চট্টগ্রামে গণপরিবহনের হ-য-ব-র-ল অবস্থা
চট্টগ্রাম নগরজুড়ে দিন দিন বেড়েই চলেছে সিটি সার্ভিস গুলোর দ্বৈরত্ব। যাত্রী তোলা নিয়ে বাসগুলোর মধ্যকার প্রতিযোগিতা এমন বেগতিক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে সড়কে রেষারেষি, একই রুটের অন্য বাসকে চলন্ত অবস্থায় চাপা দেওয়া, অকারণে যানজট তৈরীসহ নানান অপ্রতিকার ঘটনা এখন নিত্যদিনের চিত্র।
এসব কারণে গণপরিবহণ জগতে সবচেয়ে সাশ্রয়ী এ বাহনগুলো বর্তমানে নগরবাসীর বিড়ম্বনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নগরের গণপরিবহণ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে গৃহীত মহাপরিকল্পনায় স্বল্প মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী দুই ধরনের কৌশলগত উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ, ২০০৮ সালের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এবং ২০১৮ সালের স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যানে প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠনের কথা বলা হলেও গেল ৩০ বছরে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ফলে কাগজে কলমে এসব পরিকল্পনা থাকলেও সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় সড়কের এই বিড়ম্বনা এখনও ভোগাচ্ছে নগরবাসীকে।
চাকরিজীবী মুনতাসির আবরার চট্টলার খবরকে বলেন, নির্ধারিত সময় পরপর গাড়ি ছাড়ার নিয়ম কিংবা সময়সূচি কোনোটায় নেই সড়কে চলাচল করা এই বাসগুলোর ক্ষেত্রে।যার ফলে কোনো পয়েন্টে একই সময়ে একই রুটের কয়েকটি গাড়ি চলে আসলে যাত্রী তোলার জন্য এ ধরণের প্রতিযোগিতা করে তারা। যার কারণে দুর্ঘটনা এখন নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরাকান সড়কের কালুরঘাট-চকবাজার রুটে নিয়মিত যাতায়াত করা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কামরুল হুদা বলেন, চালকদের কঠিন শাস্তিদানের অভাবে পরিস্থিতি এমন বেপরোয়া রুপ ধারণ করেছে যে এসব বাসে উঠলে এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় কখন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে। ট্রাফিক আইন সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করলে চালকরা অবশ্যই সংযত আচরণ করত।
যে পথ আগে ৩০-৪০ মিনিটে পোঁছানো যেত তা পার হতে বর্তমানে অনেক সময় এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম শহরে কাপ্তাই রাস্তার মাথা হতে নিউমার্কেট পর্যন্ত গড়ে ২০০ মিটার পরপর ট্রাফিক সদস্যরা অবস্থান করেন। আর এসব ঘটনা তাঁদের নাকের ডগায় ঘটলেও অনেক সময় নিষ্ক্রিয় ভূমিকাতে দেখা যায় তাঁদের।
‘কনজাস্টেড আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইন রিচ অ্যান্ড পুওর কান্ট্রিজ’ শীর্ষক এক গবেষণায় বিশ্বের শীর্ষ ২০ ধীরগতির শহরের তালিকায় চট্টগ্রাম শহরের অবস্থান ১২তম। যে তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে দেশের আরেক মেগাসিটি ঢাকা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের দেয়া এক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১২ বছর আগে চট্টগ্রামে যানবাহনের ঘন্টায় গতি ছিল ২১ কিলোমিটার। বর্তমানে যা গড়ে ৫ কিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক কর্মকর্তা চট্টলার খবরকে বলেন, সিটি সার্ভিস গুলোর প্রতিটা বাসে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ টি মামলা রয়েছে, প্রতিবারে জরিমানাও গুনছে দ্বিগুণ। কিন্তু তারপরও তাঁদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আসলে এই যানবাহনগুলোকে মামলা করাটাই সমাধান নয়, সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি। তবে আমরা আমাদের জায়গা থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু বলেন, নগরের সড়কগুলোতে রিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা তিন লাখের বেশি। ব্যস্ততম সড়ক গুলোতেও এখন সব ধরণের রিকশা চলছে। ধীরগতির এসব বাহনের কারণে নগরে গাড়ির গতি কমে গেছে। এছাড়া নগরের সব রুটে কাউন্টারভিত্তিক গণপরিবহন না থাকায় সড়কে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।
এই সমস্যার সমাধানে গণপরিবহনের মালিকদেরও অনীহা রয়েছে। তবে এ অবস্থার থেকে উত্তরণে প্রশাসনের সহযোগীতায় কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
‘চিটাগং স্ট্র্যাটেজিক আরবান ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যানের জরিপে দেখা গেছে, নগরীতে চলাচলরত যানবাহনের মধ্যে সবচেয়ে কম গতি বাসের।
যেখানে সকালে (ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা) বাসের গতি থাকে ঘণ্টায় ১৩.৯ কিলোমিটার। তবে বিকেলে (বিকেলে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা) এ গতি এসে দাঁড়ায় ১০.৩ কিলোমিটারে। ব্যক্তিগত গাড়িগুলোর সকালে গড় গতি ১৮.৩ কিলোমিটার থাকলেও বিকেলে দাঁড়ায় ১০.৭ কিলোমিটারে।
জেএফআই/চখ