chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সেন্টমার্টিনে সীমিত পর্যটক, হতাশ ব্যবসায়ীরা

৮ দিনে পর্যটক গেছে ৭১০৫ জন

কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া থেকে ৮ ডিসেম্বর সকাল ৬ টায় যাত্রা শুরু করে পর্যটকবাহী কর্ণফুলী জাহাজ। এর পর পরই আরও ৩ টি জাহাজ যাত্রা করে দেশের একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে। বঙ্গোপসাগরের বুকে টানা ৬ ঘণ্টা পর সেন্টমার্টিনের জেটিতে পৌঁছে এই ৪টি জাহাজ।

প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ থেকে দ্বীপটিতে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু এবার নানা জটিলতা পেরিয়ে তা শুরু হয়েছে ১ ডিসেম্বর থেকে।

অষ্টম দিনের মতো রবিবার কর্ণফুলী, বার আউলিয়া, কেয়ারি ও বে ক্রুজ জাহাজ যোগে দ্বীপে মোট ১ হাজার ১৩২ জন যাত্রী দ্বীপে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকেদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।

তিনি জানান, ৮ দিনে মোট ৭ হাজার ১০৫ জন পর্যটক গেছেন দ্বীপে। এর মধ্যে ১ ডিসেম্বর ১ টি জাহাজে গেছেন ৬৫৩ জন, ২ ডিসেম্বর ১ টি জাহাজে ৬৫৬ জন, ৩ ডিসেম্বর ১টিতে ৭৪০ জন, ৪ ডিসেম্বর ৩ টি জাহাজে ১ হাজার, ৫ ডিসেম্বর ২ টি জাহাজে ৬৫৬ জন, ৬ ডিসেম্বর ৪ টি জাহাজে ১ হাজার ৫৫০ জন, ৭ ডিসেম্বর ২ টিতে ৭০৭ জন দ্বীপে গেছেন। যা সরকারের নির্ধারিত প্রতিদিনের ২ হাজার জনেরও কম।

মুলত গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণলয়ের সভায় সেন্টমার্টিনের বিষয়ে নানা বিধি নিষেধ আরোপ করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গত ২৮ অক্টোবর একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অসমা শাহীন স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করে।

যে পরিপত্রে ৫ টি বিষয় উল্লেখ্য রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে সেন্টমার্টিনে নৌ যান চলাচলের বিষয়টি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণ করে অনুমতি প্রদান করবে। নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনে ফিরে আসতে হবে। রত্রিযাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপন করা যাবে। পর্যটকের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি হবে না। দ্বীপে রাতে আলো জ্বালানো যাবেনা, শব্দ দূষণ সৃষ্টি করা যাবে না। বার বি কিউ পার্টি করা যাবে না।

সিদ্ধান্তের পর দ্বীপে কড়াকড়ি বিষয় ও ভ্রমণের জন্য নিবন্ধন থাকার কথা প্রচার হওয়ায় কাংখিত ২ হাজার পর্যটকের দেখাও মিলছে না বলে জানান সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।

তিনি বলেন, দ্বীপে পর্যটক নিবন্ধিত করতে কোন জটিলতা নেই। জাহাজের টিকেট কাটলে নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি শেষ। আর কাংখিত পর্যটকের দেখা না পেয়ে চিন্তিত দ্বীপের বাসিন্দা সহ পর্যটক সংশ্লিষ্টরা।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানান, ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটি সাড়ে ১০ হাজার মানুষ বসাবস করেন। এখন সময় দ্বীপের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস ছিল সমুদ্রে মাছ আহরণ। কিন্তু গত ২০ বছরে বদলে গেছে এই আয়ের মাধ্যম। এখন দ্বীপের শতভাগ মানুষ পর্যটনের উপর নির্ভরশীল।

নভেম্বর থেকে মার্চ এই ৫ মাসের দ্বীপ ভ্রমণকারী পর্যটক নিয়ে করা আয়ে পুরো বছর জীবিকা পরিচালনা করে দ্বীপের মানুষ। কিন্তু এ বছর ৫ মাস সময় পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের সিদ্ধান্ত মতে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। আর গত ৮ দিনে যাওয়া পর্যটকের সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে ১ হাজারের কম। ফলে দ্বীপের মানুষ চিন্তিত রয়েছেন।

বাজারের রেস্তোরাঁ পরিচালনাকারী ব্যবসায়ী আবু তালেব জানান, গত ১৪ বছর আগেও তার ৩ টি ফিশিং ট্রলার ছিল। তা আর নেই। একটি রেস্তোরাঁ ও কয়েক রুমের একটি কটেজ পরিচালনা করে সংসারের খরচ জোগান দেন। এবারে যত সংখ্যক পর্যটক আসছে তাতে খুবই চিন্তায় আছেন। দুই মাসে আয় কি হবে তা বুঝতে পারছেন না তিনি।

পর্যটককে কেন্দ্র করে দ্বীপে বৈধ অবৈধ আবাসিক হোটেল কটেজর সংখ্যা ২১৭টি। যেখানে রয়েছে অনেকে কর্মচারীও। অনেক টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে উঠা এসব আবাসিক প্রতিষ্ঠানে খরা চলছে বলে জানান দ্বীপের বাসিন্দা ও কটেজ মালিক আবদুল মজিদ।

তাসু/চখ-আরএ

এই বিভাগের আরও খবর