চট্টগ্রামে রেলের জমিতে সাবেক কর্মকর্তার জমিদারী!
চট্টগ্রামের কুমিরা রেলওয়ের ষ্টেশন কলোনির জমি দখল করে জমিদারি ব্যবসা শুরু করেছে রেলের সাবেক কর্মকর্তা এটিএম নাসির উদ্দীন। রেলের ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতি অমান্য করে তিনি এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
◑ রেলওয়ের জমি ও কোয়ার্টারসহ একাধিক স্থাপনা দখল করে বাসাবাড়ির নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে জমিদার বনে গেছেন তিনি।
জানা গেছে, কুমিরা রেলওয়ে ষ্টেশনের উত্তর পাশে কর্ণফুলী ষ্টীল মিলের সংলগ্ন রেলের ৫০ শতক জমি কৃষিলিজ নিয়ে নির্মাণ করেছেন একতলা বিল্ডিং। রেলওয়ে জায়গায় ঘর ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করলেও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পাচ্ছে না রেলওয়ে।
✔ তিনি নিজের জন্য একতালা বিল্ডিং করে বসবাস করছেন আবার ভাড়া দেওয়ার জন্য ৮০-৯০টি বাসা গড়ে তুলেছেন।
রেলের জমিতে এক তালা বিল্ডিং ভাড়া বাসা ভাড়া দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে, নাসির উদ্দীন বলেন, আমি রেল থেকে জমি কৃষি লিজ নিয়ে বাসা ভাড়া দিয়েছি। এই জমি দীর্ঘদিন খালি পড়েছিল। অন্যরা বাসাবাড়ি ও দোকান দিয়েছে, তাদের দেখে আমিও দোকান নির্মাণ করেছি। রেলওয়ের যখন প্রয়োজন হবে তখন ছেড়ে দেবো।’
কৃষি লিজ নিয়ে দোকান করার কোন নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু আমি কেন, শত-শত লোক লেলের জমি অন্যায়ভাবে জবর দখল করে ভোগ করছে, আমিও করছি।
রেলওয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় বলা হয়েছে, যে উদ্দেশ্যে জমি ইজারা দেয়া হয়েছে সেই উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবেনা। যদি কেউ করে তাহলে তা লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করার শামিল। আর এই অপরাধে বিনা নোটিশে ইজারা বা লাইসেন্স বাতিল করার বিধান আছে। তবে এই অপরাধে কোন লাইসেন এখনো বাতিল হয়েছে বলে কোন নজির নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কুমিরা রেলওয়ে ষ্টেশনে রেলের অধিকাংশ জমি দখল করেছেন অনেকে। বছরের পর বছর রেলের এসব জমি বেদখল হয়ে থাকায় সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। সেইসঙ্গে রেললাইনের দুই পাশে শত শত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় মাঝেমধ্যে ঘটে দুর্ঘটনা।
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিয়েও উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এজন্য দিন দিন রেলের জমি দখল বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এই কলোনিতে ৪০ টার অধিক রেলের কোয়ার্টার ছিল, অনেক এলোডিও ছিল একসময়। এখন অযত্ন অবহেলায় এগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখন এখনে আর রেলের কেউ থাকেনা, যে যেভাবে পারছে সেভাবেই দখল করে ভাড়া বাণিজ্য চালাচ্ছে। গতবছর একবার উচ্ছেদ অভিযান চালালেও ভূমিদস্যুদের বাধার মুখে পুরোপুরি উচ্ছেদ করতে পারেনি। আংশিক উচ্ছেদ করে ফিরে আসে অভিযানিক দল। কিছুদিন যেতে না যেতেই তা আবারো দখলে নেয় ভূমিদস্যুরা।
জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পদ লুটপাটে খাওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তাদের নিয়ন্ত্রণের অভিনব কৌশলগুলোও পুরো রেলওয়েকে জিম্মি করে রেখেছেন। এই শক্তিশালী সিন্ডিকেটের একটি পরিচালিত হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলকে কেন্দ্র করে। গুটি কয়েক ব্যবসায়ী নামধারী ভূমিদস্যুর নিয়ন্ত্রণে পূর্বাঞ্চলের ভূমি ও বানিজ্যিক ইজারা কার্যক্রম। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক জায়গা ও সর্বোচ্চ রাজস্বের জোগান দেওয়া প্রতিটি খাত নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এই সিন্ডিকেটকে পর্দার আড়ালে রেখে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দিয়ে মাফিয়া-টাইপ একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা অসাধু কর্মকর্তারা।অসাধু কর্মকর্তারা যোগসাজশে সিন্ডিকেট তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় প্রতিটি ভূমি ও বানিজ্যিক ইজারা কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে দখলের বিষয়টি স্বীকার করে, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রামের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইও) দীপংকর তঞ্চ্যঙ্গা বলেন, আমরা সমস্ত অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছি। এর আগেও আমরা কুমিরা এলাকায় অভিযান চালিয়েছি, সেখানে ভূমিদস্যু চক্র আমাদের ওপর হামলা করেছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি আরো বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, আরএনবি ও আনসার সদস্যদের নিয়ে আবারো অভিযান চালানোর। দখলদার যতই ক্ষমতাবান হোকনা কেন তারা আইনের চেয়ে শক্তিশালী নয়। রেলের জমি ছাড়তেই হবে তাদের।
◑ ফখ|চখ