য বাস টার্মিনালগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে নগরী ফাঁকা হয়ে যায়। নাগরিকদের প্রতি আমাদের পরামর্শ, নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেরাই গ্রহণ করুন। বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে দেশের যেকোনো জায়গা থেকেই তা নজরদারি করা সম্ভব। এছাড়া ঈদে পুলিশের টহল স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়ানো হবে।’

নগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-কমিশনার মোখলেছুর রহমান জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা ও নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সাদা পোশাকে ২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সিটিএসবির ২০০ সদস্য মাঠে থাকবে। ঈদের নামাজ, বিনোদন কেন্দ্র ও ফাঁকা নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া মানুষ যাতে ঈদযাত্রায় কোনো হয়রানির শিকার না হয়, সেটাও নজরদারিতে থাকবে।’

বাসা-বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তায় সিএমপির নির্দেশনা:

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চট্টগ্রাম শহরের অনেক বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন, ফলে নগরীর বাসা-বাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ফাঁকা থাকবে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা জোরদার করতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) নগরবাসীকে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে দেয়া সিএমপির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাসার দরজায় অধিক নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত লক বা তালা ব্যবহার করতে হবে। ফাঁকা বাসায় নগদ টাকা বা স্বর্ণালংকার না রেখে তা নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করা উচিত। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা, অ্যালার্ম সিস্টেমসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবাসিক এলাকায় রাতে অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা এবং নতুন নিয়োগকৃত নিরাপত্তাকর্মীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) ও ছবি সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া, সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তি ঘোরাফেরা করলে তাৎক্ষণিক স্থানীয় থানায় জানাতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে জরুরি সেবা ৯৯৯ বা সিএমপি স্পেশাল কন্ট্রোল হটলাইনে (01320-057998, 01320-054384) যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা মনিটরিংয়ের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে পালাক্রমে একজন অফিসার নিয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের ভল্টের চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরার কভারেজ নিশ্চিত করতে হবে এবং সন্দেহজনক কিছু নজরে এলে নিকটস্থ থানায় জানাতে হবে। পাশাপাশি, ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনে থানার সহায়তা নিতে বলা হয়েছে।

সিএমপির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, যারা ঈদের ছুটিতে পরিবারসহ গ্রামের বাড়িতে যাবেন, তারা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট থানার বিট অফিসারকে অবহিত করবেন। পুলিশের এই নির্দেশনা অনুসরণ করলে নগরবাসীর ঈদযাত্রা হবে নির্বিঘ্ন এবং ঘরবাড়ি থাকবে নিরাপদ।

ফখ|চখ

 

এই বিভাগের আরও খবর