চাটগাঁইয়া মেজ্জানের গোস্ত, খাইলে বুঝিবা ন খাইলে ফস্তাইবা
চাটগাঁইয়া মেজ্জানের গোস্ত, খাইলে বুঝিবা ন খাইলে ফস্তাইবা (অর্থাৎ চট্টগ্রামের মেজবানের গোস্ত খেলে স্বাদ বোঝা যায়, না খেলে আফসোস করতে হয়) এ উক্তিটি চট্টগ্রামে সর্বত্র প্রচলিত। যুগ যুগ ধরে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের গোস্ত দেশব্যাপী আলোচিত হয়ে আসছে।
চাটগাইয়াবাসীর ইফতার ও সেহরীতে নানা পদের মধ্যে সেরা কোনটি এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের গোস্ত সব পদ থেকে এগিয়ে রাখতে চাইবেন অনেকে। হরেক রকম মসলা দিয়ে বিশেষ কায়দায় রান্না গরুর গোস্তের এই পদের চাহিদা থাকে সারা বছরই। তাই চট্টগ্রামের অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোঁরায় অনেকেই মেজবানের মাংস রাখতে চান ইফতার আয়োজনে। তাই ক্রেতাদের ভিড় বাড়ে রেস্তোরাঁগুলোতে।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে ব্যতিক্রমী আইটেম হিসেবে ইফতার আয়োজনে কয়েক বছর ধরে যোগ হয়েছে মেজবান স্টাইলে রান্না করা গোস্ত আর পরোটা। মেজবানের স্বাদ নিতেই মূলত চাটগাঁইয়ারা এ ধরনের আয়োজনকে অনেক পছন্দ করেন। গোস্ত আর ঝোলে পরিপূর্ণ কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। প্রায় অর্ধশতাব্দি ধরে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান দেশব্যাপী আলোচিত হয়ে আসছে। প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুবার্ষিকী, কোন প্রতিষ্ঠানের অভিষেক, পুনর্মিলনীসহ বড় বড় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মেজবানের আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রামবাসীও এ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এ মেজবান করে আসছে । সাদা ভাতের সঙ্গে গরু বা মহিসের গোস্ত, চনার ডালে হাড্ডিসহ গোস্ত ও সে সঙ্গে গরম নলার ঝোল । ইফতার ও সেহরী হিসেবে চট্টগ্রামে কি উচ্চ বা নিম্মবিত্ত সবার প্রছন্দ মেজবানের গোস্ত। গরুর গোস্তের গোড়া ও নেহারি দিয়ে ৩-৪ রকমের আইটেমে অনন্য উপাদেয় খাদ্যের আয়োজন হয়ে থাকে মেজবানে গোস্ত বিক্রির।
সরেজমিন রোদেলা বিকেল, ওয়েলপার্ক, রেডচিলি, আগ্রাবাদ হোটেল, বুনেনজা, হোটেল প্যানিনসুলা, লর্ডস ইন, হোটেল সেন্ট মাটিন, হোটেল এম্বোশিয়া, ওঁ চিটাগং, হোটেল জামান, সোনালী, চক মালঞ্চ, চেরাঙ্গী, হান্ডিসহ একাধিক রেস্তোরা ঘুরে দেখা যায়, মেজবানি গরুর গোস্তের বিশেষ পদ। প্রতি কেজির দাম রাখা হয়েছে ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা।
লালখান বাজারের হাইওয়ে সুইটস, জিইসি মোড়ের মিসফালাহ, ফুড পস্নাজা, জামান হোটেলের বিভিন্ন আঙ্গিনায়, নিউমার্কেট, লালদীঘি, রেয়াজুদ্দিন বাজার, হালিশহর, আগ্রাবাদ, অলংকার মোড়, বহদ্দারহাট মোড়, জামালখান সড়ক, চেরাগী পাহাড় এলাকায় বিভিন্নম রেস্টুরেন্টগুলোও ইফতারির পসরায় মেজবানের গোস্তের নানা পসরা সাজিয়েছে দোকানগুলো। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে উচ্চ,মধ্য ও নিম্মবিত্তশ্রেণীর লোকজন মেজবানের গোস্ত কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছরের নামাজের পর থেকেই।
ওয়েলপার্কের ইফতারির তালিকায় অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি মেজবানি গোস্তের পরিবেশনাও রয়েছে বলে জানান এখানকার হেড অব মার্কেটিং মো. হাসানুল ইসলাম।
এক সময় মেজবানের গোস্তের বিষয়টি শুধুমাত্র চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে ছোটখাট আয়োজনে পরিবেশন ছিল। কিন্তু তা এখন ছড়িয়ে শহরমুখী যেমন হয়েছে তেমনি বিশালতাও চলে এসেছে। বিশেষ করে বিত্তশালী ও ধনাঢ্য পরিবারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের বিশাল আয়তনের কমিউনিটি সেন্টারগুলো ভাড়া নেয়া হয় ইফতার মাহফিল উপলক্ষে। আর তাতে ইফতার হিসেবে মেজবানের গোস্ত দিয়ে খাওয়ানো হয়।
গতকাল ২৭ মার্চ নগরীর একটি কনভেনশন সেন্টারে নগর বিএনপির উদ্যোগে ইফতার মাহফিল হয়। সেখানে প্রায় ১০ হাজার লোককে গরুর গোস্ত দিয়ে মেজবান খাওয়ানো হয়।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইফতার মাহফিলে মেজবানের গোস্ত দিয়ে ইফতার করানো হয়। চট্টগ্রামে বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ইফতার মাহফিল উপলক্ষ্যে মেজবানের আয়োজন চলছে চট্টগ্রামের কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে। হাজার হাজার রোজাদারকে ইফতারে মেজবান খাওয়ানো হচ্ছে সেখানে। ঘরোয়া পরিবেশে আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু বান্ধব এবং প্রতিবেশীরা ইফতার ও সেহরীতে মেজবানের আয়োজন করতে দেখা যাচ্ছে।
- ফখ|চখ