chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সিএমপির বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার উল্লেখযোগ্য, অস্ত্র উদ্ধার কম

৩১ দিনে গড়ালো চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান। জনজীবনে স্থিতিশীলতা, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার উপর নির্বিচারে গুলি-বর্ষণ, হামলা ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে গেল ৩১ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে ব্যাপক আকারে ধরপাকর শুরু করে সিএমপি। যে অভিযানে প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৯০৩ জন সন্ত্রাসী, ডাকাত, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী। তবে এসময় অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে খুব কম সংখ্যক।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নগরের বেশ কয়েকটি এলাকায় ভোর সকালে ঝটিকা মিছিল, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের লিফলেট বিতরণ, দেয়ালে দেয়ালে উস্কানিমূলক বার্তা লিখনসহ নানা ধরণের অপতৎপরতামূলক কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়।

এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে গেল ৩১ জানুয়ারি নগরের চেরাগী পাহাড়ের জামালখান এলাকায় শিক্ষার্থীদের এক অনশন কার্যক্রমে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের উদ্দেশ্যে এক হুঁশিয়ারমূলক বক্তব্যে বলেন, ‘নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন সকাল ৬টায় দেড় মিনিটের মিছিল করেছে। তারা প্রকাশ্যে এভাবে মিছিল করতে পারে না। আশা করছি ভবিষ্যতে এ ধরনের মিছিল তারা করতে পারবে না।‘

তাঁর বক্তব্যের পরপর এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঠেকাতে রণপ্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামে সিএমপি।সাফল্যও আসে দৃশ্যমান, তবে চলতি মাসের ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক দেশব্যাপী শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্টের সাথে সিএমপির এই বিশেষ অভিযানকে একীভূত করা হলে কার্যক্রম আরো জোরদার হয় বলে জানান সিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাহমুদা বেগম।

দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ অভিযানে অধিকাংশের গ্রেপ্তারের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার উপর সরাসরি গুলি কিংবা হামলা চালানোর মত ঘটনা। অপরাধীদের শনাক্ত করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও কিংবা সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে।

তবে গণহারে গ্রেপ্তার কার্যক্রম চললেও দৃশ্যমানভাবে উদ্ধার হচ্ছে না জুলাই আন্দোলন দমনে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনার পলায়ন পরবর্তী নগরীর বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদসমূহ।

এ বিষয়ে সিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাহমুদা বেগম বলেন, ‘ডেভিল হান্ট মানেই শয়তান শিকার’ অর্থাৎ সমাজে স্থিতিশিলতা ও শৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আমাদের এই অভিযান। বিশেষ এ অভিযানে মূলত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা চালানো নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ছাড়াও সমাজে স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও তাদের মদদ-দাতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

তবে ৫ আগস্টে থানা লুট ও আন্দোলনে ব্যাপক মাত্রায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্যনীয় হলেও গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের তুলনায় অস্ত্র উদ্ধারের পরিমাণ নগণ্য কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীরা নানা ধরণের অপতৎপরতা চালাতে এখনো সচেষ্ট। তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঠেকানোর পাশাপাশি অস্ত্রগুলো উদ্ধারে যথাসম্ভব চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছি।

তাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ার পিছনে যে কারণগুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ছাত্রজনতাদের উপর চালানো আক্রমনে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোর অধিকাংশ মূলত ভাড়া করা । ৫ আগস্টের পরপর যেসব আগ্নেয়াস্ত্র অন্যত্র হস্তান্তর করে থাকতে পারে অপরাধীরা।তাই এসব অস্ত্র উদ্ধারে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।তবে আমাদের চলমান বিভিন্ন অভিযানে ডাকাতি মামলাসহ সন্ত্রাস বিরোধী মামলায় দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এর সংখ্যা কিছুটা কম হলেও অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে খুব দ্রুত থানা থেকে লুটকৃত ও অবৈধ অস্ত্রসমূহ উদ্ধার হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

তবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আসামী আইনের আওতায় এলেও গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের দৃশ্যমান রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা জানান, রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে না ব্যাপারটি আসলে এমন নয়। আমরা প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ জনকে বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাসী বিরোধী আইন ও পেনাল কোড আইনে এক বা একাধিক মামলা থাকায় গ্রেপ্তার করছি, এর মধ্যে যাদের রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে তাদের রিমান্ড মঞ্জুরে আমরা বিজ্ঞ আদালতে সুপারিশ করছি। তবে সুপারিশের অনুপাতে রিমান্ড মঞ্জুর হচ্ছে কিছুটা কম। এ বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত ভালো বলতে পারবে।

আদালত অপরাধীদের রিমান্ড মঞ্জুর করতে ইতস্তত বোধ করছে কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মফিজুল হক ভূইয়া বলেন, রিমান্ড মঞ্জুর হবে কিনা তা পুরোটাই নির্ভর করে মামলার ধরণের উপর। উপযুক্ত তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে কেন রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে তা আদালতকে সঠিকভাবে বোঝাতে পারলে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করতে বাধ্য।

যেসকল মামলায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সেসব মামলার ধারা দুর্বল কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে পাল্টা প্রশ্ন করে বিজ্ঞ এই আইনজীবী বলেন, অস্ত্র ব্যবহার কিংবা বহনের কথা যদি মামলার এজাহারে উল্লেখই না থাকে তাহলে কীসের ভিত্তিতে আদালত আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করবে? অস্ত্র আইনে মামলা না হলে অস্ত্র উদ্ধারে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কোনো নিয়ম নেই বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গেল ৩১ জানুয়ারি হতে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয় ১৫ জনকে, ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৮ জন, ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৮ জন, ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৬ জন, ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৩ জন, ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪০ জন, ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৬ জন, ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০ জন, ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৯ জন, ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৬ জন, ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩০ জন, ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৮ জন, ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩০ জন, ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪০ জন, ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৯ জন, ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৩ জন, ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৯ জন, ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩২ জন, ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৩ জন, ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৯ জন, ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫ জন, ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫ জন, ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২১ জন, ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৯ জন, ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৪ জন, ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৪ জন, ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪২ জন, ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৫ জন, ১ মার্চ পর্যন্ত ৩৫ জন এবং ২ মার্চ পর্যন্ত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জেএফআই/চখ

এই বিভাগের আরও খবর