দক্ষিণাঞ্চলে পানি দিতে প্রস্তুত চট্টগ্রাম ওয়াসা
চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প উৎপাদন শুরুর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। প্রকল্পটির ট্রায়াল রান (কমিশনিং) বেশ কয়েকবার সম্পন্ন হয়েছে এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগও দেওয়া হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদন শুরুর। এই প্রকল্প থেকে দৈনিক ৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে, যা চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প ও আবাসিক এলাকার পানি সংকট দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার থেকে দৈনিক ৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করার লক্ষ্য রয়েছে। এই পানি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, কর্ণফুলী, পটিয়া উপজেলা এবং কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল, কাফকো শিল্পাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, যা বেড়ে এখন ১ হাজার ৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকায় পৌঁছেছে।
প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক সংযোগ দেওয়া হবে, যেখানে দৈনিক ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্য রয়েছে। এ ছাড়া ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহককে দৈনিক ২ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পটি চালু হলে শিল্পাঞ্চলে ৮০% এবং আবাসিক এলাকায় ২০% পানি সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পের ট্রায়াল রান চলছে। পানি সরবরাহের জন্য পটিয়া বাইপাস এলাকায় ৫ একর এবং আনোয়ারার দৌলতপুর মৌজায় ২.৯৪ একর জায়গায় দুটি জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১১৩ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হয়েছে। প্রকল্পটি চালু হলে দৈনিক ৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, “প্রকল্পটি চালু হলে শিল্প ও আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহের মাধ্যমে পানি সংকট দূর হবে। আমরা চায়না ইকোনমিক জোনের কাজ শুরুর অপেক্ষায় আছি। এটি প্রকল্পের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করবে।”
২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্পটি তিন বছর পিছিয়ে যায়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রথম সংশোধিত আকারে অনুমোদন পায়। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের ৮২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ১ হাজার ১৫০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা নিজস্ব তহবিল থেকে যোগ করেছে ২০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি চালু হলে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প ও আবাসিক এলাকায় পানি সংকট দূর হবে। এ ছাড়া ১০ লাখ মানুষকে সুপেয় পানির আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, “প্রকল্পটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে কমিশনিং (ট্রায়াল রান) চলছে। এটি চালু হলে দৈনিক ৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন উপজেলার ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহককে পানি সংযোগ দেওয়া হবে। শিল্পাঞ্চলে ৮০ ভাগ এবং আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ২০ ভাগ পানি সরবরাহ করা হবে।”
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যবর্তী ভান্ডালজুড়ি পাহাড়ি এলাকায় ৪১.২৬ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে এই পানি শোধনাগার।
স্থানীয়রা আশা করছেন, প্রকল্পটি চালু হলে তাদের দীর্ঘদিনের পানি সংকট দূর হবে। ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পটি চালু হলে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে পানি সরবরাহের মাধ্যমে পানি সংকট দূর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা আশা করছেন, প্রকল্পটি দ্রুত চালু হলে তাদের দীর্ঘদিনের পানি সংকট দূর হবে।
◑ ফখ|চখ