মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হারায় ১৬ শিক্ষক-ছাত্র, কর্মচারী
১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দীর্ঘ নয় মাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কনসেনট্রেশান ক্যাম্প বানিয়ে দখল করে রাখে পাক হানাদার বাহিনী। ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করার ৯ দিন পর ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হানাদারমুক্ত হয়।
বিভীষিকাময় এ স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৬ জন শহীদ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়ারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতরের চেইনম্যান বীরপ্রতীক মোহাম্মদ হোসেন, দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক অবনী মোহন দত্ত, চাকসুর সাধারণ সম্পাদক ইতিহাস বিভাগের ছাত্র আবদুর রব, উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রভাস কুমার বড়ুয়া, বাংলা বিভাগের ছাত্র মনিরুল ইসলাম খোকা, মোহাম্মদ হোসেন ও মোস্তফা কামাল, অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র নাজিম উদ্দিন খান ও আবদুল মান্নান, ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ফরহাদ উদ-দৌলা, বাণিজ্য অনুষদের ছাত্র খন্দকার এহসানুল হক আনসারি, ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আশুতোষ চক্রবর্তী, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবুল মনসুর, গণিত বিভাগের ছাত্র ভুবন (সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের মহানায়করা নভেম্বর ১৮, ২০১৬-দৈনিক পূর্বকোণ)।
মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ বছর আগে ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য। প্রায় ২০০ ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, ১২ শিক্ষার্থীসহ তিন কর্মকর্তা শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দফতরের কর্মচারী মোহাম্মদ হোসেনকে বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হয়।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পরে ৮ মার্চ তৎকালীন উপাচার্য ড. এ. আর মল্লিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে পাকিস্তানিদের সম্ভাব্য আক্রমণের প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে গঠিত হয় ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ’। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ইনামুল হকের নেতৃত্বে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি পাকিস্তানি সৈন্যরা যেন বিশ্ববিদ্যালয়কে দখলে নিতে না পারে সে জন্য রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হওয়ার প্রস্তুতি চলতে থাকে।
ফখ|চখ