chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

পয়ঃবর্জ্য থেকে রক্ষা পাবে কর্ণফুলী ও হালদা

চট্টগ্রাম ওয়াসা আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প

দেশে এই প্রথম শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও নগরীর সকল নাগরিককে আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় আনতে কাজ শুরু চট্টগ্রাম ওয়াসা। ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন (১ম পর্যায়)’ শীর্ষক চার বছরের এ প্রকল্প গত কয়েক মাস পূর্বে বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকারের এই সংস্থাটি। এতে ব্যয় হবে ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ওয়াসার পানি সরবরাহ অনেকটা সন্তোষজনক। তবে স্যানিটেশন অবকাঠামো অবস্থার নাজুক হাল। চট্টগ্রাম মহানগরীতে বসবাসকারী ৩২লক্ষ জনগোষ্ঠীর পয়ঃনিষ্কাশনে কোন ব্যবস্থা বিদ্যমান না থাকায় শহরবাসীর সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য গিয়ে পড়ছে সুপেয় পানির উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদী। আর এতে এই দুই নদীর মিঠা পানি প্রতিনিয়ত দুষণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য মারাত্বক হুমকীর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুপেয় পানির উৎস এদুটি নদীকে পয়ঃবর্জ্য নিঃসরণ জনিত দুষণ (যা সার্বিক নদী দূষনের প্রায় ১০-২০শতাংশ) হতে রক্ষা করা জরুরী। চট্টগ্রাম মহানগরীর কোন অংশই প্রকৃতপক্ষে কোন প্রকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত নয়। ফলে অধিকাংশ জনসংখ্যা প্রতীকস্বরূপ সেপটিক ট্যাংক ও পোর-ফ্লাশ স্যানিটেশন ব্যবস্থা (অন-সাইট) ব্যবহার করে। তাছাড়া মহানগরীতে কোন পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় গৃহস্থালী ও শিল্প বর্জ্য ভূ-উপরিস্থ পানিতে প্রবেশ করে যা সহনীয় পরিবেশের জন্য উদ্বেগের কারণ।

এছাড়াও প্রতি বর্ষাকালে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে জলমগ্ন হয়ে থাকে মহানগরীর অধিকাংশ এলাকা। ওই সময় নগরীর অধিকাংশ জলাধার এবং সেপটিক ট্যাংকও জলমগ্ন হয়ে থাকে। এর ফলে সেপটিক ট্যাংকের পয়ঃবর্জ্য উন্মোক্ত পরিবেশে ছড়িয়ে পরায় ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিসসহ নানাবিধ রোগব্যধিতে আক্রান্ত হন নগরবাসী।

চট্টগ্রাম ওয়াসার দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং শহরের সকল নাগরিককে আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পে বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। যদিও পুরো শহরে পরিকল্পিত স্যানিটেশন ব্যবস্থায় আনতে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যানে আগামী ৪০ বছরের মধ্যে ওয়েস্ট ওয়াটার সংগ্রহ ও পরিশোধন অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সুপারিশ রয়েছে।

ওয়াসার সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে ডলার মূল্য অুনসারে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। প্রতিনিয়ত ডলার মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে যা বেড়ে এখন ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেন, মাস্টার প্ল্যানে চট্টগ্রাম মহানগরীকে মোট ছয়টি কেচমেন্টে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি কেচমেন্টের জন্য ১টি পয়ঃশোধনাগার (এসটিপি) নির্মাণের সুপারিশ রয়েছে। এছাড়াও দুটি ফিকেল স্লাজ শোধনাগার নির্মাণের সুপারিশ রয়েছে।

ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার ১০০% পরিবেশ বান্ধব স্যানিটেশন ব্যবস্থা উদ্যোগের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (১ম পর্যায়)” শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সুফল হিসেবে প্রায় ২০ লক্ষ জনগনকে পয়ঃব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্মকর্তারা বলেন, স্যানিটেশন ফ্যাসিলিটিজ নির্মাণ করার মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগরবাসীর জন্য পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সূচনা করা, এর মাধ্যমে প্রায় ২০ লক্ষ নাগরিক প্রচলিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনা, পরিবেশের উন্নতির জন্য সোক-ওয়েল ব্যবহারের উপর নির্ভরশীলতা কমানো, মহানগরীর অভ্যন্তর এবং চারপাশের সংশ্লিষ্ট এলাকায় উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ পয়ঃপরিশোধন করা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দৈনিক ১০ কোটি লিটার ক্ষমতার পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ, দৈনিক ৩০০ ঘনমিটার ক্ষমতার ফিকেল স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ, বিভিন্ন ব্যাসের (২১০০মি.মি. হতে ১১৫ মি.মি.) ট্রাঙ্ক মেইন ও কালেকশন পয়ঃ পাইপ লাইন স্থাপন এবং ফ্যাকল স্লাজ ম্যানেজমেন্ট যন্ত্রপাতি ক্রয় করাই হচ্ছে প্রকল্পের প্রধান কাজ।

এই প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহরস্থ চট্টগ্রাম ওয়াসার ভূমিতে একটি পয়ঃশোধনাগার এবং একটি ফ্যাকল স্লাজ শোধনাগার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বাসা-বাড়ীর সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য পয়ঃপাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিশোধনে পয়ঃশোধনাগারে প্রেরণের লক্ষ্যে সর্বনিন্ম ৩ মিটার হতে সর্বোচ্চ ১৫ মিটার গভীরতায় ২০০ কি.মি. পয়ঃপাইপ লাইন স্থাপন করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি বাস্তায়ন হলে যেমন সুপেয় পানির উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদীকে পয়ঃবর্জ্য নিঃসরণ জনিত দুষণ রোধ করা সম্ভব হবে, তেমনি নগরবাসী পাবে শতভাগ স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এতে নগরবাসী যেমন বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে রক্ষা পাবেন, তেমিন পরিবেশের ভারসাম্য কিছুটা হলেও রক্ষা হবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা লিখিত প্রশ্নের জবাবে জানান, অনুমোদিত ডিপিপির অনুশাসন অনুযায়ী ডিজাইন চূড়ান্ত করে সিসিজিপির অনুমোদনক্রমে প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, অনুমোদিত ডিপিপির সংস্থান অনুযায়ী ৩টি প্যাকেজে প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একটি প্যাকেজে পয়োশোধনাগার, ফিকেল স্লাজ শোধনাগার ও পয়ো পাইপলাইন নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত আছে এবং অপর দুটি প্যাকেজে পয়ো পাইপলাইন নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত আছে।

◑ ফখ|চখ

এই বিভাগের আরও খবর