chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে নানা উদ্যোগ

নানা অনিয়ম ঠেকাতে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় অভিযান শুরু করেছে। চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করতে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অভিযান পরিচালনা করছেন। চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের ১১ জেলায় গঠন করা হয়েছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নেতৃত্বে গঠন করা ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। তারাও বিভিন্ন খাদ্য গুদামে অভিযান চালাচ্ছেন।

এর আগে পরিবহণের সময় সরকারি খাদ্যশস্য আত্মসাৎ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা জারি করে চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ। এখন থেকে প্রেরণ কেন্দ্র ও প্রাপক কেন্দ্র-দুই জায়গা থেকেই খাদ্যশস্য গ্রহণ ও সরবরাহের ভিডিও ক্লিপ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে হবে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম কায়ছার আলী স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য জানা গেছে। কর্মকর্তাদের পদায়তে আনা হয়েছে সংস্কার।

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ হিসেবে গত রোববার রাতে অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ। অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম কায়ছার আলী।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রোববার বিকেলে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারেন দুইটি ট্রাক থেকে সরকারী চাল আত্মসাত করার জন্য বের শাহ আনানত সেতু এলাকার দিকে যাচ্ছে। আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাৎক্ষণিকভাবে অভিযানে নেমে পড়েন। রাতে কর্ণফুলী থানার মইজ্জ্যারটেক এলাকা থেকে চালভর্তি ট্রাকটি জব্দ করেন। গাড়িতে থাকা ভি-ইনভয়েসহ বিভিন্ন কাগজপত্র পর্যালোচনা করেন। গাড়িটি বের হয়ে চট্টগ্রামে একটি সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপো-সিএসডি থেকে। আর প্রাপক কেন্দ্র বান্দরবানের আলী কদম লোকাল স্টোরেজ ডিপো বা এলএসডি। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাৎক্ষনিকভাবে চট্টগ্রামের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনিনকে সংশ্লিষ্ট প্রেরণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। আর বান্দরবান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) জ্যোতি বিকাশ ত্রিপুরাকে ট্রাকটির গন্তব্য বা প্রাপক কেন্দ্র বান্দরবান জেলার আলী কদম এলএসডিতে পাঠানো হয়।

আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী খাদ্য বিভাগে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী চট্টগ্রাম বন্দর প্রথম চালবাহী এমভি তানাইজ জাহাজ ১২ দিনের বার্থিং পেলেও মাত্র ২ দিনেই খালাসের ব্যবস্থা করেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে আগে দৈনিক সর্বোচ্চ ২২০০ টন চাল খালাস করা হতো। এখন দৈনিক সর্বোচ্চ ৪ হাজান ৭০০ টন পর্যন্ত খালাস করা হচ্ছে। যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর হতেই খাদ্য বিভাগের দুর্নাম ঘুচিয়ে কর্মকান্ডে সহজ উপায়ে জনগণের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের আদলে করা যায় এবং সরকারের মিনিমাম খরচে খাদ্যশস্য খালাস, বিলি-বিতরণ ও প্রেরণ করার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন এলএসডিতে প্রেরিত খাদ্য শস্য চোরাই পথে যাত্রা রোধ করা হয়েছে। পাহাড়তলী ও চাক্তাই এলাকায়চালের কালো বাজারি সিন্ডেকেটের উপর নিয়মিত তদারকি, খাদ্যশস্য অবৈধ মজুতদারির বিরুদ্ধে অভিযান ও এলএসডিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদায়নে কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তার তদবির ও দুর্নীতি বন্ধের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে চেইন অব কমান্ড ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকল্পে গত বছরের ২৫ আগস্ট ২৮৮১ নম্বর স্মারক মূলে সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হতে প্রস্তাব পাঠানোর নিদের্শনামূলক পত্র প্রেরণ করা হয়। যা বদলি নীতিমালার সাথে সমন্ময় করে কার্যক্রম চলমান রয়েছে । যেখানে গুদাম ইনর্চাজ কর্তৃক খাদ্যশস্য আত্মসাতের মত ঘটনা জিরো টলারেন্সে নামিয়ে নিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদায়নে আচার-আচরণ,দক্ষতা,নৈতিকতা, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বিগত সময়ে তিন পার্বত্যজেলার বিভিন্ন এলএসডিতে চাল ও গমের সুচি জারি হলে তার ৭০ শতাংশ গাড়ি প্রাপক কেন্দ্রে না পৌছে-পথিমধ্যে বিভিন্ন ডিও’র বিতরণ খাত দেখিয়ে পাহাড়তলী ও চাক্তাইয়ের ব্যবসায়ীক গুদামে নামিয়ে ফেলা হতো। কিন্তু বর্তমান আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কঠোর হস্তেেক্ষপে তা বন্ধ হয়ে গেছে। তিন পার্বত্য জেলা সহবিভাগের বিভিন্ন এলএসডিতে, পথ খাতে, বেসরকারিগুদামে, চালের আড়তে অভিযান পরিচালনা করে স্টকের গরমিল পেলে প্রথম বারের মত সবাইকে সর্তকতামূলক বার্তা দেন। এটি বাড়তে থাকলে কঠোর নির্দেশনা জারি করেন।

এ নির্দেশনা চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের দুটি সাইলো, ১১ জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়, একটি চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রকের দপ্তর, তিনটি সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপো-সিএসডি, একশটি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও ১১৫টি লোকাল স্টোরেজ ডিপোর-এলএসডির কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘদিন সিএসডির ব্যবস্থাপক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অগোচরে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী গন্তব্য তথা প্রাপক কেন্দ্রের আগেই চাল ও গম বোঝাই ট্রাক আনলোড করে সরকারি খাদ্যশস্য আত্মসাৎ করে আসছিল। বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের অনেক ঘটনা ধরাও পড়ে। এদিকে এ নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, বিভাগীয় খাদ্য পরিবহণ ঠিকাদার-(ডিআরটিসি) ও আন্তঃজেলা খাদ্য পরিবহণ ঠিকাদার (আইআরটিসি) সূচির আওতায় চাল ও গম প্রেরণ কেন্দ্র হতে বোঝাই এবং প্রাপক কেন্দ্রে খালাস প্রক্রিয়ায় ১০ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ০১৭৮৪.. প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রেরণ কেন্দ্র হতে চাল-গম বোঝাইকৃত ট্রাকের ভি-ইনভয়েসের কপি, ট্রাক ও গুদামের নম্বরসহ ১০ সেকেন্ডের ভিডিও প্রেরণ করতে হবে। এ ছাড়া প্রাপক কেন্দ্রে আগত চাল-গম বোঝাইকৃত ট্রাকের ভি-ইনভয়েসের কপি, ট্রাক ও গুদামের নম্বরসহ ১০ সেকেন্ডের ভিডিও প্রেরণ করতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ভিডিও ক্লিপ প্রেরণে ব্যর্থতার কোনো অজুহাত গ্রণযোগ্য হবে না। অন্যথায় ধরে নেওয়া হবে বোঝাইকৃত খাদ্যশস্য প্রাপক কেন্দ্রে পৌঁছায়নি। এতে সংশ্লিষ্ট এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/সিএসডির তল্লাশি ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/সাইলোতে লোডিং পয়েন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই দায়িত্ব থেকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হবে এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ২(খ) মোতাবেক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চট্টগ্রাম জেলার একাধিক এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ নির্দেশনা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিএসডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অগোচরে প্রাপক কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চাল ও গম বোঝাই ট্রাক আত্মসাৎ করা হচ্ছিল। সবেচেয়ে বেশি সরকারি খাদ্যশস্য বোঝাই ট্র্রাক আত্মসাৎ হয় পার্বত্য জেলাকেন্দ্রিক গাড়িগুলো থেকে।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম কায়ছার আলী দৈনিক চট্টলার খবরকে বলেন, নানা অনিয়ম ঠেকাতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আগে খাদ্য শস্য এক গুদাম থেকে অন্য গুদামে নেওয়ার নামে কাগজ ট্রান্সফার হতো। এই উদ্যোগ গ্রহণ করার পর তা বন্ধ হয় যায়। পুনরায় সেই পুরনো সিন্ডিকেট সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে আমি তথ্য পেয়েছি। তাই এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, কাগজ ট্রান্সফার বন্ধ হওয়ার পর থেকেই চট্টগ্রাম বিভাগের সব ধরণের অনিয়ম বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারনে বাংলাদেশের আটটি বিভাগে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটলেও চট্টগ্রাম বিভাগের গত দুই বছরে কোন ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানেও একটি চিরুনি অভিযান চলছে। প্রত্যেক জেলার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট টিম চট্টগ্রাম বিভাগের সব এলএসডিতে অভিযান পরিচালনা করছে।’
ফখ|তাসু|চখ

এই বিভাগের আরও খবর