সেই অস্ত্রধারীরা গ্রেপ্তার হননি
অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জনসমক্ষে মহড়া, ভয়ভীতি দেখানো ও সংঘর্ষে জড়ানো আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পটিয়ায় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার ঘটনায় প্রকৃত অস্ত্রধারীকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ এর ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও ছাত্র আন্দোলনে হামলাকারী এজহারভুক্ত আসামীদের উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অপরাধীদের ধরতে প্রশাসনের তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের। এদিকে সন্ত্রাসীরা আইনের আওতায় না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে সাধারণ মানুষ। হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
- ছবিতে বন্দুক হাতে যুবলীগ ক্যাডার নুরুল আজিম বাচাকে দেখা যাচ্ছে (হেলমেট পরিহিত)। তার পেছনে আরেক যুবলীগ ক্যাডার ফৌজুল কাদের বাবলুর কোমরে পিস্তল সদৃশ বস্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে (লাল টিশার্ট ও ক্যাডস পরিহিত)
গত বছর শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন পরে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রূপ নিলে পটিয়ার ছাত্র–জনতা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে। পটিয়া আল জামেয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও পটিয়ার সর্বস্তরের ছাত্র–জনতা আগস্টের ৪ তারিখ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পটিয়া ডাক বাংলোর মোড় থেকে মুন্সেফ বাজার হয়ে সামনে অগ্রসর হলে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ছাত্র–জনতার উপর আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি নিক্ষেপ করে। হামলাকারীরা ছিলো পটিয়া উপজেলা ও পটিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ তাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতা-কর্মী।
সেখ্নে বন্দুক হাতে একাধিক হত্যা ও চাঁদাবাজি মামলার আসামি যুবলীগ ক্যাডার প্রজ্ঞাজ্যোতি বড়ুয়া ওরপে লিটন বড়ুয়া ছাত্র জনতার ওপর ব্রাশ ফায়ার করে। তার সাথে ছিলেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ১৮ মামলার আসামি জমির উদ্দিন ও বালু সাইফুল। এছাড়া হামলায় নেতৃত্ব দেন পটিয়া পৌরসভার ৩ কাউন্সিলর।
৪ আগস্টের আওয়ামীলীগের দলীয় সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রায় অর্ধ-শতাধিক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়। সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় একাধিক মামলা দায়ের করা হলেও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা এখনো আইনের আওতায় আসেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলেও তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রশাসনের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর যুবলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রনিকে ধোলায় দিয়ে ছাত্র-জনতা পুলিশের হাতে তুলে দিলেও হামলার ফুটেজে দেখা যাওয়া তার হাতে থাকা অস্ত্রের কোনো সন্ধান পুলিশ দিতে পারেনি। অনেক আসামী এখনও প্রকাশ্যে ঘুরছে।
এ বিষয়ে ভিকটিম পরিবারগুলোর মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বাদী এনামুর রশিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “৪ আগস্ট আমাদের উপর হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করা অনেকেই এখনো এলাকায় অবস্থান করছে। সোশাল মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত গুজব ছড়াচ্ছে। তারা আইনের আওতায় না আসায় আমি ক্ষুব্ধ।”
এ বিষয়ে পটিয়া ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি হাসানুল বান্নাহ্ বলেন, “ছাত্র–জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি বর্ষণকারী সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আশা করছি, প্রশাসন অতিদ্রুত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনবে।”
পটিয়া মাদ্রাসার ছাত্র প্রতিনিধি কাসেম আল নাহিয়ান বলেন, “ফ্যাসিবাদি শক্তির পতনের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও ফ্যাসিবাদের দোসর ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে না পারা পুলিশ-প্রশাসনের বড় ধরণের ব্যর্থতা।”
এ বিষয়ে পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মুহাম্মদ নাজমুন নূর বলেন, “অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে। আপনাদের আশেপাশের কোনো সন্ত্রাসীর তথ্য থাকলে দিন–আমরা তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।”
◑ ফখ|মআ|চথ