প্রোটিয়া-বৃত্ত ভাঙা হলো না বাংলাদেশের
শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০ রান, হাতে ৬ উইকেট। ক্রিজে ছিলেন দুই সেট ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তাওহিদ হৃদয়। কিন্তু নিউ ইয়র্কের ‘রহস্যময় পিচে’ এই হিসেবটা মিলাতে পারেনি বাংলাদেশ! ১৮তম ওভারে কাগিসো রাবাদা মাত্র ২ রান খরচ করে হৃদয়ের উইকেট তুলে নেন। শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ১১ রান। স্পিনার কেশভ মজারাজের দুটি ফুলটস ডেলিভারি পেলেও বাউন্ডারি আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ।
ওভারের পঞ্চম ডেলিভারিতে সীমানায় ক্যাচ আউট হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওই ওভারে আউট হন জাকের আলীও। ৬ রানের বেশি তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আজ ৪ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচ খেলা বাংলাদেশ একটি জিতল, অপরটি হারল। এর আগে শ্রীলংকার বিপক্ষে জিতেছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। অপর দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা তিন ম্যাচ খেলে তিনটিতেই জিতে সুপার এইটের টিকিট অনেকটা নিশ্চিত করে ফেলল।
সোমবার (১১ জুন) নিউ ইয়র্কে আগে বোলিং করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১১৩ রানেই আটকে রাখে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যে সহজে এই রান তাড়া করতে পারবে না সেটা আন্দাজ করাই যাচ্ছিল। কারণ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের পিচ শুরু থেকেই ব্যাটারদের যন্ত্রণা দিচ্ছে। আজ হলোও তাই, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ১১৩ রানও পেরুতে পারল না।
সৌম্য সরকারকে বসিয়ে আজ তরুণ তানজিম হাসান তামিমের সঙ্গে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত নেমেছিলেন ওপেনিং করতে। তরুণ ফিরেছেন শুরুতেই। দুই চার হাঁকিয়ে ফিরেছেন ৯ বলে ৯ রান করে। আগের ম্যাচে দায়িত্বশীল একটা ইনিংস খেলা লিটন দাসকে নিয়ে এরপর দলকে টানছিলেন শান্ত।
কিন্তু দুজনের একজনও দায়িত্ব পালন করতে পারেননি আজ। লিটন কেশভ মহারেজের স্পিন স্টেপ আউট করে খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়েছেন ১৩ বলে ৯ রান করে। তারপর চাপের মুখে অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানকে চারে পাঠানো হয়। কিন্তু অভিজ্ঞ সাকিব রীতিমতো কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করেছেন।
এনরিক নরজের বাউন্সার পুল খেলতে গিয়ে বল হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছেন ব্যক্তিগত তিন রানের মাথায়। সেই সময়ে বড় শট খেলার চেয়ে সিঙ্গেল বা ডাবলস নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাই ছিল বেশি। খানিক বাদে ২৩ বলে ১৪ রান করা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও নরজের শর্ট বল টেনে খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়েছেন। ৫০ রানে চার উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন বড় বিপদের।
সেখান থেকে হাল ধরেছিলেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ ও ফর্মে থাকা তাওহিদ হৃদয়। বড় শটের দিকে মনোযোগ না দিয়ে সিঙ্গেল, ডাবলসেই রানের চাকা সচল রেখে দলকে টানছিলেন দুজন। দুজন যখন ক্রিজে ছিলেন মনে হচ্ছিল বিশ্বকাপে দ্বিতীয় জয় পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
কিন্তু দলীয় ৯৪ রানের মাথায় কাগিসো রাবাদার বলে হৃদয় ফিরতেই সব হিসেব ওলট-পালট হয়ে যায়। ৩৪ বলে ২টি চার ২টি ছয়ে ৩৭ রান করে ফেরেন হৃদয়। জাকের আলী ও রিশাদ হোসেনদের নিয়ে পরে শেষের হিসেব আর মিলাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ।
২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১০৯ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ২৭ বলে ২০ রান করেছেন মাহমু্দউল্লাহ। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কেশভ মহারাজ ৩টি উইকেট নিয়েছেন। দুই উইকেট নিয়েছেন কাগিসো রাবাদা ও এনরিখ নরজে।
এর আগে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন বাংলাদেশি বোলাররাও। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে শুরুটা দারুণ করেছিলেন কুইন্টন ডি কক। ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরুটা চার, ছক্কায় দারুণভাবেই করেছিলেন ডি কক। তবে প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই রেজা হেনড্রিকসে ফিরিয়ে প্রথম আঘাহ হানেন সাকিব। শূন্য রানে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন হেনড্রিকস। পরের ওভারেই ডি কককেও প্যাভিলিয়নে ফেরান সাকিব। ১১ বলে ১৮ রান করা ডি কক হয়েছেন বোল্ড। এই ওভারে কোন রানই দেননি সাকিব।
দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক এইডেন মার্করামও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৪ রান করে তিনিও তাসকিনের বলে বোল্ড হয়েই ফিরেছেন। পরের ওভারেই সাকিবের দারুণ এক ক্যাচে তানজিম সাকিবের তৃতীয় শিকাআর স্টাবস। ২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন রীতিমত ধুঁকছে প্রোটিয়ারা।
এরপর দলের হাল ধরেছেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার হেনরিক ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। এই দুই ব্যাটার ঠাণ্ডা মাথায় দলের স্কোর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। খুব বেশি আক্রমণাত্মক না হলেও রানের চাকা সচল থেকেছে এই সময়ে। পঞ্চম উইকেটে এই জুটি তোলে ৭৯ রান। শেষের দিকে এই জুটি ভয়ংকর হয়ে ওঠার আগেই আঘাত হানেন সেই তাসকিন। বোলিংয়ে ফিরে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন ৪৪ বলে ৪৬ রান করা ক্লাসেনকে।
ক্লাসেন ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মিলারও। রিশাদের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন তিনিও। ২৯ রান করে ফিরতে হয় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেটে ১১৩ রান তুলতে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার তানজিম সাকিব। ২ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, একটি উইকেট পেয়েছেন রিশাদ।
- ফখ|চখ