এইচএমপিভি কি, কীভাবে ছড়ায়?
লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করণীয়
বাংলাদেশে নতুন করে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) শনাক্ত হয়েছে, যা আগের মতোই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জাপান, মালয়েশিয়া ও ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে।
আইইডিসিআর-এর ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ নওশের আলম জানিয়েছেন, কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকার একজন নারীর শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাস পাওয়া গেছে। বর্তমানে তিনি ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এবং তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
এইচএমপিভি ভাইরাস কী এবং কীভাবে ছড়ায়?
এইচএমপিভি একটি আরএনএ ভাইরাস যা মূলত শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে। এটি ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের পরীক্ষা করার সময় প্রথম শনাক্ত হয়, তবে গবেষণায় জানা গেছে, এটি অন্তত ৬০ বছর আগেই মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। এই ভাইরাসটি সাধারণত হাঁচি, কাশি অথবা ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়।
এছাড়া, দরজার হাতল, লিফটের বাটন বা অন্যান্য স্পর্শযোগ্য স্থানে হাত দিলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা পরবর্তীতে চোখ, মুখ বা নাকে হাত দিলে ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
এইচএমপিভি ভাইরাসের লক্ষণ ও ঝুঁকি
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণ ফ্লুয়ের মতো উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন:
- জ্বর
- সর্দি
- কাশি
- গলা ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট
লক্ষণগুলো সাধারণত ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে সেরে যায়, তবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা, অ্যাজমা, সিওপিডি বা ক্যান্সারসহ দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই ভাইরাস শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে, যা গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে একটি শতাংশের মধ্যে ঘটেছে।
বাংলাদেশে এইচএমপিভি শনাক্ত এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
এ বছর জানুয়ারিতে চীনে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়, পরে এটি জাপান, মালয়েশিয়া ও ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এইচএমপিভি ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যমান এবং এখানে মানুষের মধ্যে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই ভাইরাস করোনার মতো বড় আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বর্তমানে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ বিষয়ে কোনো বিশেষ সতর্কতা জারি করেনি।
সতর্ক থাকার পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন :
- হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢাকুন।
- নিয়মিত হাত ধুতে হবে।
- ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন।
- শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, তবে সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
তাসু/চখ