chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে বইমেলায় এসে ঘুরে যায় মানুষ!

‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবং মহান মাতৃভাষা দিবসের স্মরণে চট্টগ্রামে চলছে অমর একুশে বইমেলা

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলার প্রবেশদ্বারে চোখে পড়ছে এক নতুন বাংলাদেশের চিত্র। প্রবেশফটকের দুই প্রান্তে রাখা হয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ এবং ওয়াসিম আকরামের ছবি। এবার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বইমেলা হচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পৃষ্ঠপোষকতায় গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) শুরু হয় অমর একুশে বইমেলা।
মেলায় মানুষের আনাগোনা বেশি থাকলেও বই বিক্রি কম বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সমাগমও বেড়ে যায়।

বুধবার বিকাল ৪টায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যার আগমুহূর্তে ভীড় বড়ছে মেলায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে বইয়ের মলাট উল্টে কিংবা সেলফি তুলেই মেলা প্রাঙ্গন ত্যাগ করেছেন বেশিরভাগ দর্শনার্থী। অথচ, গত বছরও চট্টগ্রাম বইমেলায় প্রায় ৫ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল বলে জানা যায়।
এক বিক্রেতা জানান, ‘মানুষ এসে বই দেখেন কিন্তু কিনেন কম। গত বছর আমরা চট্টগ্রামের সিআরবি বইমেলায় একটি স্টলে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার বই বিক্রি করেছি সেখানে এ বছর এক লাখ টাকার কাছাকাছি বই বিক্রি হয়েছে।’

এছাড়া মেলায় কিছু সংখ্যক পাঠকের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের পছন্দের পাঠকের বই ছাড়াও বাজারে আসা নতুন সব বই খুঁজে নিচ্ছেন।

ছবি: এম ফয়সাল এলাহী

পূর্বা প্রকাশনের এক বই বিক্রেতা জানান, ‘শুক্রবার এবং শনিবার মানুষের সমাগম বেশি হয়। আমাদের দোকানে ছোটদের বেশকিছু নতুন বই এসেছে। বাচ্চারা ভূতের গল্পের বই বেশি কিনছেন।’

বই পড়া নিয়ে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ দিন দিন কমছে কেন? এব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মো. মোর্শেদুল ইসলাম  জানান, ‘ বর্তমান প্রজন্মকে বলা হচ্ছে ডিজিটাল নেটিভ। তারা সবকিছু এখন ডিজিটালি করতে চায়, যেমন: নিউজ পড়া, বই পড়া ইত্যাদি। এজন্য তাদের মধ্যে ছাপানো বই পড়ার আগ্রহ অনেক কমে গেছে। বর্তমান প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় করছে, তাই তারা বই মেলায় গেলেও বই কেনার আগ্রহ সেই অর্থে নেই। তারা বই মেলাতে বন্ধুদের সাথে দেখা করা, বেড়াতে যাওয়া, ছবি তোলা এসবে আগ্রহ বেশি দেখায়।

তাছাড়া, আগের প্রজন্ম অনেক বড় বড় উপন্যাস পড়তো , এখন সেই চিত্র খুবই বিরল। বর্তমান প্রজন্ম ছোটখাটো কোন বিষয় নিয়ে পড়লেও বেশিক্ষণ পড়েন না। সব মিলিয়ে একটা শ্রেণি থেকে যাবে যাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ কখনো কমবে না, তারা বই কিনবেন, বই পড়বেন। বইয়ের চাহিদা একেবারে চলে যাবে তা না। বইও থাকবে, সাথে নতুন প্রজন্ম তাদের আগ্রহের বিষয়গুলো অনলাইনে পড়বে।’

এবার মেলায় ১৪০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের স্টল ৭৪টি ও ঢাকার স্টল ৪৪টি। এসব স্টল গুলোর মধ্যে রচনা প্রকাশ, বাতিঘর, বিদ্যানন্দ, ঝিলমিল,অক্ষরবৃত্ত, শৈলি প্রকাশন, কালধারা প্রকাশনী, দাড়িকমা প্রকাশনী, কিডস পাবলিকেশন, রাদিয়া প্রকাশন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, নন্দন বইঘর,গল্পকার, রানা প্রকাশনী, অক্ষরবৃত্ত, পূর্বা প্রকাশন, বই বাজার, অনন্যা, সত্যায়ন,মুদ্রণশিল্পসহ আরও কয়েকটি স্টলে কিছুটা ভীড় দেখা গেছে।

মেলায় আসা জনপ্রিয় লেখক ও কলামিস্ট আফছার উদ্দিন লিটন দৈনিক চট্টলার খবরকে বলেন, ‘ বর্তমানে যুব সমাজ বিশাল একটা সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পাড় করছে। যার ফলে বইয়ের প্রতি তাদের আকর্ষণটা দিন দিন কমে আসছে। আমাদের সকলের উচিত বেশি বেশি বই পড়া। বই পড়ার মাধ্যমে সৃষ্টিশীল মননে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেড়ে ওঠবে।’

তাঁর লেখা ‘দুদক নিয়ে জনগণের ভাবনা’ বই নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমার দীর্ঘদিনের আলোচনা- সমালোচনামূলক মৌলিক একটা বই। এটিতে আমি ২০০৯ সালের শুরু থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ে দেশের বিভিন্ন দূর্নীতি, অনিয়ম, সামাজিক অসংগতিসহ এধরণের নানা বিষয় উল্লেখ করেছি। এই বইটি পড়লে পাঠকরা দুদকের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অনিয়ম নিয়ে ভালোভাবে ধারণা পাবে।’

মেলাপ্রাঙ্গণে বইয়ের সমারোহের পাশাপাশি মুখরোচক খাবারের কিছু অস্থায়ী দোকান বসেছে, যেখানে দর্শনার্থীরা ফুচকা, চটপটি, বার্গারসহ নানা রকম খাবারের স্বাদ নিচ্ছেন।
এছাড়াও মেলায় শিশু কর্নারে বিভিন্ন রাইড এবং মৃৎশিল্প সামগ্রীর স্টল ছিল জমজমাট।
আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে।
চখ/ককন

এই বিভাগের আরও খবর