ডিএনএ রিপোর্টে আড়াই বছর আটকে আছে শিশুধর্ষণ মামলার তদন্ত
চট্টগ্রাম নগরের জামাল খানের চাঞ্চল্যকর শিশু বর্ষা ধর্ষণ, হত্যা ও লাশ গোপনের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আসেনি প্রায় আড়াই (২ বছর ৫ মাস ২০ দিন) বছরেও। আই.ও বলছেন, ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় তদন্ত ঝুলে আছে। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট ৬ষ্ঠ আদালতে বাদী ও ভিকটিম পক্ষে একাধিকবার তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট তলবের আবেদন করেছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফ। কিন্তু ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় তা ঝুলে আছে।
মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন- বিএইচআরএফ মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান দৈনিক চট্টলার খবরকে বলেন, শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলাগুলো গুরুত্ব না দেওয়ায় আজ একের পর এক নারকীয় শিশুধর্ষণের মতো নৃশংস ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একের পর এক শুধু মামলার তারিখ পড়ছে। তাহলে ৩০ দিনে শিশুধর্ষণ মামলার বিচার সমাপ্ত করার সিদ্ধান কে, কিভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি মনে করেন আসামিপক্ষ প্রভাবশালী বিধায় কৌশলে তদন্তকে প্রলম্বিত করানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। আগামী ১৭ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদনের জন্যে পরবর্তী দিন ধার্য আছে।
উল্লেখ্য, নরপশু আসামি লক্ষণ দাশ (৩০) কর্তৃক পাশবিক নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে শিশু মারজান হক বর্ষাকে। জোরপূর্বক ধর্ষণের সময় রক্তাক্ত সাত বছরের নিষ্পাপ শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এরপর বস্তায় ভরে লাশ গোপন করে ফেলে দেওয়া হয় নর্দমায়। বস্তায় টিসিবির সিলের সূত্র ধরেই লাশ উদ্ধারের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ ওই নরপশুকে পাকড়াও করে।
পুলিশের জেরার মুখে ফুটফুটে বর্ষাকে নিষ্ঠুরতম নির্যাতনে খুনের দায় স্বীকার করেছে ওই মুদি দোকানের কর্মচারী লক্ষণ দাশ (৩০)। আর এর মধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান এলাকায় সংগঠিত চাঞ্চল্যকর এবং নৃশংস শিশু বর্ষা হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়। আত্মস্বীকৃত খুনি-ধর্ষক এ পাষণ্ডের ফাঁসি দাবি করেছেন বর্ষার স্বজন ও স্থানীয়রা। সামান্য একজন দোকান কর্মচারীর এমন ভয়ঙ্কর অপরাধে হতবাক জামালখানের স্থানীয় বাসিন্দারা।
নগরীর ব্যস্ততম একটি এলাকায় একজন শিশুর প্রতি এমন নিষ্ঠুরতা নজিরবিহীন। ঘর থেকে বের হয়েই যদি এমন পাশবিকতার শিকার হতে হয় তা হলে এই নগরীতে কন্যা শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়— এমন প্রশ্নও সবার মুখে মুখে। পুলিশ বলছে- ভয়ঙ্কর অপরাধের পরও লক্ষণ ছিল নির্বিকার-নির্ভয়।
তার মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনাও দেখা যায়নি। ধর্ষণ, খুন আর লাশ গুমের মতো ভয়ানক অপরাধ করার প্রায় তিনদিন পরও সে পালিয়ে যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাত দেড়টায় জামালখান এলাকার শ্যামল স্টোর নামক মুদি দোকানের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির বলেন, লক্ষণ খুনের দায় স্বীকার করেছে। তার দেখানো মতে গোডাউনে ধর্ষণ ও খুনের আলামতও পাওয়া গেছে।
নগরীর কুসুম কুমারি সিটি করপোরেশন স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী মারজানা হক বর্ষা গত সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার সময় জামালখান লিচু বাগানস্থ সিকদার হোটেলের পাশের গলির বাসা থেকে চিপস কিনতে বের হয়। এরপর সে গলির মুখের দোকানে যায়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার পরও বর্ষা দোকান থেকে বাসায় ফিরে না আসায় তার পরিবারের সদস্যরা আশপাশ এলাকাসহ সম্ভাব্য স্থানে ব্যাপক খোঁজাখুঁজি করেন। খোঁজ না পেয়ে পরদিন তার বড় বোন ছালেহা আক্তার রুবী থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
থানার উপ- পরিদর্শক সুজন দাশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। তিনি ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজসহ বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেন। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে জনৈক বেলাল হোসেন জামালখান লিচু বাগান সিকদার হোটেলের পিছনে ড্রেনের উপর বস্তাবন্দি শিশুর লাশ দেখতে পেয়ে থানায় সংবাদ দেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল সম্পন্ন করে লাশ চমেক হাসপাতালে মর্গে পাঠায়। শিশুটির পরিবারের সদস্যরাও লাশ শনাক্ত করেন।
শিশু বর্ষার বাসার পাশেই লাশটি ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বর্ষার মা ঝর্ণা বেগম বাদী হয়ে থানায় এজাহার দায়ের করলে ২৮/১০/২২ইং রাতেই একটি মামলা রেকর্ড করা হয়। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় থানার এসআই মো. নওশের কোরেশীকে।
পুলিশ জানায়, বস্তা কেটে লাশটি বের করার সময় বস্তার গায়ে টিসিবির সিল নজরে আসে। বস্তায় পেঁয়াজের খোসাও ছিল। এই সূত্র ধরে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে টিসিবির সীলযুক্ত বস্তায় মালামাল বিক্রি হয় এমন দোকান ও আশপাশের বিভিন্ন রেস্তোরাঁর গোডাউনে টিসিবির সীলযুক্ত বস্তা খুঁজতে শুরু করে। এক পর্যায়ে শ্যামল স্টোর মুদি দোকানের গোডাউনে একটি খালি টিসিবির সিলযুক্ত বস্তা খুঁজে পাওয়া যায়।
টিসিবির সিলযুক্ত বস্তাকে টার্গেট করে উক্ত দোকানের মালিক ও কোনো কোনো কর্মচারী কাজ করে তাদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ মিলিয়ে দেখা হয়। বস্তা ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় লক্ষণ দাশকে সন্দেহ করা হয়। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
◑ ফখ|তাসু| চখ