chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বদলে দেবে চট্টগ্রামের যোগাযোগ-বাণিজ্য

সহসা খুলছে সড়ক পথটি

  • ২০ মিনিটে যাওয়া যাবে ১৬ কি:মি পথ।

  • # মহানগরের যোগাযোগ কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আসবে।

  • # কমবে যানজট।

সহসাই খুলছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ভোগান্তি হ্রাস এবং পুরো মহানগরীকে যানজট থেকে রক্ষায় নির্মাণ করা হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রয়াত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে নামকরণ করা নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এখন দৃশ্যমান। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার ৩শ কোটি টাকা।   

গত ১৪ নভেম্বর স্বপ্নের উড়ালসড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সী-বিচ পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এখন দৃশ্যমান। এটিতে ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্প থাকবে। এর মধ্যে ১৩টি র‌্যাম্প নির্মাণাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে যানবাহনের টোলের হার অনুমোদন দিয়েছে। তবে কবে নাগাদ যান চলাচল শুরু হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।

তিনি আর বলেন, এ সড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা রাখা হয়েছে ৬০ কিলোমিটার। এখানে নিরাপত্তার জন্য বসানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে স্পিড ক্যামেরা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এই ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করবে। নির্ধারিত গতির চেয়ে যারা কম বা বেশি চালাবে সেসব যানবাহনগুলোকে অটোমেটিক স্পিড ক্যামেরার মাধ্যমে জরিমানার আওতায় আনা হবে।’

সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন্ শামস্ বলেন,  চট্টগ্রাম নগরীতে যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে মহানগরীর লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট।

১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ উড়াল সড়কটি বিমান বন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-চট্টগ্রাম বন্দর-বারিক বিল্ডিং-আগ্রাবাদ চৌমুহনী, দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেঁষে টাইগারপাস মোড় হয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হলে কোনো ঝক্কি ছাড়াই সরাসরি যাওয়া যাবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর। বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে ধরা যাবে কক্সবাজারের পথও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ শেষ হলে চট্টগ্রাম মহানগরের যোগাযোগ অবকাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আসবে। এটি একই সঙ্গে সিইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড ও চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও দ্রুততর করবে। সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে। বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার মাইলফলক প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত হবে এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে।

এক্সপ্রেসওয়েটির কারণে চট্টগ্রামের শিল্প-বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে বলে মনে করছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। কিন্তু বাণিজ্যিক রাজধানীর সুবিধাগুলো চট্টগ্রামে নেই। ঢাকার পর চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি যানজট হয়। ব্যবসায়িক কাজে ঢাকাসহ বিদেশে যেতে বিমানবন্দর যাওয়ার জন্যও পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বিদেশিরাও চট্টগ্রামে এলে একই ঝামেলায় পড়েন।

তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যানচলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে শাহ আমানত সেতু কিংবা কালুরঘাট এলাকা থেকেও দ্রুততম সময়ে চট্টগ্রাম বিমাবন্দরে যাওয়া যাবে। এরই মধ্যে বহদ্দারহাট-মুরাদপুর, মুরাদপুর-লালখান বাজার দুটি ফ্লাইওভার এদিকের যানজট অনেকটা কমিয়েছে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এই দফায় সময় বেড়েছে এক বছর। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। একই সময়ে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা করা হয়। এ ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

  • তাসু|ফখ|চখ
এই বিভাগের আরও খবর