chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

২৩০ বছরের পুরোনো আজগর আলী চৌধুরী জামে মসজিদ

চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ থেকে সোজা পশ্চিমে তিন কিলোমিটার গেলেই হালিশহরের বড়পোল এলাকা। সেখান থেকে আরও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে এগোলেই হালিশহরের চৌধুরীপাড়া। ১৭৯৫ সালে আলী আজগর চৌধুরী মুঘল স্থাপত্যের নকশার উপর ভিত্তি করে মসজিদটি নির্মাণ করেন । ২০১৫ সালের মধ্যে, আকার এবং পুরাতন অবস্থার কারণে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এটিতে নামাজ পড়া অসম্ভব হয়ে পড়ে, তাই চৌধুরী পরিবার সেখানে আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করে।

উত্তর হালিশহরের চৌধুরীপাড়ায় অছি মিয়া চৌধুরী সড়কে প্রবেশ করতেই পশ্চিম পাশে চোখে পড়ে সীমানা দেয়াল ঘেরা মসজিদটি। আর পূর্ব পাশেই আসগর আলী চৌধুরী জমিদার বাড়ি। বাড়িটি মসজিদের সমসাময়িক।

প্রতি শুক্রবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে নামাজ পড়তে আসেন, যেখানে ‘প্রাচীন’ ও ‘আধুনিক’ স্থাপত্যরীতির যুগলবন্দিরও দেখা মেলে।

আট বছর আগে ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি সংস্কার করা হয়। সংস্কারের দুবছর আগে প্রাঙ্গণে নির্মাণ করা হয় ‘আধুনিক স্থাপত্যরীতির’ একটি মসজিদও।

১৭৯৫ সালে এখানেই নির্মাণ করা হয় মোগল স্থাপত্য নকশায় চুন-সুরকির দৃষ্টিনন্দন আজগর আলী চৌধুরী জামে মসজিদ, তার আগে ১৭৬১ সালে চট্টগ্রাম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনে আসে। তার কয়েক বছর পরে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। যেটি এখনো টিকে আছে ইতিহাসের স্মারক হয়ে।  “তখন এ অঞ্চলে কেবল ব্রিটিশ যুগ শুরু। তাই মসজিদটি মুঘল যুগের না হলেও এর নির্মাণ কাজে মুঘল স্থাপত্য রীতিকে অনুসরণ করা হয়েছে।”

মসজিদটি নির্মাণ করেন আসগর আলী চৌধুরী, যিনি হালিশহরের সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারের সদস্য ছিলেন ।

মসজিদটির সামনের অংশের দেয়ালজুড়ে নকশা। ১০ শতক জায়গার ওপর মসজিদের চার প্রান্তে চারটি বড় নকশাকরা পিলার। প্রতিটির চূড়ায় মিনার আছে। প্রায় আড়াই শ’ বছর আগে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল তাজমহলের আদলে। চারপাশের দেয়ালের মাঝের অংশে আরও দুটি করে ছোট আকারের পিলার আছে। এই আটটি পিলারের শীর্ষেও আছে মিনার। মসজিদের ছাদে শোভা পেয়েছে বড় তিনটি গম্বুজ ও ২০টি মিনার। পোড়ামাটির রঙের এই মসজিদের চারপাশ সাজানো হয়েছে নানা রকম নকশা দিয়ে। শুধু বাইরের দেয়ালই নয়, ভেতরের দেয়াল ও কাঠামোজুড়ে মোগল স্মৃতিচিহ্ন প্রদর্শন করে যাচ্ছে চোখ-ধাঁধানো নানা রকম নকশা। মুঘল স্থাপত্যরীতি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো স্থাপনায় গম্বুজ ও মিনারের ব্যবহার, যা আসগর আলী চৌধুরী জামে মসজিদে দেখা যায়।

 

আসগর আলী চৌধুরী জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন আরিফুল ইসলাম বলেন, “পুরনো মসজিদে তিন কাতারে ১০ জন করে ইমামসহ ৩১ জন নামাজ পড়তে পারেন। পুরনো মসজিদটিতে বছরের ১১ মাস ফজরের নামাজ হয়। বাকি চার ওয়াক্তের নামাজ হয় নতুন মসজিদে।

“রমজানে ফজরের নামাজে মানুষ বেশি হয়। তাই রোজার সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই নতুন মসজিদে হয়।”

মসজিদটির ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে জায়নামাজ বিছানো। কিন্তু আট বছর আগে মসজিদটি এতটা পরিপাটি ছিল না। জৌলুস হারিয়ে অনেকটা বিবর্ণ হয়ে পড়েছিল তখন। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নামাজ পড়াও।

মসজিদের উত্তর পাশেই কবরস্থান। সেখানেই জমিদার আসগর আলী চৌধুরী পরিবারের সদস্যদের শেষ ঠিকানা। কবরস্থানের পাশেই পুকুর। আর সেই পুকুরের পাড় ঘেঁষে নতুন মসজিদটি।

নতুন মসজিদের তিন দিকে জলাধার। উত্তর ও পশ্চিম প্রান্ত খোলা।

স্থানীয় বাসিন্দা নিজামুল হক বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে পুরনো মসজিদটি দেখতে আসেন। নতুন মসজিদটি হওয়ার পর ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতও এসেছিলেন।

তাসু।চখ