chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে অর্থলিপ্সু বাবা-মায়ের নিষ্ঠুরতার সাক্ষী দুই অবুঝ শিশু!

৩ জানুয়ারি পাঁচলাইশ থানাধীন পলি হাসপাতালে মুন্নী আক্তারের যমজ সন্তান প্রসব হয়। ওই দিনেই যমজের এক ছেলে ও এক মেয়ে বাচ্চাকে তাঁর স্বামী হাবিবুর রহমান ও সে মিলে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। নিষ্পাপ এ দুটি শিশু পৃথিবীর মুখ দেখলেও জন্মদাতা মা-বাবার আদর,স্নেহ, মমতা থেকে বঞ্চিত হয়। জন্মের সাথে সাথে মা বাবার অর্থলিপ্সুর কারণে নিষ্ঠুরতার সাক্ষী হয়ে থাকলে ওই দুই সহোদর।

তবে বিপত্তি বাঁধে টাকার ভাগাভাগি নিয়ে। সন্তান বিক্রির টাকায় স্বামী ভাগ বসতে চাইলে ক্ষিপ্ত হন স্ত্রী। পরে বিষয়টি গড়ায় মামলায়। আদালত স্বামীর বিরুদ্ধে মানব পাচার অভিযোগে করা মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দিলে তদন্তে উঠে আসে ‘যোগসাজশে’ এ দম্পত্তির ‘সন্তান বিক্রির’ তথ্য।

গতকাল ৮ জুন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের বিএ মাস্টার বাড়ি থেকে ভিকটিম শিশু রায়ানকে ও ফাহমিদাকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকা হতে উদ্ধার করে পিবিআই। যমজ দুই শিশুর বয়স মাত্র ৫ মাস ৫ দিন।

বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোর প্রধান এসপি নাইমা সুলতানা বলেন, ‘বর্তমানে শিশু সন্তান দুটি পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো এর হেফাজতে রয়েছে। অবিলম্বে তাঁদের আদালতে উপস্থাপন করা হবে। বাকিটা আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।’

মামলায় যা ছিল

৩ জানুয়ারি পাঁচলাইশ থানাধীন পলি হাসপাতালে বাদি মুন্নী আক্তারের যমজ সন্তান প্রসব হয়। ঘটনার দিনেই মুন্নীর প্রসবকৃত যমজের এক ছেলে ও এক মেয়ে বাচ্চাকে তাঁর স্বামী হাবিবুর রহমান অজ্ঞাতানামা মহিলাদের হাতে তুলে দেন। এসময় মামলার বাদি মুন্নী আক্তার ডা. রোকসানা আকতার ও ডা. মামুনকে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা জানায় বাচ্চা দুইটি অসুস্থ বিধায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর স্বামী হাবিবুর রহমান দুই শিশুকে নিয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে গেছেন বলে তথ্য দেন। পরে যমজ বাচ্চা শিশুদের না পেয়ে মা মুন্নী আক্তার আদালতে মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনাল মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), চট্টগ্রাম মেট্রো’কে নির্দেশ প্রদান করেন।

মামলা তদন্তে যা বেরিয়ে এলো

মামলাটি তদন্তে করতে গিয়ে পিবিআই পুলিশ চাঞ্চল্যকর কিছু পান। এতে উঠে আসে মামলার বাদি মুন্নী আক্তার বাবুর্চির সহকারি হিসেবে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এক পর্যায়ে মুন্নী সন্তান সম্ভবা হন। অপরদিকে, রাঙ্গুনিয়া থানার রাজানগর ইউনিয়নের আবুল হাশেমের স্ত্রী শিরু আকতারের কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তিনি নবজাতক পুত্র সন্তান দত্তক ও বোয়ালখালী মোহরা এলাকার হাসান মুরাদের স্ত্রী রুনা আকতারের কোন মেয়ে সন্তান না থাকায় তিনিও নবজাতক কন্যা সন্তান দত্তক নিতে আগ্রহী ও সন্তান খুঁজছিলেন। তাদের সাথে সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সেলিমপুর ছিন্নমূল এলাকার মো. আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী রাশেদা বেগমের সাথে পরিচয় হয়। আর সেই রাশেদা বেগম তাঁদের দুজনকেই আশ্বাস দেন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে তাঁদের উভয়কে পছন্দমত নবজাতক ছেলে-মেয়ে দত্তক এনে দেবেন।

পরে রাশেদা বেগম কথা অনুযায়ী শিরু আকতার ও রুনা আকতারের সাথে সন্তান সম্ভবা থাকা মামলার বাদি মুন্নীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। নবজাতক ছেলের বিনিময়ে শিরু আকতার রাশেদা বেগমকে ৩ লাখ টাকা এবং রুনা আকতার নবজাতক মেয়ের বিনিময়ে ১ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। মুন্নী আক্তার বিষয়টি তাঁর স্বামী হাবিবুর রহমান সাথে আলোচনা করলে স্বামীও অর্থের বিনিময়ে দত্তক দিতে রাজি হন। পরিকল্পনা অনুযায়ী (আল্ট্রা করে আগে থেকেই অবহিত) এক ছেলে সন্তান ও এক কন্যা সন্তান প্রসব করলে নগদ ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে দুই যমজ শিশুকে দত্তক দেন।

এ কাজের মধ্যস্থতাকারী রাশেদা বেগম ১ লাখ টাকা নেন। ঘটনার বেশ কিছুদিন পরে মামলার বাদি মুন্নীর স্বামী (মামলার ১নং বিবাদী) হাবিবুর রহমান তাঁর স্ত্রীকে মারধর করে দেড় লাখ টাকা নিয়ে গেলে মুন্নী আক্তার তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতের মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। এতে নানা ঘটনা বেরিয়ে আসে।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের প্রধান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানার নেতৃত্বে ওসি মাসুদ পারভেজ, সঙ্গীয় ফোর্স এসআই মো. শাহেদুল্লাহসহ টানা কয়েক দিনের অভিযানে দুই যমজ শিশুকে রাঙ্গুনিয়া ও নগরীর অক্সিজেন এলাকা থেকে উদ্ধার করেন।

  • ফখ|চখ
এই বিভাগের আরও খবর