ডিসি পার্ক : ফুলের রাজ্য ফুলে ফুলে রঙিন
সাগরপাড়ে ১৯৪ একর জমিতে ১২৭ প্রজাতির ফুল বাতাসের সাথে দোল খাচ্ছে। নানা রঙের প্রজাপতি ফুলের উপর বসছে, উঠছে, মধু খাচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চারা ডানাকাটা পরীর মতো নেচে খেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে পার্ক জুড়ে। বাগান জুড়ে লক্ষাধিক ফুলের গাছে-গাছে ফুটে আছে নানা রঙে-ঢং-এ ফুল। পাখিদের কলকাকলি। কোথাও খিটখিটে লাল, হলুদ, কোথাও মেরুন, বাদামি, কোথাও দফদফে সাদা ফুলের হাসি। উঁচু-নীচু জমিতে ফুলে ফুলে ভরা এলাকাটিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নাম দিয়েছেন ‘ডিসি পার্ক’। তবে দুবাইয়ের মিরাকল গার্ডেনের প্রতিচ্ছবি এ পার্কটিকে চট্টগ্রামবাসী বলছেন-‘ফুলের রাজ্য’।
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাটে অবস্থিত ডিসি পার্ক। ফুল ও পাতা বাহারের সমন্বয়ে গড়ে তোলা পার্কটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন এখানে আসা পর্যটকরা। এ বাগান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে ফুলের সৌরভ।
১৯৪ একর খাস জমির ওপর কয়েক মাস আগেও যেখানে ছিল নানা ধরনের অবৈধ স্থাপনা। এখন বাতাসে ফুলের ঘ্রাণ, পাখিদের কলকাকলি। হাওয়ায় হাওয়ায় দোলা খাচ্ছে নানান রঙের ফুল। সাগর তীরের পাশে হরেক রকমের ফুলের শোভা দেখে নজর কাড়ে সবার। এই ফ্লাওয়ার পার্কে বিকেলে এখন ভিড় করছে সাধারণ মানুষ। ফুলে ফুলে সেজে উঠছে পুরো এলাকা। রঙ-বেরঙের নানা জাতের দেশীয় গাঁদা-জবা-ডালিয়া ফুলের পাশাপাশি রয়েছে বিদেশি জাতের ফুলও। এ যেন ছোটখাটো ফুলের রাজ্য। অপার সৌন্দর্যের ভিড়ে মূল আকর্ষণ টিউলিপ ফুল।
হালিশহরের আনিকা চক্রবর্তী বলেন, বাহারি ধরনের এত ফুল সচরাচর দেখা যায় না। অনেক ফুলপ্রেমী আছেন যারা এখানে এসে যেমন চারা পাবেন, তেমনি ফুলের চাষ এবং পরিচর্যা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাবে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, দিঘিগুলোতে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া এখানে নৌকাবাইচ ও মাছ শিকারের ব্যবস্থা করা হবে। আর পুরো এলাকাকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে মাস্টার প্ল্যানের কথা জানান জেলা প্রশাসক।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, জনগণের জন্য এখানে আরও বিনোদনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফৗজদারহাট সাগর উপকূলে উত্তর সলিমপুর মৌজার সরকারি মালিকানাধীন এ খাস জমি গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে দখল করে মাদক ব্যবসা ও অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিলো একাধিক চক্র। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান দায়িত্ব নিয়েই মাত্র এক মাসের মধ্যে এসব অবৈধ দখল মুক্ত করতে নির্দেশ দিলে সীতাকুণ্ডের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলমসহ জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা সেটি উচ্ছেদ করেন।
জেলা প্রশাসক মাদক সাম্রাজ্যের দুর্নাম ঘোচাতে শুরু করেন ফুল উৎসব। প্রথমবারের ওই ফুল উৎসবটি চট্টগ্রামে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলো। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো সেই উৎসবের আমেজ। সেই ধারাবাহিকতায় এবারো সেখানে দ্বিতীয় বারের মতো আয়োজন হচ্ছে ফুল উৎসব। আগামী ২৫ জানুয়ারি এ পার্কে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী ফুলমেলা। উদ্বোধন করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। এবার প্রায় ২০ লাখ মানুষ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন বলে ধারণা আয়োজকদের।
দর্শক প্রিয় করতে বাগান সাজানো হয়েছে দুবাইর মিরাকল গার্ডেনের আদলে। ফলে ফৌজদারহাট ডিসি পার্কে এখন সাজ সাজ রব। হয়েছে নতুন নতুন স্থাপনা, শিশুদের রাইড, ওয়াকওয়ে, সানসেট ভিউ পয়েন্ট, কবুতর শেড, কায়াকিং, ঘুড়ি উৎসব, বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সুব্যবস্থা, কিডস জোন ও বিশেষ সেলফি কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি ১২৭ রকমের আকর্ষণীয় ফুলে সুসজ্জিত করা হয়েছে পুরো পার্ক। ফুল উৎসবে উপলক্ষে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, যুব-বৃদ্ধ সকল বয়সী ও শ্রেণির পেশার মানুষের চিত্ত বিনোদনের উদ্দেশ্যে সাজানো হয়েছে পুরো এলাকা। যা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ফুল উৎসবে দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবে নেদারল্যান্ডস থেকে বীজ এনে জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ফুটানো সাড়ে পাঁচ হাজার টিউলিপ। ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রত্যেক ফুলের পাশে লেখা থাকবে তাদের নাম ও বৃত্তান্ত।
ফখ|তাসু|চখ