চট্টগ্রামের রোগীদের বিদেশমুখী কমাবে চমাশিহা ক্যান্সার হাসপাতাল
পুরো চট্টগ্রামে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা কম নয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে গত বছর স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সারসহ মোট ২ হাজার ৯৩০ জন ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়েছেন। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসক দেখানো ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যায়না বলে অভিযোগ রোগীদের। যার কারণে প্রায় সকল রোগীদের ক্যান্সার হলেই বিদেশ পাড়ি জমান। তবে এবার চট্টগ্রামেই বসে আধুনিক চিকিৎসা পাবে ক্যান্সার রোগীরা।
আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পাশেই বহুল প্রত্যাশার পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এটির ফলে চট্টগ্রামের রোগীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমাবে দাবী সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, গত ৫ নভেম্বরে চমাশিহার ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও রিসার্চ সেন্টারে উদ্ভাধন হয়। হাসপাতালটি ২০২১ সালে ১০ তলা ভবন নির্মানের কাজ শুরু হয়। সেখানে থাকবে ১৫০ শয্যার ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, ৩৪ শয্যার সিসিইউ, ৩০ শয্যার অত্যাধুনিক আইসিইউ, কার্ডিয়াক ইউনিট, নিওনেটলজি, শিশু আইসিইউ, নিউরোসার্জারি, মা-শিশুর জন্য বিশেষ ইউনিট, কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার ও শিশু-বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে। প্রায় ১৩০ কোটি অর্থ ব্যয় করে হাসপাতালটি গড়ে উঠছে। যার প্রায় ৫০ কোটি টাকা চট্টগ্রামের মানুষর অনুদানে দিয়েছে।
ইতোমধ্যে ভবনটির প্রায় ৯২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালটিতে ইতোমধ্যে ক্যান্সার নির্ণয়ের অত্যাধুনিক লিনিয়ার এক্সেলেটর ও সিটি সিমুলেটর স্থাপন করা হয়েছে। মেশিন ২টিই সর্বশেষ ভার্সন আনা হয়েছে। যেগুলো দিয়ে সহজে ক্যান্সার নির্ণয় ও রসেবা দেওয়া যাবে দাবী সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের।
ক্যান্সার ইউনিটে আরও যেসকল সেবা থাকবে-রেডিওয়েশন অনকোলজি, মেডিকেল অনকোলজি, সার্জিক্যাল অনকোলজি, গাইনী অনকোলজি , অনকো ক্রিটিকাল কেয়ার , পেলিয়েটিভ কেয়ার, হেমাটলজি , শিশু অনকোলজি ও হেমাটোলজির প্রায় সকল সেবা অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।
সরেজমিন ১৯ ডিসেম্বর গিয়ে দেখা যায়, চমাশিহার ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও রিসার্চ সেন্টারের ১০ তলা ভবনের অবকাঠামো নির্শাণ করা প্রায় শেষ পর্যায়ে। হাসপাতালে প্রবেশ করার মুখেই রিসিভশন। সেখানে ৩ -৪ জন বসার জন্য চেয়ার পাতানো। চেয়ারের পেছনে হাসপাতালের লগো লাগানো হয়েছে। ডানপাশেই অনকোলজি বিভাগের প্রবেশদ্বার।
অনকোলজি বিভাগের ২ রুমে রাখা হয়েছে লিনিয়ার এক্সেলেটর ও অপরটি সিটি সিমুলেটর। তবে ভবনটির উপরের কোনা তলায় যাওয়া হয়নি। এখনো নতুন ভবনে চিকিৎসা সেবা শুরু হয়নি। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ক্যান্সারের নতুন ভবনে সেবা দেওয়া শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে।
ক্যান্সার ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. শেফাতুজ্জাহান, চট্টগ্রামে ক্যান্সার চিকিৎসা খুবই নাজুক। ক্যান্সার হলেই রোগীদের ভারত কিংবা অন্য দেশে যেতে হতো। চট্টগ্রাম বা দেশের প্রায় হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসায় এখনো কোবাল মেশিন দিয়ে চিকিৎিসা সেবা দেওয়া হয়। অথচ এটি উন্নত কোনো দেশে এই মেশিনটি ব্যবহার করা হয় না। এটি অনেক পুরোনো ভার্সন মেশিন। কিন্ত আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে এনেছি লিনিয়ার এক্সেলেটর। যেটি দিয়ে এখন পুরো বিশ্বে সেবা বা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেই মেশিন এখন চট্টগ্রামে রয়েছে এবং এটি দিয়ে রোগীদের সেবা দেওয়া হবে। থাইল্যান্ড, মালশিয়া , কানাডা রোগীরা যায় সেখানেই এই মেশিন দিয়ে সেবা দেওয়া হবে। এখন তো চট্টগ্রামে রয়েছে এই মেশিন। তবে কেন রোগীরা বাইরে চিকিৎসা সেবা নিতে যাবে? এখন রোগীদের মাঝে প্রচার করতে হবে -‘চট্টগ্রামেও ক্যান্সার রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। ’ তবেই তো রোগীরা বুঝতে পারবেন আমাদের প্রতিষ্ঠানের সেবা সর্ম্পকে। দেশে বসেই যদি উন্নত মানের সেবা পাওয়া যায় তাহলে কোনো রোগীই বিদেশে যাবে না। উল্টো ঢাকা বা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামে সেবা নিতে আসাবে রোগীরা।
অত্যাধুনি মেশিন আনা হয়েছে। সেই তুলনায় হাসপাতালে দক্ষ জনবল আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালের জন্য এভার কেয়ার, ডেল্টা দেশে যে আধুনিক হাসপাতাল রয়েছে। সেখান থেকে একজন করে স্পেশালিষ্ট আনা হয়েছে। এছাড়া সবোরাহ প্রতিষ্ঠানের লোকজন টানা একমাস এখানে এসে প্রশিকআষ দিয়ে যাবেন আামদের কর্মীদের। কাজেই নিসন্দেহে বলা যায়- দক্ষ কর্মীর অভাব হবে না।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক ড. নুরুল হক বলেন, ‘চট্টগ্রামে একটি পূর্নাঙ্গ বা বিশেষায়িত হাসপাতাল হবে এটা দীর্ঘ দিনের একটি স্বপ্ন। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। বেসরকারী প্রতিষ্টান হলেও আমাদের প্রতিষ্ঠানে তুলনামুলক ভাবে চিকিৎসা খরচ কম। রোগীরা উন্নত মানের চিকিৎসা পায়। ক্যান্সারে ইউনিটে ব্যতিক্রম হবে না। নায্যমূল্য উন্œত মানের সেবাটা রোগীরা পাবেন। তবে একেবারে বিনামূল্য তো সম্ভব নয়। অত্যাধুনিক মেশিন , দেশের নামকরা চিকিৎসকরা এসে সেবা দিয়ে যাবেন। ঘরে বসেই চট্টগ্রামে সেবা পাবে রোগীরা। শুধু চট্টগ্রাম নয় বাংলাদশের বিভিন্ন প্রাণ থেকে রোগীরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে আসবেন। ধাপে ধাপে ক্যান্সার চিকিৎসায় সকল সেবা যোগ করা হবে এই হাসপাতালে।’
ফখ|চখ