চট্টগ্রামে পুরোদস্তুর জমে উঠেনি ঈদ বাজার
চট্টগ্রাম নগরের ঈদ মার্কেট গুলোতে এখনো জমে উঠেনি পুরোদস্তুর বেচাকেনা । ৬ রমজান পেরিয়ে গেলেও থান ও গজ কাপড়ের জন্য নগরের প্রসিদ্ধ টেরিবাজার ছাড়া অন্যান্য শপিং মল গুলোতে দোকানিদের দেখা গেলো এখনো দোকান গোছাতে ব্যস্ত তাঁরা। তবে রমজানের শেষের দিকের ভিড় এড়াতে অনেক ক্রেতা এখনি সেরে ফেলছেন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা।
নগরের বিপনি বিতানে চল্লিশ বছর যাবত ব্যবসা করছেন সাতাকানিয়ার বাসিন্দা মো. আবদুল্লাহ। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, “সাধারণত রমজানের মাঝামাঝি সময়ের পরেই মার্কেটগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। রমজানের প্রথম দিকে বেচাকেনা তেমন জমে ওঠে না। আমাদের মতো দোকানগুলোর জন্য এই সময়টাতে চাপ কিছুটা কম থাকে, কারণ ক্রেতাদের এখনও পুরোপুরি ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়নি। তবে সপ্তাহ খানেক পর থেকে ক্রেতাদের ভিড় বাড়লে বেচাবিক্রি বেড়ে যাবে।”
অন্যদিকে, কিছু ক্রেতা আবার নিজেদের ঈদ কেনাকাটা আগে ভাগেই সেরে ফেলছেন। মো. সালাহউদ্দিন নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘রমজানের শেষের দিকে মার্কেটে তেমন চলাচল থাকে না, ভিড়ও অনেক বেশি হয়ে যায়। তাছাড়া ছুটির সাথে সামঞ্জস্য না হলে ঈদের বন্ধে বাজার করা লাগবে। তাই এখনই কেনাকাটা করে ফেলছি, যাতে শেষ মুহূর্তে বিপদে পড়তে না হয়।‘
জহুর হকার্স মার্কেটে কথা হয় ফারহানা আক্তার নামে এক গৃহিণীর সাথে।তিনি দৈনিক চট্টলার খবরকে বলেন, ‘আগেই কেনাকাটা করে ফেলতে চাই, কারণ শেষের দিকে অনেক বেশি ভিড় হয় এখানে, কোনো কিছু কিনতে হলে অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, সময়ও বেশি লাগবে। তাছাড়া অনেক সময় কাপড়ের সাইজ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কিন্তু প্রথম দিকে কাপড়ের সাইজ নিয়ে তেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয় না, স্টক ও থাকে পর্যাপ্ত তাই পছন্দমত কাপড় কেনা যায়।‘
একই মার্কেটের বিক্রেতাদের কাছে থেকে জানা যায়, আগামী সপ্তাহগুলোতে ঈদ উপলক্ষে পুরুষ মহিলা সহ বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক এবং অন্যান্য সামগ্রী বাজারে ঢুকবে। এ সময়টাতেই মার্কেটগুলো ক্রেতাদের জন্য সাজানো হয়, বিশেষ করে ছোট দোকানগুলোর জন্য উৎসাহজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়।
তবে রমজানের শেষ দিকে এসে সকল দোকানেই ভিড় বেড়ে যাবে, আর তখন বেচাকেনার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তাঁরা।
নাজমুল হাসান নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘ঈদের বাজারে সাধারণত প্রথম সপ্তাহে বিক্রি কম থাকে। এছাড়া মাসের এখনো শুরুর দিক হওয়াতে অনেকে বেতন বোনাস পাননি। তাই হয়ত ভিড় কিছুটা কম।
তবে এখনই কিছু ক্রেতা আসছেন, তারা একটু আগেভাগেই সেরে ফেলছেন তাদের ঈদ শপিং। এতে আমাদের কাজও সহজ হচ্ছে। কারণ শেষের দিকে আমাদেরও চাপ অনেকটা বেড়ে যায় কারণ আমাদের এখানে আসল বিক্রি শুরু হবে রমজানের শেষ সপ্তাহে।‘
অন্যদিকে, ঈদ বাজারে বিক্রি সেভাবে না বাড়লেও কিছু বিক্রেতা ইতিমধ্যেই ঈদের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। সুমন মিয়া, একজন পোশাক বিক্রেতা, বলেন, ‘এখনো প্রথম দিকের বাজার। তবে আমি আশা করি, পরবর্তী সপ্তাহে বাজার ভালো হবে।‘
তবে দেশের চলমান পরিস্থিতে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা, তাদের ভাষ্যমতে এই সময়ে ঈদ কেনাকাটা কিংবা ব্যাংকে লেনদেনের পরিমাণ অনেকাংশে বেড়ে যায়। যার সু্যোগ নিতে ওঁত পেতে থাকে ছিঁচকে চোর কিংবা ছিনতাইকারীরা।
ঈদ কেনাকাটা নিয়ে কথার এক পর্যায়ে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় নিয়াজ হাযারী নামে এক ভুক্তভোগী জানান, রোজার আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। নতুন আত্মীয়, তাই মেয়ের শশুর বাড়িতে উপহার দেওয়ার জন্য রমজান শুরুর আগে কিছু শাড়ি,থ্রি পিচ কিনে বাসায় ফেরার পথে কয়েকজন যুবক এসে আমার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। ব্যাগে কাপড় ছাড়াও নগদ টাকা ও আমার নিজের ব্যবহার করা মোবাইল ফোনও ছিলো। থানায় জানিয়েছি কিন্তু এখনো তাদের ধরা যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে দ্বিতীয়বারের মত কেনাকাটা করতে এলাম।
নিজের সাথে ঘটে যাওয়া দুঃসহ এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আর যেন কেউ নাহয় এই প্রত্যাশা নিয়ে নিয়াজ হাযারী ঈদের মৌসুমকে সামনে রেখে চুরি ছিনতায় প্রতিরোধে প্রশাসনকে আরো কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার তাগিদ দেন।
জেএফআই/চখ