chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

রমজানে যে কাজগুলো বর্জনীয়

রমজান মাস পবিত্র ও বরকতময় একটি সময়, যখন মুসলিমদের আত্মসংযম, ইবাদত ও নেক আমলের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হয়। এই মাসে কিছু কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা জরুরি, যাতে রোজা সহিহ হয় এবং এর পূর্ণ ফজিলত লাভ করা যায়। এসব কাজগুলো হলো—

১. খাবার ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকা: রোজার মূল শর্ত হলো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও অন্যান্য দৈহিক চাহিদা থেকে বিরত থাকা। ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করা রোজা ভেঙে দেয় এবং কাফফারা আদায় করতে হয়।

২. স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা: রোজার সময় স্বামী-স্ত্রী শারীরিক সম্পর্ক করতে পারেন না। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রোজার সময় সহবাস করে, তবে তার রোজা ভেঙে যাবে এবং কাফফারা দিতে হবে (একাধারে ৬০ দিন রোজা রাখতে হবে বা ৬০ জন গরিবকে খাওয়াতে হবে)। তবে, ইফতারের পর এবং সেহরির আগ পর্যন্ত বৈধ সীমার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।

৩. মিথ্যা কথা, গিবত ও খারাপ আচরণ থেকে বিরত থাকা: রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আত্মসংযম ও নৈতিক উন্নতি। তাই এই মাসে—মিথ্যা বলা, পরনিন্দা বা গিবত করা, কারও প্রতি কটূক্তি বা গালমন্দ করা, ঝগড়া করা।

এগুলো থেকে কঠোরভাবে বেঁচে থাকা উচিত। নবী (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা ও খারাপ কাজ করা বর্জন করে না, তার পানাহার থেকে বিরত থাকা আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।” (বুখারি, হাদিস: ১৯০৩)

৪. অশ্লীলতা ও দৃষ্টির সংযম না করা: রমজানে দৃষ্টির হেফাজত করা জরুরি। টিভি, মোবাইল বা ইন্টারনেটে অনৈতিক ও অশ্লীল কন্টেন্ট দেখা রোজার রুহানিয়াত নষ্ট করে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:

“মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করে।” (সূরা আন-নূর: ৩০)

৫. অনর্থক ও সময় নষ্টকারী কাজে লিপ্ত হওয়া:

রমজান আত্মশুদ্ধির মাস, তাই এই মাসে—অপ্রয়োজনীয় আড্ডা, গেম খেলা, বিনোদনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা, এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত এবং সময়কে কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও ইবাদতে ব্যয় করা উচিত।

৬. হারাম উপার্জন ও সুদ-ঘুষ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা: রমজান শুধু পানাহার ত্যাগের নাম নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধির মাস। তাই—সুদ, ঘুষ, প্রতারণা ও হারাম ব্যবসা মাপে কম দেওয়া বা গ্রাহকের সাথে অসদাচরণ এসব থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।

৭. অহংকার ও আত্মপ্রশংসা থেকে বিরত থাকা: রোজা মানুষের বিনয় ও আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। তাই এই মাসে অহংকার, আত্মপ্রশংসা, বড়ত্বের ভাব ও অন্যকে ছোট করে দেখা উচিত নয়।

৮. নামাজ ও কুরআন থেকে গাফিলতি করা: অনেকেই রোজা রাখলেও নামাজে অবহেলা করেন, যা খুবই গর্হিত কাজ। রোজার সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, তারাবি, কুরআন তিলাওয়াত ও নফল ইবাদত করা জরুরি।

রমজান মাস আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময়। তাই শুধু পানাহার ও দুনিয়াবি চাহিদা থেকে বিরত থাকলেই যথেষ্ট নয়; বরং গুনাহ, খারাপ আচরণ, অন্যের প্রতি অন্যায় এবং গাফিলতি থেকেও বিরত থাকতে হবে। তাহলে রোজা প্রকৃত অর্থে আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হবে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব হবে।

 

 

চখ/মীম

এই বিভাগের আরও খবর