গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হাফেজ শাহেদ কুরআন মনে করতে পারছেন না
জয়নুল আবেদিন শাহেদ একজন কুরআনের হাফেজ।বিগত রমজানেও তারাবীহ পড়িয়েছিলেন। হাফেজে কুরআন শাহেদ এখন আর কুরআন মনে করতে পারছেন না, তিলাওয়াত শুরু করলে কুরআন ভুলে যাওয়ার দরুন মাঝপথে থেমে যেতে হচ্ছে। বলতে গেলে প্রায় ভুলতে বসেছেন কুরআন। শুধু কুরআন না, দৈনন্দিন আলাপচারিতাও মনে রাখতে পারছেন না শাহেদ। একটু আগে বলা কথাও ভুলে যাচ্ছেন। বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আবার জিজ্ঞেস করে নিতে হচ্ছে।
বিগত বছরের আগস্টের শুরুর দিকে ‘দফা এক দাবি এক, খুনি হাসিনার পদত্যাগ’ শ্লোগান আর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো সমগ্র বাংলাদেশ। সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলাও বিক্ষোভের অগ্নিগর্ভে পরিণত হয়েছিলো। পটিয়ার ছাত্র-জনতা নেমে এসেছিলো রাজপথে। ‘২৪ সালের ৪ আগস্ট পটিয়ার ছাত্র-জনতা ‘এক দফা’ দাবিতে উপজেলার ডাক বাংলো এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মুন্সেফ বাজার এলাকায় আসলে আওয়ামীলীগ ক্যাডারদের সশস্ত্র হামলার শিকার হন। সন্ত্রাসীদের চতুর্মুখী আক্রমণে গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেকেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে একটি গুলি লাগে সরাসরি শাহেদের মাথায়। শাহেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। সহযোদ্ধারা উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় শাহেদকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দুই সপ্তাহের অত্যাধিক সময় আইসিউতে ছিলেন শাহেদ। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে শাহেদকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। শাহেদ হাসপাতাল থেকে ফিরলেও এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। কোনো কিছুই মনে রাখতে পারছেন না মাথায় গুলিবিদ্ধ শাহেদ।
প্রবাসী বাবার ৪ ভাই-বোনের সবার ছোট হাফেজ শাহেদ।শাহেদ পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
পটিয়া সদরের দারুল আরক্বম তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসা থেকে হেফজ শেষ করে বিগত রমজানে উপজেলার বড়লিয়া ইউনিয়নের মাহবুবুর রহমান শাহ্ (র) মাজার সংলগ্ন মসজিদে তারাবীও পড়িয়েছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে এবার ৯ম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। শাহেদের বর্তমান পড়াশোনা পটিয়া সদরের শাহচান্দ আউলিয়া কামিল মাদ্রাসায় ১০ম শ্রেণীতে।
শাহেদের স্বপ্ন ছিলো একদিন সে আল-আযহারে পড়বে। মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শাহেদের স্মৃতিতে দুর্বলতা দেখা দেওয়ায় উচ্চ শিক্ষার সে স্বপ্ন এখন প্রায় অনিশ্চিত।
শাহেদের বন্ধু হাফেজ হাবিবুল্লাহ বলেন, ” আমি ও শাহেদ একসাথে মাদ্রাসায় ভর্তি হই। তার স্বপ্ন ছিলো আল-আযহারে পড়বে। সন্ত্রাসীদের বুলেটের আঘাতে তার সে স্বপ্ন চুরমার হতে চলছে।”
শাহেদের ভাষ্যমতে, আন্দোলনের কোনো স্মৃতিই এখন আর তার মনে নেই। সে আন্দোলনে গিয়ে আহত হয়েছে এটা বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের কাছে শুনেছে তবে সে কিছুই মনে করতে পারছে না। শাহেদের মা খুরশিদা বেগম পেশায় গৃহিণী। সারাক্ষণ ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। তিনি বলেন, ” আল্লাহ্ আমার ছেলেকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমার ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সে যাতে পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠে সে দোয়া করছি।”
শাহেদের পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসার। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা শাহেদের পরিবারের কাছে পৌঁছাইনি।
পটিয়ার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হাসান আল বান্নাহ্ বলেন, ” পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও আহতদের কাছে সহযোগিতা পৌঁছায়তে না পারা ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় ধরনের ব্যর্থতা। সরকারের কাছে আহতদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাদের পরিবারকে পুনর্বাসিত করার দাবি জানাচ্ছি।”
- ফখ|চখ