chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে মার্কেটগুলো বেচাকেনায় সরগরম

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। ক্রেতারা ঈদের জন্য নতুন নতুন পোশাক, গহনা, জুতো এবং উপহার কেনার জন্য দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। ঈদের সাজসজ্জা ও নতুন সংগ্রহে সাজানো দোকানগুলোতে অনেকেই চোখ বুলাচ্ছেন। কিছু দোকানে বিশেষ অফার এবং ডিসকাউন্ট চলছে, যা কেনাকাটাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে।

অভিজাত বিপণি কেন্দ্র, শপিংমল, বাজার, ছোট-বড় ব্র্যান্ডের দোকান-আউটলেট থেকে শুরু করে ফুটপাতেও এখন ক্রেতাদের ভিড়। এবারের ঈদ উপলক্ষে অনলাইন কেনাকাটা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় এবং নতুন নতুন অফারের কারণে ঘরে বসেই কেনাকাটা করতে সুবিধা পাচ্ছেন অনেকেই। বিশেষ করে ফ্যাশন, গহনা, উপহারগুলোর মধ্যে অনলাইন শপিংয়ের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। অনলাইনে কেনাকাটা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরের নিউ মার্কেট, রিযাজ উদ্দিন বাজার, প্যারমন্ট সিটি, চকবাজার মতি টাওয়ার, বালি আর্কিট, গোলজার সুপার মার্কেট, স্যানমান ওশানসিটি, মিমি সুপারমার্কেট, লাকী প্লাজা, অফমি প্লাজা, মিনি সুপারমার্কেট, ভিআইপি টাওয়ার, আগ্রাবাদ সিঙ্গাপুর মার্কেট, আক্তারুজ্জামান সেন্টার, আমিন সেন্টারসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, পোশাকের দোকানগুলোতে পুরুষদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, গেঞ্জি, টিশার্ট, নারীদের শাড়ি, থ্রিপিস, ওয়ান পিস, কুর্তা এবং বাচ্চা ও শিশুদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, ফ্রক, গেঞ্জি সেটসহ আধুনিক ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি, কসমেটিকস, জুতা, ঘর সাজানোর সামগ্রী এবং গহনার দোকানগুলোতেও ভিড় জমে উঠেছে।

এছাড়া, পতেঙ্গা, বায়েজিদ ও বহদ্দারহাট কেন্দ্রিক এলাকায় ঈদের কেনাকাটা বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। মার্কেট ও শপিংমলের পাশাপাশি ফুটপাতেও পোশাক, গয়না ও কসমেটিকসের বিক্রি চলছে দেদার। বিশেষ করে নিউমার্কেট, হকার্স মার্কেট এবং রিয়াজউদ্দিন বাজার ও টেরিবাজারে মহিলা ক্রেতার ভিড় বেশি দেখা গেছে।

অন্যদিকে, ফুটপাত থেকে অভিজাত শপিংমল ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার দিয়ে দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ ক্রেতাদের শার্ট-প্যান্টের দোকানগুলো তরুণ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে।

ষোলশহর এলাকার বেশ কয়েকটি শপিং সেন্টারের পাঞ্জাবি- পায়জামার দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া, রেলস্টেশন রোডের জুতার দোকানগুলোতেও কেনাকাটার ভিড় লক্ষ করা গেছে। সিজনাল ডিসকাউন্ট ও ফেস্টিভ অফারের পাশাপাশি, নির্দিষ্ট ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করলেও মিলছে ছাড় এবং ক্যাশব্যাক অফার।

দোকানিরা জানান, এ বছর ঈদের কেনাকাটা আগেভাগেই শুরু হয়েছে এবং প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে। নারী, পুরুষ ও শিশুর জন্য নতুন ডিজাইনের পোশাক বিক্রি হচ্ছে ব্যাপক হারে। এ ছাড়া মসলিন, সিল্ক, জামদানি, কাতান, কাশ্মীরি কাজ করা শাড়ি ও লেহেঙ্গা, পুরুষদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, টিশার্ট এবং শিশুদের জন্য আরামদায়ক পোশাকের চাহিদা বেশি। গরমের কথা মাথায় রেখে ক্রেতারা সুতি কাপড়কে বেশি পছন্দ করছেন, এমনটিও জানিয়েছেন দোকানিরা।

ষোলশহর এলাকার আড়ংয়ের বিক্রয়কর্মীরা জানান, এবার আগেভাগেই ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।আউটলেট খোলার পর থেকেই প্রচুর মানুষ আসছেন, বিশেষ করে দুপুরের পর ভিড় আরও বেড়ে যায়। বিকেল ও সন্ধ্যার পর সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা হয় ।

পাঞ্জাবি, শাড়ি, ওয়ান পিস ও বাচ্চাদের পোশাকের পাশাপাশি কসমেটিকস, গহনা এবং লেডিস ব্যাগ-পার্সের চাহিদাও বেশ বেশি। ফলে বিক্রয়কর্মীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

জুতার দোকানগুলোতেও ঈদের কেনাকাটার ধুম পড়েছে। বিভিন্ন ডিজাইনের স্যান্ডেল, স্লিপার, হিল, ফ্ল্যাট, স্পোর্টস শু বাচ্চাদের জুতাসহ নানা ধরনের পণ্যের বিশাল সংগ্রহ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক দোকানেই বিশেষ ঈদ অফার ও ডিসকাউন্ট প্রদান করা হচ্ছে, যা ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে। মহিলাদের জন্য ফ্যাশনেবল হিল, স্যান্ডেল এবং পুরুষদের জন্য আরামদায়ক স্পোর্টস শু, ড্রেস শু, স্লিপার কিনতে আসছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। বাচ্চাদের জন্য রঙিন ও মজাদার ডিজাইনের জুতা পাওয়া যাচ্ছে, যা তাদের ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। দোকানগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের তৈরি মানসম্পন্ন জুতাও পাওয়া যাচ্ছে, যা ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।

সোনার দাম এ বছর তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কিছুটা দুশ্চিন্তা তৈরি হলেও, ঈদকে সামনে রেখে গহনা কেনার প্রতি আগ্রহ রয়েছে অনেকের।

জুয়েলারি শপগুলোতে সোনার গহনার দাম বাড়লেও, অনেক দোকানে ঋণের সুবিধা, ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক অফার এবং পুরনো গহনা বদলে নতুন গহনা কেনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। সোনার গহনার দাম বৃদ্ধি হলেও, বিশেষ ডিজাইন এবং পছন্দের গহনা কেনার জন্য অনেকেই এগিয়ে আসছেন। কাপড়ের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে গয়নার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহও বেশ লক্ষণীয়।

নিউ মার্কেট, ভিআইপি টাওয়ার, সঢানমার ওসান সিটি, চকবাজার ও হাজারি গলিতে জার্মান সিলভার ও ভারতীয় গয়নার দাপট বেশি। রুপার ওপর মিনাকারি কাজ, কৃত্রিম মুক্তা ও পাথরজুড়ে তৈরি করা হচ্ছে গলার মালা, কানের দুল ও চুড়ি। পাশাপাশি আয়না, কাপড় ও সুতার তৈরি গয়নাও রয়েছে পছন্দের তালিকায় । ধাতু ও কাঠের আংটির দাম শুরু ১০০ টাকা থেকে। জার্মান সিলভারে রগলার মালা ও কানের দুলের সেট মিলবে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। টানা ঝুমকা পাওয়া যাচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া দোকানগুলোয় এখন পাওয়া যাচ্ছে মখমল লাগানো কাচের চুড়ি। ১২ পিসের এক সেটের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, আর ৫০ টাকায় মিলছে ছিমছাম একগুচ্ছ রেশমি কাচের চুড়ি।

টেরিবাজারের আজমির ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী আরিফ জানান, সারা দিনের তুলনায় সন্ধ্যার পর ক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। ইফতারের পর থেকেই মানুষ কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। ঈদ উপলক্ষে সুতি ও আরামদায়ক কাপড়ের শার্ট, টিশার্ট এবং প্যান্টের নতুন কালেকশনের চাহিদা বেশি। তিনি আশা করছেন, ঈদ যত কাছে আসবে, বেচাকেনাও তত জমজমাট হবে।

ফখ|তাসু|চখ

এই বিভাগের আরও খবর