চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে র্যাম্প নির্মাণে জায়গার সংকট
চট্টগ্রাম নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের র্যাম্প নির্মাণ কাজ জায়গার সংকট ও প্রশাসনিক জটিলতায় বিলম্বিত হচ্ছে। মূল নকশা থেকে ৫টি র্যাম্প বাদ দেওয়া সত্ত্বেও বাকি র্যাম্পগুলোর নির্মাণ কাজ সময়মতো শুরু করা যাচ্ছে না। রেলওয়ে ও কর্ণফুলী ইপিজেড (সিইপিজেড) কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জায়গা না পাওয়ায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ র্যাম্প কাজ আটকে আছে। এ ছাড়া উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় পুলিশের সহায়তা না পাওয়ায় এবং সিডিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বদলি হওয়ায় প্রকল্পের কাজ আরও ধীরগতির হয়ে পড়েছে।
সূত্রমতে, পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে নগরীর যানজট নিরসন ও যান চলাচলের গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই এক্সপ্রেসওয়ে লালখান বাজারে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত হবে। এতে পতেঙ্গা থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত ২২ কিলোমিটারেরও বেশি দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে শহরের অধিকাংশ যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
প্রকল্পের শুরুতে নগরীর ৮টি এলাকায় মোট ১৪টি র্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তি ও জায়গার সংকটের কারণে টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, কেইপিজেড ও সিইপিজেড এলাকায় ৫টি র্যাম্প নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। বাদ দেওয়া র্যাম্পগুলোর মধ্যে রয়েছে টাইগারপাসের পলোগ্রাউন্ড দিকের র্যাম্প, আগ্রাবাদের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সামনের র্যাম্প, কেইপিজেডে নামার র্যাম্প এবং আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের দুটি র্যাম্প।
তবে বাদ দেওয়া র্যাম্পগুলোর জন্য মূল অবকাঠামোতে ভবিষ্যতে নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়েছে। সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে ৫টি র্যাম্প নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে নগরবাসীর চাহিদা অনুযায়ী এসব র্যাম্প নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়েছে।”
আগ্রাবাদ এলাকায় ডেবারপাড়ে একটি র্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা দিয়ে আগ্রাবাদ থেকে ফ্লাইওভারে উঠে পতেঙ্গা যাওয়া যাবে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জায়গা না পাওয়ায় এই র্যাম্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। রেলওয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, “জায়গা ছাড়ার সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হবে। আমরা চিঠি পাঠিয়েছি, সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।”
একইভাবে, সিইপিজেড এলাকায় একটি র্যাম্প নির্মাণের জন্য জায়গার দখল নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখানে ২৫টি ভবন উচ্ছেদের প্রয়োজন হলেও পুলিশের সহায়তা না পাওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া সিডিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বদলি হওয়ায় উচ্ছেদ প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হচ্ছে।
নিমতলা এলাকায় দুটি র্যাম্পের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ঈদের আগেই এই র্যাম্প দুটি চালু করা হবে। এ ছাড়া ফকিরহাটে নামার র্যাম্পটি এপ্রিলের মধ্যে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। আমবাগানের র্যাম্পটি ইতোমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
সিইপিজেড এলাকায় একটি র্যাম্প আগামী জুনের মধ্যে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে জায়গার দখল না পাওয়ায় এই র্যাম্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, “জায়গার সমস্যা সমাধান হলে দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করা হবে। বর্তমানে ৯টি র্যাম্প চালু হলে এক্সপ্রেসওয়ের উপযোগিতা বহুগুণে বেড়ে যাবে।”
গত ২৮ আগস্ট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বর্তমানে এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে দৈনিক গড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। টোল আদায়ের কার্যক্রম গত ৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ” র্যাম্পগুলো চালু হলে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ সহজেই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে যানজট কমবে এবং যান চলাচলের গতিশীলতা বাড়বে।”
◑ ফখ|মআ|চখ