chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মনে মনে রোজই হোক মা দিবস

মা। ছোট্ট একটা ডাক। তাতেই ধরা জীবনের সব চেয়ে কাছের মানুষটি। যাঁর শরীর বেয়ে এই পৃথিবীতে আসা, যাঁর আদরে-যত্নে বেড়ে ওঠা, যাঁর জীবনের সবটুকু জুড়ে সন্তানকে ভাল রাখার খিদে। সেই মাকে খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠতে দেখলে কার না ভাল লাগে!

অতি দূরের বস্তু যেমন নজরে আসে না, তা অতি সন্নিকট হলেও তেমনই নজর এড়াই যায়। বাংলাদেশে মাতৃবন্দনার ধুমধামের আড়ালে আছে মায়ের প্রতি অবজ্ঞা, অবহেলার করুণ সত্যটি। বৃন্দাবনে যাঁরা ভিক্ষা করে জীবনধারণ করেন, তাঁরা অনেকেই সন্তানের মা।

বয়স বাড়লে বাংলাদেশের মহিলারা অত্যন্ত বিপন্ন হয়ে পড়েন। সন্তানের সংসারে যাঁরা বাস করেন, তাঁদেরও অসুস্থতার চিকিৎসা হয় বিলম্বে, অথবা হয় না। বিশেষত ব্যয়সাধ্য চিকিৎসাগুলি এড়িয়ে যাওয়া হয়। নানা সমীক্ষায় প্রকাশ, বৃদ্ধারা নিঃসঙ্গতায় ও একাকিত্বে ভুগছেন। প্রায়ই নির্যাতনের শিকার হয়ে বেঁচে আছেন।

একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় প্রকাশ, দশ জন বৃদ্ধার চার জনই নিয়মিত গালমন্দ শুনে থাকেন, দশ জনে তিন জন অবহেলার শিকার। সম্পত্তির অধিকার নাই, স্বাধীন রোজগারের উপায়ও নাই, সামাজিক সুরক্ষার প্রকল্পগুলিতে স্থান নাই বললেই চলে। অতএব মাতা ও মাতৃসমাদের কথা ভাবার জন্য একটি দিবস বরাদ্দ করে ভুল হয় নাই। দেশে মায়েদের সুরক্ষিত ও সুখী জীবন নিশ্চিত করতে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত সুচিন্তার প্রয়োজন আছে।

সন্তানদের চাহিদা মিটাতে যাঁরা জীবনের একটি বড় অংশ ব্যয় করেছেন, পরবর্তী প্রজন্ম তাঁদের চাহিদা মিটাতে কী করেতেছে, বছরের এক দিন সেই চিন্তা করতে হবে বইকী?

প্রশ্ন কেবল বৃদ্ধার নিরাপত্তার নয়। অকালমাতৃত্ব, অনিচ্ছা-মাতৃত্বও নজর এড়াতে চাই। সন্তানের জন্য শারীরিক বা মানসিক ভাবে প্রস্তুত হবার পূর্বেই গর্ভধারণ, তা বাংলাদেশের এক পরিচিত সমস্যা। মাতৃত্বকে মূল্যবান করে মেয়েদের অবমূল্যায়নের পুরাতন রীতিটিও দুর্মর। এক সমীক্ষায় প্রকাশ, বেশিভাগ মেয়ে কৈশোর পার হবার পূর্বেই সন্তানের জন্ম দিয়েছে। অপুষ্টি ও রক্তাল্পতা মা ও শিশু উভয়কেই বিপন্ন করে ফেলে, তা বহু আলোচিত। কিন্তু মায়ের স্কুলশিক্ষা অসম্পূর্ণ থাকবার যে মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি, তার হিসাব কেউ করে না। অকালমাতৃত্বের জন্য বলিপ্রদত্ত কন্যাসন্তানের জন্য যথেষ্ট বিনিয়োগও করে না পরিবার। কিশোরী মায়েদের প্রায় অর্ধেকই যে অক্ষরপরিচয় হয় নাই, তা কাকতালীয় নয়।

মাতৃত্ব বহু মেয়ের জীবনে পূর্ণতার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসে না। উপযুক্ত মানসিকতা প্রস্তুত হবার পূর্বেই সন্তানপালনের দায়িত্ব তাদের উপর চাপিয়া বসে। মাতৃত্বের জয়ধ্বনিতে এই কিশোরীদের দীর্ঘশ্বাস চাপা পড়ে যায়। মাতৃত্ব মূল্যবান বলেই তাকে একটি জৈবিক প্রক্রিয়ায় পরিণত করার চেষ্টা নিন্দনীয়।

মেয়েদের নিজেদের দেহ ও জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিয়ে মাতৃত্ব আরোপের যে বিপজ্জনক প্রবণতা শুরু হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই মহিলারা তার প্রতিবাদে মুখর। অশিক্ষা অপুষ্টি, অক্ষমতায় সফল মাতৃত্বের সূচনা হতে পারে না। মাতৃদিবস আহ্লাদে অপচয় না করলেও হয়।

  • ফখ|চখ
এই বিভাগের আরও খবর