chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে রোজার আগে অনলাইনে ঈদের বাজার সরগরম

ঈদ মানে নতুন জামা, জুতো ও প্রাসাধনী কেনার মওসুম। গত কয়েকবছর ধরে চট্টগ্রামের লোকজন মার্কেটের ঝামেলা এড়াতে অনেকে অনলাইনে কেনাকাটা সারছেন। ঘরে বসে পছন্দের কাপড় ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অনলাইনে অর্ডার দিলে পেয়ে যাচ্ছে খুব সহজে।

নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা ও প্রযুক্তিগত সুযোগ–সুবিধা সহজলভ্য হয়ে ওঠায় অনেকেই এখন অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। আবার বাজারের অব্যবস্থাপনা, তীব্র যানজট এবং দেশব্যাপী অস্বাভাবিক গরম পড়াসহ নানা কারণেও অনলাইনে কেনাকাটা করার দিকে মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। এ কারনেই রোজার আগেই ক্রেতারা অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। পোশাক–পরিচ্ছদ, জুতা, জুয়েলারিসহ সেমাই–চিনির মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলোই বেশি কিনেছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদের আগে এসে অনলাইনে ক্রয়াদেশ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পোশাকসামগ্রীতে। বাড়তি ক্রয়াদেশের প্রায় ৮০ শতাংশই হলো পোশাকে। এ ছাড়া ঈদের আগে গেজেট আইটেম বা নিত্যব্যবহার্য ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্রয়াদেশও বেশ বেড়েছে।

আগ্রাবাদের এক বাসিন্দা ফরহাদ বলেন, ‘ঈদ আসার আগেই অনলাইন থেকে পাঞ্জাবি কিনেছি। ঈদে সব কিছুর দাম হয়ে যায় আবার শপিং মলে হয় অনেক তাই শপিং মলে গিয়ে কেনাকাটা করার চেয়ে এটাকেই সুবিধাজনক মনে হয়।

বাকলিয়ার এক বাসিন্দা অনামিকা জাহান বলেন, রোজায় টেইলার্সে অনেক তাড়াহুড়ো থাকে যার কারনে কোনো না কোনো  ভোগান্তিতে পড়তে হয়। মূলত এই কারনেই রোজার আগে অনলাইনে থ্রি-পিস কিনে সেলাইতে দিয়েছি। রেডিমেড থ্রি-পিস, কো-র্ডস নিয়ে রেখেছি।

চট্টগ্রামের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা দিপা বেগম চট্টলার খবরকে বলেন, বুটিক হাউজ নামের একটি অনলাইন শপ থেকে নিজের জন্য ৩টি কাপড় ও আত্মীয় স্বজনদের জন্য গিফটের ১৩ টি জামা কিনেছি। অনলাইনে অর্ডার দেওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে চকবাজারের বাসায় হাজির বিক্রয় কর্মীরা।

চট্টগ্রাম নগরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিউলি বেগম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তিনি। দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে একটির বয়স মাত্র সাত মাস, অন্যটির চার বছর। ঈদসহ যেকোনো কেনাকাটা অনলাইনে করতে পছন্দ করেন তিনি। এবার ঈদেও বেশির ভাগ জামাকাপড় অনলাইন থেকে কিনবেন বলে জানান শিউলি বেগম। তিনি বলেন, সন্তান কোলে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করা সম্ভব নয়। এ কারণে অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের ও সন্তানদের জন্য জামাকাপড় কিনছেন।

শিউলি বেগমের মতে, অনলাইনে কেনাকাটা এখন অনেক সহজ। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান পণ্য হাতে পেয়ে টাকা পরিশোধের সুযোগ দেয়। সে ক্ষেত্রে পণ্য পছন্দ না হলে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকে। তা ছাড়া নিজের সাধ্যের মধ্যে দর-কষাকষি ছাড়াই পণ্য কেনা যায়। সব মিলিয়ে অনলাইন কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি।

অনলাইনে পণ্য বিক্রি করে, এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন কেনাকাটা। ঈদ সামনে রেখে কেনাকাটা আরও সরগরম হয়েছে।

সময় বাঁচাতে ও বিপণিবিতানের ভিড় এড়াতে অনলাইনে পছন্দের পোশাক কিনতে মুঠোফোনে পণ্য দেখছেন অনেকে। অনলাইনে কেনাকাটায় স্বচ্ছন্দবোধ করেন বলে জানালেন  মাদারবাড়ি এলাকার আলেয়া বেগম। তিনি নিজের সব প্রসাধনসামগ্রী অনলাইন থেকেই কেনেন। অনলাইনে কিনলে আসল জিনিসটাই পান। স্থানীয় বাজারেই অনেক সময় আসল প্রসাধনী পাওয়া যায় না।

অনলাইনে দীর্ঘদিনের কেনাকাটার অভিজ্ঞতা রয়েছে আলেয়া বেগমের । তিনি বলেন, সাধারণত রিয়াজউদ্দিন বাজার  ও টেরী বাজার গেলে অনেক ঘুরতে হয়। রমজানে শত শত দোকান ঘুরে পছন্দের পোশাকটি খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টের। তারপর আবার রোজা রেখে শরীরও দুর্বল লাগে। আমাদের দেশে এখন অনলাইনে অনেক কালেকশন আছে।

তাই ঈদের কেনাকাটা করতে ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ই-কমার্স সাইট, ফেসবুক শপ থেকে নানা পণ্য কিনছেন ক্রেতারা।

ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বাহারি পণ্যের সমাহারে অনলাইনে কেনাকাটা আগের চেয়ে নতুন মাত্রা পেয়েছে। পোশাক থেকে গহনা, প্রসাধনী থেকে নিত্যপণ্য, টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, সবই এখন হাত বাড়ালেই অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।

অনলাইন শপিংয়ের ক্ষেত্রে সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেইসবুক দিন দিন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশেষ করে ফেসবুকের অনলাইন শপিংয়ের ফ্যান পেইজগুলো। ফেইসবুকে পেইজ তৈরি করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তাতে দেশি বিদেশি নানান ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন।

যাঁরা ভিড় ঠেলে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন না, তাঁরাই মূলত অনলাইনের ক্রেতা।

ই–ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার বলেন, ‘দিন দিন অনলাইনে কেনাকাটায় মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, যা ঈদের মতো উৎসবে বেড়ে যায়। অনলাইনে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোও এসব উৎসবকে কেন্দ্র করে ক্রেতাদের টানতে মূল্যছাড়সহ নানা সুবিধা দিয়ে থাকে। অনলাইন কেনাকাটায় মানুষ যাতে নিরাপদ বোধ করে, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

 

 

এই বিভাগের আরও খবর