নির্মাণকাজের মেয়াদ গেলেও অগ্রগতি ৪০ শতাংশ
সীতাকুণ্ডে রেলস্টেশন ভবন
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা রেলস্টেশন ভবনের নির্মাণকাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। অথচ কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারের লোকজনের দেখা নেই। ফলে স্টেশনের ভবন না থাকায় স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমসহ যাবতীয় কার্যক্রম চলছে প্ল্যাটফর্মের ওপর তৈরি করা টিনের ঘরে। এতে অনেকটা অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছে স্টেশন নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তারা ভবনের মূল কাজ শেষ করেছে। রেল কর্তৃপক্ষ তাদের কাজের টাকা ছাড় দিচ্ছে না। তাই তারা কাজ করতে পারছে না। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা বারবার ঠিকাদারকে কাজ শেষ করার তাগাদা দিচ্ছে। ঠিকাদারও কিছুদিনের মধ্যে কাজ শুরু করবেন বলে আশ্বস্ত করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মের ওপর টিনের ঘেরা দেওয়া ঘর। তার ভেতরে রয়েছে স্টেশন নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি। একপাশে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। প্ল্যাটফর্মের পেছনে মাটির ওপর ভবনের কলাম ও বিম উঁকি দিচ্ছে। পাশেই রয়েছে নামফলক। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নামফলকটি উন্মোচন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।
রেলস্টেশন মাস্টার সাইফুদ্দীন বলেন, ২০২১ সালেই নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণের জন্য পুরোনো স্টেশন ভবনটি ভাঙা হয়। এর পর থেকে তাঁরা টিনের ঘেরা বেড়ার ঘরে প্ল্যাটফর্মের ওপর আছেন। নতুন ভবন নির্মাণের কাজ কিছুদিন ভালোভাবে হয়েছিল। এরপর হঠাৎ ঠিকাদারের লোকজন আসা বন্ধ করে দেন। এরপর মাঝেমধ্যে ঠিকাদারের লোকজন আসেন। তখন মনে হয়, আবার কাজ শুরু হবে, কিন্তু তা আর শুরু হয় না। রেলওয়ে সূত্র জানায়, স্টেশনটির একতলা ভবন নির্মাণে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেই দরপত্র পান মেসার্স কর্ণফুলী বিল্ডার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার এ কার্যাদেশ পান ২০২২ সালের ৫ জুলাই। কাজটি শেষ করার কথা গত বছরের ১১ মে। এখন পর্যন্ত ঠিকাদার তুলে নিয়েছেন ৩২ লাখ টাকা। কাজ শেষ হয়েছে ৪০ শতাংশ।
জানতে চাইলে মেসার্স কর্ণফুলী বিল্ডার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্সের প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম বলেন, কোম্পানি কিছুটা অর্থসংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাদের একাধিক বিল রেলওয়েতে আটকে আছে। ফলে তাঁরা এ কাজ শেষ করতে পারেননি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবারও কাজ শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
অর্থসংকটের কথা জানিয়ে মেসার্স কর্ণফুলী বিল্ডার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্সের মালিক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, কাজ ফেলে রাখতে চান না কোনো ঠিকাদার। কাজ বন্ধ হওয়ার পর চার টন রড চুরি হয়েছে ওই এলাকা থেকে। এ জন্য তাঁরা রেলওয়ে থানায়ও মামলা করেছেন। রেলওয়ের একাধিক দপ্তরে তাঁদের কাজ চলছে। কিছু কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু সেগুলোর বিল এখনো রেলওয়ে থেকে পাননি। তাই তাঁরা অর্থসংকটে পড়েছেন। ওই স্টেশন ভবনের ফাউন্ডেশন হয়ে গেছে। ফলে বেশির ভাগ কাজ শেষ। এখন এক মাসের কাজ বাকি আছে। তাঁরা দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করবেন। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ আবদুল হানিফ বলেন, ঠিকাদারের অর্থসংকট আছে, এটা বলার সুযোগ নেই। তাঁদের কাজ শেষ করতেই হবে। একটা নির্দিষ্ট সময় দেখবেন তাঁরা। পরে ওই ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে নতুন ঠিকাদারকে দিয়ে অবশিষ্ট কাজ করানো হবে। সে ক্ষেত্রে আগের ঠিকাদার তো কিছু পাবেন না। বরং তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
চখ/ককন