চট্টগ্রামে বড় গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতে খরচ পড়বে ৫০০ টাকা
পরিবহণ খরচ, লবণের দাম, শ্রমিকের মজুরি মিলিয়ে প্রতিটি বড় গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে এবার খরচ পড়বে অন্তত ৫০০ টাকা।
বাংলাদেশে পশুর চামড়ার যে চাহিদা, তার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই পূরণ হয় কোরবানির ঈদে। ফলে এটাই চামড়া সংগ্রহের বড় মৌসুম। দেশের মোট চামড়ার চাহিদার বড় একটা অংশ মেটায় চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে।
সোমবার (১৭ জুন) বিকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় আসতে শুরু করেছে চামড়া বোঝাই ট্রাক গুলো রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পাইকারি আড়তদারদের কর্মব্যস্ততা।
ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে ৩ জুন কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এ বছর ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫-৪৮ টাকা।
আড়তদারেরা বলছেন, পরিবহণ খরচ, লবণের দাম, শ্রমিকের মজুরি মিলিয়ে প্রতিটি বড় গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে এবার খরচ পড়বে অন্তত ৫০০ টাকা। সরকার ঢাকার বাইরে গরুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দিয়েছে ন্যূনতম এক হাজার টাকা। প্রক্রিয়াজাত খরচসহ হিসেব করে সরকারি নির্ধারত দর ঠিক রাখতে গেলে আড়তদারেরা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার বেশি দামে কাঁচা চামড়া কিনতে পারবেন না।
প্রতিটি পশুর চামড়ার মোট খরচ দেখানো হয়েছে ৪৯৮ টাকা। এর মধ্যে একেকটি চামড়ায় ৯ থেকে ১০ কেজি লবণ দিতে হয়, যার দাম বাবদ ১৪০ টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। লেজ, কান, মাংস ও চর্বি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রতিটি চামড়ায় লবণ ছিটানোর মজুরি ধরা হয়েছে ১০০ টাকা। চামড়ার গাদী ভাঙা ও লাট দেওয়ার জন্য প্রতি পিসে ১৫ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। পরিবহণ খরচ এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে সংরক্ষণে প্যান্ডেল, লাইটিং, আপ্যায়ন ও বিদ্যুতের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ টাকা।এর বাইরে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় চামড়া পাঠানোর জন্য প্রতি পিসে ট্রাক ভাড়া ৩০ টাকা, ট্রাকে প্রতি পিস চামড়া ওঠানোর জন্য মজুরি ৮ টাকা, ঢাকায় আড়তদারি বাবদ প্রতি পিসের জন্য ৪০ টাকা এবং প্রতি পিস চামড়ায় ব্যক্তিগত খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ টাকা। এ ছাড়া ঢাকায় আড়ত থেকে ট্যানারি মালিকের কাছে বিক্রির সময় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ চামড়া বাদ দেওয়া হয়। এ হিসাবে প্রতি পিস চামড়ায় আরও ১২০ টাকা দাম যুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩ টাকা বেড়েছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, গত বছর এই দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গত বছর ৪৭ থেকে ৫২ টাকা ছিল। এ হিসাবে প্রতিটি গরুর চামড়া ঢাকায় ন্যূনতম ১২০০ টাকা ও ঢাকার বাইরে এক হাজার টাকায় কিনতে হবে ট্যানারি মালিকদের।
এ ছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে, যা গত বছর ছিল ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা। আর বকরির চামড়া কিনতে হবে প্রতি বর্গফুট ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকায়, যা আগের বছর ছিল ১২ থেকে ১৪ টাকা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের উপদেষ্টা ও এ আই লেদারের মালিক মো. আলী চট্টলার খবরকে বলেন, আমরা নগরীর ৪ টি পয়েন্টে আমাদের চামড়াগুলো মজুদ করছি,সে গুলো হল বিবিরহাট পশু বাজার, আতুরার ডিপোতে ২টি এবং ১ নং রেল গেট মুরাদপুরর মাঠে। আমাদের ৮০০ কর্মী চট্টগ্রামে কাজ করছেন। আমরা ৪৫০০বস্তা লবণ মজুদ করেছি আগেই।আজ এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার পিস কাঁচা চামড়া মজুদ হয়েছে। এরপর সেগুলো লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে অন্তত একমাস পর বিক্রি করা হবে ট্যানারির কাছে।
এবার লবণের দাম তুলনামূলক কম থাকায় কিছুটা স্বস্তিতে আছেন আড়তদারেরা, যদিও বাড়তি পরিবহণ খরচ ও শ্রমিকের মজুরি নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তাও আছেন তাঁরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরী মিলিয়ে এবার সাড়ে আট লাখ থেকে পৌনে ৯ লাখ পশু কোরবানির সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ২৬ হাজারের মতো গরু, ৭০ হাজার মহিষ এবং বাকিগুলো ছাগল ও ভেড়া।
আড়তদার সমবায় সমিতি এবার সাড়ে তিন লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গতবছর কোরবানির ঈদে প্রায় তিন লাখ ৪২ হাজার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল। এর মধ্যে আড়াই লাখের বেশি ছিল গরুর চামড়া।
- বিদ্যুৎ|ফখ|চখ