চট্টগ্রামে নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বাংলা সেমাই
চট্টগ্রামে বাংলা সেমাইয়ের (চিকন সেমাই) খ্যাতি ও কদর দেশজুড়ে। ঈদ সামনে রেখে এবারও বাংলা সেমাইপল্লিতে ব্যস্ততা বেড়েছে,কারখানাগুলোতে দিনরাত কাজ চলছে। তবে মাননিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকায় এই সেমাই এবার অত্যন্ত নোংরা,অস্বাস্থ্যকর ও স্যাঁতসেঁতে জায়গায় তৈরি হচ্ছে।
বাংলা সেমাইপল্লী হিসাবে পরিচিত চট্টগ্রাম মহানগরীর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ,রাজাখালী ও মিয়াখান নগর এবং বাকলিয়া এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে,সেখানে ঘরে ঘরে বাংলা সেমাই তৈরির কাজ চলছে। নারী-পুরুষেরা কেউ ময়দার খামির তৈরি করছেন। কেউ যন্ত্রে সেমাই বানাচ্ছেন। কেউ আবার বানানো সেমাই বাড়ির উঠানে রোদে শুকাচ্ছেন।
এখানকার কারিগরেরা জানান, একসময় হাতমেশিনে বাংলা সেমাই তৈরি করতেন তারা। এখন বিদ্যুতে চালিত যন্ত্রে সেমাই তৈরি করছেন। যন্ত্রে তৈরি এসব সেমাই খাঁচায় ভরে সরাসরি বিক্রির জন্য নেয়া হচ্ছে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ,আসাদগঞ্জ,চকবাজার, বক্্িররহাট, রিয়াজউদ্দিনবাজার, আগ্রাবাদসহ পাইকারী বাজারে। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারেরা এসেও এখান থেকে ট্্রাকে ভরে সেমাই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে,কিছু অভিজাত কোম্পানিতেও সরবরাহ করা হচ্ছে চিকন সেমাই। এসব কোম্পানির লোকজন কারখানাগুলোতে গিয়ে দরদাম ঠিক করার পর চাহিদা অনুযায়ী মোড়ক ও কোম্পানির লেভেল দিয়ে আসছেন।
বাকলিয়ার মিয়াখান নগর ও তুলাতলী এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ১০-১৫টি কারখানায় কাজ চলছে। অধিকাংশ কারখানা স্যাঁতসেঁতে, নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন। কেউ বসতঘরে,কেউবা বাড়ির উঠানে, আবার কেউবা রাস্তার পাশে নালার উপর সেমাই তৈরির যন্ত্র বসিয়েছেন।
সবচেয়ে নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরি হচ্ছে চাক্তাই এলাকার বস্তি ঘর গুলোতে। এছাড়া বেশ কয়েকটি দোকানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি হচ্ছে।
গত ১৪ মার্চ দুপুরে নগরীর চাক্তাই এলাকায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত অভিযান চালায়। অভিযানে গিয়ে জেলা প্রশাসনের টিম চাক্তাই এলাকার ফাইভ স্টার গলিতে ‘নাজিম বাংলা সেমাই’ কারখানার খোঁজ পায়। মোহাম্মদ মিয়া বিল্ডিং নামে একটি আবাসিক ভবনের নিচতলায় কারখানার অবস্থান। সেখানে চুল্লি জ্বালিয়ে আগুনের ঝুঁকি তৈরি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই বানানো হচ্ছিল। ভবনের মালিক মো. মিয়াকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ম্যাজিস্ট্রেট এবং কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে দেন।
এদিকে চাক্তাই বেশ কয়েকটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি কারখানায় চার-পাঁচজন করে নারী শ্রমিক কাজ করছেন। তৈরি করা সেমাই চটের বস্তার ওপর শুকাতে দিয়েছেন। বস্তা যেখানে বিছানো হয়েছে, সে স্থানগুলো ময়লা আবর্জনায় ভরা। সেখানে মাছি ভনভন করছে। সেমাই তৈরির কারিগরেরা নোংরা পায়ে চটের উপর দিয়ে হেঁটে সেমাই ওল্টে-পাল্টে দিচেছন। কয়েকটি কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে,বিদ্যুৎ নেই। কারখানা বন্ধ। কারখানার পাশে গামলায় রাখা আছে খামির। খামির ও বাসি পানির কারণে দূগন্ধ ছড়াচ্ছে এলাকায়। প্রায় কারখানায় শ্রমিকদের দেখা গেছে, গাঁ থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে। খামির তৈরি করার সময় ঘামগুলো খামিরের সাথে পড়ে মিশে যাচ্ছে। সেমাইয়ের রং আকর্ষণীয় হওয়ার জন্য তাতে দেয়া হচ্ছে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল।
- ফখ/চখ