chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামের বাজারে সয়াবিন তেলের ভয়ঙ্কর তেলেসমাতি

প্রতিবছর রমজান এলেই হাতের নাগালের বাইরে চলে যায় খাদ্যপণ্যের দাম। এবছর রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে হলেও বাধ সেধেছে ভোজ্যতেল সয়াবিন। বলতে গেলে বাজার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল একপ্রকার উধাও ।

ভোক্তারা বলছেন, দাম বাড়াতেই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেলের সরবরাহ অনেক কম। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে,খুচরা বাজারে হাহাকার ভোজ্যতেলের জন্য। দোকানে দোকানে ঘুরেও মিলছে না এক লিটার, দুই লিটার সয়াবিন তেল। পাঁচ লিটার কয়েকটি দোকানে পাওয়া গেলেও তা আদৌ সয়াবিন নয়। মিলছে পামওয়েল কিংবা সানফ্লাওয়ার ওয়েল।

সোমবার (৩ মার্চ) দুপুরে নগরীর বৃহত্তম পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। পরিদর্শনে গিয়ে তারা খাতুনগঞ্জ বাজারে বোতলের সয়াবিন তেলের দেখা পাননি।

চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করেছিলেন, বাজারে বোতলের সয়াবিন তেল উধাও হওয়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের হাত আছে। ব্যবসায়ীরা তেল সরিয়ে রেখেছেন।

এর পর তেলের উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ীদের মঙ্গলবার বৈঠকে ডাকেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা শেষে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দোকানগুলোতে আমরা একটি অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছিলাম। দোকান থেকে ভোজ্যতেল উধাও হয়ে গেছে। এখানে যারা আমদানিকারক, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী ও ভোক্তা অধিকারের প্রতিনিধি আছেন, সবার সম্মতিক্রমে আমরা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। এখানে আমদানিকারক সিটি গ্রুপ, টিকে গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিনিধিরাও আছেন। এ সিদ্ধান্ত কিন্তু সবার জন্য বলবৎ থাকবে।’

‘আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে তেল বিক্রি করবে ১৫৩ টাকায়। যারা খাতুগঞ্জের ডিলার তারা বিক্রি করবেন ১৫৫ টাকায়। আর বাইরে যেটা বাজারে খুচরায় বিক্রি হবে সেটা সর্ব্বোচ্চ ১৬০ টাকা। এর বাইরে যদি বেশি দামে কেউ বিক্রি করে তাহলে সর্ব্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজারে আমাদের টিম থাকবে। সাধারণ মানুষকে সুবিধা দেয়ার জন্য যেটা যেটা করা দরকার সেটা অবশ্যই আমাদের করতে হবে।’

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘খোলা বাজারে সয়াবিন তেল সর্ব্বোচ্চ ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে। তবে কেউ চাইলে এটার নিচেও বিক্রি করতে পারেন। এটা রমজান মাস পর্যন্ত চলবে। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। এ সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো ব্যবসায়ী নিজের ইচ্ছে মতো দামে তেল বিক্রি করলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এখানে টিকে গ্রুপ আছে। তারা অনেকটা ছাড় দিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। তারা ১৫৩ টাকায় পাইকারি বাজারে তেল ছাড়বেন। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা ১৫৫ টাকায় খুচরা ব্যবস্যয়ীদের কাছে বিক্রি করবেন। যেটা ভোক্তার কাছে ১৬০ টাকায় বিক্রি করবেন তারা।’

এদিকে ভোক্তা অধিদফতর বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে উৎপাদিত ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল যার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বা এমআরপি ৮১৮ টাকা। কিন্তু তদারকিতে দেখা গেছে, কিছু ব্যবসায়ী তা বিক্রি করছেন ৮৫০ থেকে ৮৫২ টাকায়। আবার অনেকে দামের লেভেল মুছে দিয়েও বিক্রি করছেন। তাছাড়া কিছু ব্যবসায়ী তেল লুকিয়ে রেখে গোপনে বেশি দরে বিক্রি করছেন। এসব অপরাধে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী বাজারের সম্প্রতি তিনটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।

 

কাজীর দেউরি বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ‘রমজানে তেলের চাহিদা বেশি। কিন্তু আমরা চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছি না। গতকাল অনেক অনুরোধ করে এক কার্টুন তেল পেয়েছি তা নিমিষেই শেষ।’ সুমন নামের আরেক ব্যবসায়ী জানান, সরবরাহ ঘাটতি থাকায় ব্যবসায়ীরা গ্রাহকের তোপের মুখে পড়ছেন। কোম্পানিগুলো আমাদেরকে তেল না দিলে আমরা কীভাবে দেব।

বেসরকারি চাকরিজীবী আবু বকর রমজানের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে আসেন চকবাজারে। তিনি বলেন, ‘অন্য বাজারের তুলনায় চকবাজারে ৫-১০ টাকা কমে জিনিসপত্র পাওয়া যায়। এজন্য এখানে এসেছি। সবজি, মাছ মোটামুটি সহনীয় দামে পেলেও লেবুসহ কয়েকটি পণ্যে অস্বাভাবিক
দাম হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, মুদি পণ্যের মধ্যে কয়েক দোকান ঘুরেও সয়াবিন পেলাম না।

ভোক্তাদের অভিযোগ, রমজানকে কেন্দ্র করে দাম বাড়ানোর জন্যই ব্যবসায়ীরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে এ সংকট তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

এদিকে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর বলছে, সয়াবিনের ঘাটতি রয়েছে। তবে রমজান শুরু হলেও সরকারি এই সংস্থাটি বাজারে সয়াবিন ঘাটতির কারণ নিরুপণ করতে পারেনি।

ফখ|চখ

 

 

এই বিভাগের আরও খবর