দেড় কোটি টাকা ইজারা দিয়ে ঘাটে ভিড়তে পারছে না ইজারাদার !
চট্টগ্রাম নগরের বাংলা বাজার ষ্ট্যান্ডরোডস্থ এপিসি রেলী ঘাটসহ ১২৬ কাটা জায়গা সরকার হতে চুক্তিমূলে নতুন করে ভাড়া নেয়ার পর বিপাকে পড়েছেন ইজারাদার সাইফুল ইসলাম। বাংলাদেশ জুট করপোরেশন (বিজেসি) থেকে ইজারা পাওয়ার তিন মাস অতিবাহিত হলেও ঘাটে ভিড়তে পারছেনা তিনি ও তাঁর ভাইরা। তাঁর অভিযোগ, একটি অবৈধ দখলদারচক্র পেশীশক্তি খাটিয়ে ঘাটটি দখল করে রেখেছেন। এতে তাঁর মাসে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
বাংলাদেশ জুট করপোরেশন সূত্র জানায়, বাংলা বাজার ষ্ট্যান্ডরোডস্থ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন এপিসি রেলী ঘাটসহ ১২৬ কাটা পরিত্যক্ত জায়গা ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর পিএস শিপিংকে ৩ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। তাদের মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এরপর প্রতিষ্ঠানটির সাথে পুনরায় চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় বিজেসি নতুনভাবে টেন্ডার আহ্বান করে। এতে ১১৬ টাকা সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান তৈয়ব শাহ এন্টারপ্রাইজ জায়গার লিজ পান। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর ইচ্ছাপত্র অনুসারে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫১০৮ টাকা পে-অর্ডারে বাংলাদেশ জুট করপোরেশনকে ইজারাদার পশ্চিম মাদারবাড়ীর নজমুল ইসলামের পুত্র সাইফুল ইসলাম পরিশোধ করেন।
সাইফুল ইসলামের ভাই মাসুদুল ইসলামের অভিযোগ , সমস্ত নিয়ম মেনে আমার প্রতিষ্ঠান এপিসি রেলী ঘাট ইজারা নেই। তবে এ ঘাটের পূর্বের ইজারাদার পিএস শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আলম মাসুদ আমার ভাই সাইফুল ইসলাম, শাহিদুল ইসলাম ও মো. জাহিদুল ইসলামকে ইজারাকৃত জায়গায় যেতে বাঁধা দিয়ে আসছেন। আমাদেরকে সন্ত্রাসী দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
মাসুদুল ইসলাম বলেন, আমরা ইজারা পাওয়া জায়গায় গেলে জীবননাশের হুমকি দেয় আশরাফুল আলম মাসুদ ও তার সহযোগীরা। ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে তারা আমাদের এ হুমকি প্রদান করেন। পরে ৩১ ডিসেম্বর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডবলমুরিং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নং-১৯৩৪) দায়ের করি। তিনি বলেন, কোটি টাকা খরচ করে ঘাট ইজারা নিয়ে খাল কেটে কুমির আনার মতো হয়েছে। এখন আমি ও আমার ভাইরা জীবন শঙ্কায় রয়েছি।
এদিকে গত ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) তসলিমা কানিজ নাহিদা স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, বিজেসি মালিকানাধীন ২৭৫০ একর জায়গা অবৈধ দখলদার মেসার্স পিএস শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা অংশীদার আশরাফুল আলম মাসুদকে ৭ দিনের মধ্যে সংস্থাকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য “উচ্ছেদ নোটিশ” প্রেরণ করা হয়। কিন্তু তিনি সম্পত্তিটি বিজেসি’র কাছে হস্তান্তর না করে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সিডিল রিডিশন ৬১৫৮/২৩ দায়ের করেন। ওই মামলায় বিচারপতি মোঃ জাকির হোসেনের একক বেঞ্চ ৪ মাসের স্থিতি অবস্থা আদেশ জারি করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে বিজেসি পিটিশনার হয়ে সিভিল পিটিশন ফর লীভ টু আপীল নং ৩৭৯৫/২৩ দায়ের করেন। যা গত ১৭ ডিসেম্বর চেম্বার বিচারপতি এম.এনায়েতুর রহিমের আদালতে শুনানীকালে হাইকোর্টের ৪ মাসের স্ট্রে আদেশকে স্থগিত করা হয়। ফলে বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশন কর্তৃক মেসার্স পিএস শিপিং-কে বিজিসি’র সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করতে আর কোন বাধা নেই।
তসলিমা কানিজ নাহিদা তাঁর অফিস আদেশে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে বিজিসি’র চট্টগ্রামের সহকারি ম্যানেজার হাসান মুরাদ বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত দখল হয়ে যাওয়া বিজেসি’র সম্পত্তিগুলো উদ্ধারে অভিযানে আসেন। পরে মেসার্স পিএস শিপিং এর অনুরোধে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের সময় দেয়। এরমধ্যে ২৪ জানুয়ারি মেসার্স পিএস শিপিং পক্ষে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধে হাইকোর্টে রিট করে। আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দেন।
এপিসি রেলী ঘাটের ইজারাদার সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের উচিত খুব সহসা দখলদার উচ্ছেদ করে আমাদের কাছে জায়গাটি আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া।
- ফখ|চখ