chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ঈদের বন্ধে চট্টগ্রামে যেখানে ঘুরে আসতে পারেন

ঈদ মানেই একটু বাড়তি ছুটি, ঈদ মানেই একটু বাড়তি আনন্দ। পরিবার নিয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বেড়ানোর পাশাপাশি ভ্রমণ পিপাসু মানুষ পাহাড়, নদী, লেক, সমুদ্র কিংবা প্রকৃতির কাছাকাছি ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ খুঁজেন। এই ঈদের ছুটিতে যারা প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে চান তাদের জন্য চট্টগ্রাম একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় জেলা বলা যায়। চট্টগ্রামে আপন রূপে শোভিত হয়ে আছে অনেক দর্শনীয় স্থান,  এই জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর। এক নজরে চট্টগ্রামের কোথায় গেলে কী দেখা যাবে…

সমুদ্রসৈকত

চট্টগ্রামের সবচেয়ে জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত। শহরের পতেঙ্গায় জনপ্রিয় পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। এখান থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। এরপর আনোয়ারা উপজেলায় রয়েছে পারকি বিচ, বাঁশখালী উপজেলায় বাঁশখালী সমুদ্রসৈকত। এটি আরো শান্ত ও কম জনবহুল একটি সমুদ্রসৈকত। যারা ভিড় এড়িয়ে কিছু সময় একান্তে কাটাতে চায়, তাদের জন্য এটি আদর্শ স্থান। এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের ভেতর কাট্টলী সমুদ্রসৈকত, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত, আকিলপুর সমুদ্রসৈকত পাবেন।

চা-বাগান

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় রয়েছে ১৮টি চা-বাগান। এ ছাড়া বাঁশখালী ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়ও রয়েছে চা-বাগান। বাঁশখালী উপজেলার ১ নম্বর পুকুরিয়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৩৪৭২.৫৩ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত বেলগাঁও চা-বাগান। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে ঠান্ডাছড়ি চা-বাগান। বাংলাদেশের প্রথম ও শীর্ষস্থানীয় চা-বাগানের মধ্যে অন্যতম কোদালা চা-বাগান। রাঙ্গুনিয়া সদর উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে এই ঐতিহ্যবাহী কোদালা চা-বাগানের অবস্থান। চা-বাগানের পাশ দিয়ে রূপের মাধুরী ছড়িয়ে বয়ে গেছে লুসাইকন্যা কর্ণফুলী।

লেক

চট্টগ্রামে বেশকিছু লেক রয়েছে। যার মধ্যে ফয়েজ লেক অন্যতম। এখানে  কায়াকিং করা যায় এবং পিকনিকের জন্যও আদর্শ পরিবেশ রয়েছে। এ ছাড়া মিরসরাই ও ভাটিয়ারীতেও রয়েছে লেক। মিরসরাই উপজেলায় রয়েছে মহামায়া ও বাওয়াছড়া লেক। মহামায়া লেকের টলটলে পানি আর পাহাড়ের মিতালী ছাড়াও এখানে পাহাড়ি গুহা, রাবার ড্যাম ও অনিন্দ্যসুন্দর ঝরনা রয়েছে। মহামায়া লেকে আছে কায়াকিং করার সুবিধা এবং চাইলে তাঁবুতে রাতে ক্যাম্পিং করে থাকতেও পারবেন। বাওয়াছড়া লেকের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোনো নিখুঁত ছবি। ঝরনার পানি আছড়ে পড়ার শব্দ নূপুরধ্বনির মতোই মধুর। দুই পাশের সুউচ্চ পাহাড় থেকে পানি অবিরাম লেকে গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য অপূর্ব প্রশান্তি এনে দেয়।

ঝরনা

ঝরনার কথা উঠলেই সবার প্রথমে মনে আসে চট্টগ্রামের মিরসরাই এবং সীতাকুণ্ডের নাম। চট্টগ্রামে যত ঝরনা আছে তার অর্ধেক বোধহয় এই দুই উপজেলায়। মিরসরাইয়ে রয়েছে খৈয়াছড়া ট্রেইল, সোনাইছড়ি ট্রেইল, নাপিত্তাছড়া ট্রেইল, বোয়ালিয়া ঝরনা, ছাগলকান্দা, হরিণমারা ট্রেইল, কমলদহ ট্রেইল এবং সীতাকুণ্ডে রয়েছে ঝরনাঝরঝরি ট্রেইল, বাড়বকুণ্ড ট্রেইল, সুপ্তধারা ট্রেইল ও সহস্রধারা ট্রেইল। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ঝরনা।

পাহাড়

চট্টগ্রাম পাহাড়ের জন্যও আদর্শ একটি জেলা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা একটি পাহাড়ি এলাকা এবং এটি প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। সীতাকুণ্ডে রয়েছে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, জলপ্রপাত এবং পাহাড়ি রুট ট্র্যাকিংয়ের সুযোগ। এখানে রয়েছে বেশ সুপরিচিত চন্দ্রনাথ মন্দির। এই মন্দির দেখতে পর্যটকরা পাহাড়ে ট্র্যাকিং করেন।

ইকোপার্ক

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে রয়েছে ইকোপার্ক। এই পার্কে লেক ও ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। এ ছাড়া এখানে মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, চিত্রা বিড়াল, বাঘ, মেছোবাঘ ও পাখির প্রজননকেন্দ্র রয়েছে। শীতকালে অতিথি পাখির কলরবে সরব হয়ে উঠে এই ইকোপার্কের সবুজ প্রকৃতি। ইকোপার্কের সুউচ্চ পাহাড়ে দাঁড়িয়ে বঙ্গোপসাগরের অথৈ জলরাশি, পাহাড়ের কোলঘেঁষে বয়ে চলা ঝরনাধারা আর বিকেলবেলায় সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য পর্যটকদের মোহিত করে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ড উপজেলায় রয়েছে একটি ইকোপার্ক। সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে সহস্রধারা ও সুপ্তধারা নামে দুটি ঝরনা রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির গাছ।

ঐতিহাসিক স্থাপনা

চট্টগ্রাম একটি পুরোনো শহর, তাই এখানে অনেক ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে চন্দনপুরা মসজিদ, আন্দরকিল্লা মসজিদ, চেরাগী পাহাড়, প্রথম আদালত ভবন, অলি খাঁ মসজিদ, বাঁশখালীর হামিদ বকশি মসজিদ, মিরসরাইয়ের শমসের গাজির কেল্লা, হাটহাজারীর উপজেলার আলাওল মসজিদ, ফতেপুর পাথরের শিলালিপি, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ও দৃষ্টিনন্দন বর্মী-বাংলা স্থাপত্যে নির্মিত সার্কিট হাউস ভবন, কধুরখীল পার্বতী চরণ দিঘি, সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরায় সুলতানি আমলে নির্মিত হাম্মাদিয়া মসজিদ, হাটহাজারীর বড়দিঘির সুলতানি আমলের নসরত শাহ মসজিদ, মোগল আমলের পোস্তার পাড় ও হাজি মসজিদ অন্যতম।

তাসু/চখ

এই বিভাগের আরও খবর