chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

রেলওয়ের এসএসএইয়ের পত্রে সরঞ্জাম চুরিতে আরএনবি ও আনসার নাম!

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে পুরাতন সেল ডিপোতে রক্ষিত সরঞ্জাম চুরি ঠেকাতে দায়িত্ব পালন করছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) ও আনসার সদস্যরা। সরঞ্জাম রক্ষায় দায়িত্বে থাকা আরএনবি ও আনসার সদস্যরা যন্ত্রাংশ চুরির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি  জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ইঞ্জিনিয়ার মো. সাজ্জাদুল ইসলাম ও  পাহাড়তলীর নিউ সেলডিপোর উর্ধতন উপ সহকারি প্রকৌশলী (এসএসএই) গোলাম মোস্তফা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আরএনবি চিফ বরাবরে দুটি পৃথকপত্রে ডিপোতে দায়িত্বরত আরএনবি ও আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে চুরিতে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেন।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, পাহাড়তলীস্থ পুরাতন সেল ডিপোতে রেলের কোটি কোটি টাকার সরঞ্জাম রয়েছে। স্থানীয় কিছু চোর ও সিন্ডিকেট রাতের আধারে দামি সরঞ্জামগুলো চুরি র আসছিল। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চুরি ঠেকাতে সেখানে আরএনবি ও আনসার সদস্য নিয়োগ দেয়। সম্প্রতি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পুরাতন সেল ডিপোর সিসি টিভির ফুটেজে আরএনবি ও আনসার সদস্যরা চুরির সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি ধরা পড়েছে। তবে সেই ফুটেজে ধরা পড়া চুরির মালামালের পরিমান কম হলেও এরআগে চুরি হওয়া বেশি পরিমাণ মালামাল চুরি ঘটনার রহস্য এখনো উন্মোচন হয়নি। ফলে ডিপোতে থাকা রেলের কোটি কোটি টাকার মালামাল রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

পাহাড়তলীর নিউ সেল ডিপোর উর্ধতন উপ সহকারি প্রকৌশলী (এসএসএই) গোলাম মোস্তফার লেখা একটি চিঠিতে দেখা গেছে ৩০০ টি ভ্যাকুয়াম সিলিন্ডার চুরির ঘটনায় এখনো কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কে বা কারা চুরি করেছে তা স্পষ্ট না হওয়ায় বহাল তবিয়তে রয়েছে চোর চক্রের মূলহোতা ও সদস্যরা। এই চুরির ঘটনা নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার ও আরএনবি পরস্পর পরস্পরকে দোষারূপ করছে।

জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের বরাবরে লেখা এসএসএই গোলাম মোস্তফার চিঠি সুত্রে জানা গেছে, নিউ সেলডিপোর ১নং বিটে রক্ষিত ৬৭টি ভ্যাকুয়াম সিলিন্ডারের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে দৈন্দদিন দায়িত্ব গ্রহণ ও হস্তান্তর কার্য সম্পাদন করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর নিরাপত্তা বাহিনী রক্ষিত মালামালের সংখ্যা কম আছে বলে দায়িত্ব পালন বন্ধ করে দেয়। পরে ডিপোর তৎকালীন আরএনবির চীফ ইন্সপেক্টর মো: ইস্রাফিল মৃধা হারানো মালামাল উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দিলেও দীর্ঘ দেড় বছরেরও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে কাস্টুডিয়ান মো: নজরুল ইসলাম মালামাল গণনা করে সেখানে ৬৭ টি ভ্যাকুয়াম সিলিন্ডার কম পান। এ ৬৭ টি ভ্রাকুয়াম সিলিন্ডার কে কিভাবে চুরি করেছে তা এখনো রহস্যময়। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি একই স্থান থেকে আরো ১ টি ভ্যাকুয়াম সিলিন্ডার চুরি হয়। যা নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে রক্ষিত “মাষ্টার কী বক্স রেজিষ্টারে ডায়রি করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর নিজস্ব রেজিষ্টারে রাত্রে দায়িত্বরত আরএনবি মাসুদুর রহমানও বিট নং ১ হতে ১টি মালামাল কম পাওয়া যায় বলে ডায়রিতে উল্লেখ করেন।

গত ২৮ মার্চ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আরএনবি চীফ বরাবরে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ইঞ্জিনিয়ার মো. সাজ্জাদুল ইসলামের প্রেরিত এক চিঠিতে আরএনবি ও আনসার সদস্যরা চুরির সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট করেন।  চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২৬ মার্চ দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ মার্চ আনুমানিক ৩ টা থেকে সকাল ৬ টার মধ্যে পুরাতন সেইল ডিপো, পাহাড়তলীতে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য’রা আরো ২ জন লোক প্রবেশ করিয়ে  ডিপোতে রক্ষিত অকেজো মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। যা পর দিন সকালে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করার সময় পরিলক্ষিত হয়। কাস্টুডিয়ানের ভাষ্য মতে চুরি হওয়া ওই ৪ বস্তা মালামালের আনুমানিক ওজন ১০০ কেজি।

সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৪ জন লোক উক্ত চুরির সাথে জড়িত ছিলেন। তারমধ্যে ২ জন আরএনবি সদস্য এবং ২ জন আনসার সদস্য।  এছাড়া একজন নিরাপত্তা প্রহরী ও একজন আনসার সদস্য পুরাতন সেল ডিপোর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। বাকি ২ জন সদস্য ওয়ার্কশপের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আরএনবি ও আনসার। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, এরআগেও আরএনবি সদস্যদের নৈতিকস্থলন সম্পর্কে অবিহিত করা হলেও কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণে এ ধরণের অপরাধ বারবার সংঘটিত হচ্ছে।

এ ব্যপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আরএনবির চিফ কমান্ডেন্ট মো.জহিরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমান্ডার রেজুয়ান উর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • ফখ|চখ
এই বিভাগের আরও খবর