‘ইমিউনিটি ঘাটতিতে’ ডেঙ্গুতে চট্টগ্রামে বেশি মারা যাচ্ছে নারী
চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গুতে নারীর মৃত্যু বেশি ঘটছে। এ বছর নারীদের তুলনায় পুরুষ আক্রান্তের সংখ্যা বেশী হলেও এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৫ জন পুরুষের বিপরীতে ২৩ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে। যা মোট মৃত্যুর ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অপরদিকে ডেঙ্গুতে পুরুষদের মৃত্যুর হার ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
বুধবার (৪ নভেম্বর) চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ রোগী ২ হাজার ১৪৯ জন, নারী ১ হাজার ১ হাজার ১৫০ জন ও শিশু ৭৩৬ জন।
ডেঙ্গুতে পুরুষের তুলনায় কম আক্রান্ত হয়েও নারীর মৃত্যুহার বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে চিকিৎসকরা দিয়েছেন নানান তথ্য।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাইদ চট্টলার খবরকে বলেন, পুরুষ না নারী মারা যাবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে সিবিআর ডেঙ্গু বা কত দ্রুত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে তার উপর। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে এক্সপান্ডেট ডেঙ্গু সিনড্রোম, যেখানে রোগীর বিভিন্ন অর্গান (কিডনি/ লিভার/ ব্রেইন) আক্রান্ত হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটায়।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর বিপজ্জনক সময় তৃতীয় দিন থেকে ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। ফলে এই সময়ের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করলে মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হয়। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের মহিলারা চিকিৎসা গ্রহণে একটু পিছিয়ে থাকেন। অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিহা প্রকাশ করেন। এছাড়াও হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এ সময় ক্ষেপণের ফলে মৃত্যু ঝুঁকিতে বেশি থাকেন তারা।
এছাড়া নারীদের জটিলতা বেশি দেখা দেওয়ার অন্যতম কারণ ইমিউনিটি ঘাটতি। এ কারণে ডেঙ্গুতে নারীদের মারা যাওয়ার হার বেশি বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে ডা. মনোয়ার কবির চট্টলার খবরকে বলেন, পূর্বে ডেঙ্গুর বিস্তার শুধুমাত্র শহুরে অঞ্চলে হলেও ধীরে ধীরে তা ধারণ পরিবর্তন করে এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গুতে চার ধরনের সেরোটাইপ (ডেন ১, ডেন ২, ডেন ৩, ডেন ৪) দেখা যাচ্ছে। ফলে একজন রোগী একাধিক সেরোটাইপে আক্রান্ত হলে জটিলতা সৃষ্টি হয়।
এছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে নির্দিষ্ট এন্টি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত না হওয়ায় তা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। তাই এমন ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে, যা সব ধরনের সেরোটাইপের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে।
ডেঙ্গু গবেষণা নিয়ে সরকারীভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও ক্ষুদ্রভাবে অনেকগুলো গ্রুপে গবেষণা চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরে চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৩৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের, এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ২৩ জন ও অন্যান্য জেলার ১৯ জন। এর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চার উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে সীতাকুণ্ডে সর্বোচ্চ ২৩২ জন আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া লোহাগাড়ায় ২২১ জন, রাউজানে ১৬৮ জন ও সাতকানিয়ায় ১৬০ জন আক্রান্ত হয়েছে। অন্যান্য উপজেলার মধ্যে পটিয়ায় ৯৮ জন, চন্দনাইশে ৮৬ জন, বাঁশখালীতে ৮৫ জন, কর্ণফুলীতে ৬৭ জন, হাটহাজারী ৬৪ জন, আনোয়ারা ৫৫ জন, বোয়ালখালী ৫২ জন, ফটিকছড়ি ৫১ জন, মিরসরাই ৪৪ জন, রাঙ্গুনিয়া ৪০ জন ও সন্দ্বীপে ১৮ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে চলতি বছরে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জেএফআই/চখ