chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ঝিনুকের শহরে স্বপ্নের ট্রেন যাত্রা

দেশের রেল নেটওয়ার্কে আজ ১১ নভেম্বর (শনিবার) যুক্ত হচ্ছে ঝিনুকের শহরখ্যাত পর্যটন নগরী কক্সবাজার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর খুলে দেয়া হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ। তারপর যাত্রী নিয়ে ট্রেন ছুটবে নান্দনিক নির্মাণশৈলীর বিশ্বমানের চোখ ধাঁধানো আইকনিক রেলস্টেশনের পথে। ঢাকা থেকে মাত্র ১৮৮ টাকায় কক্সবাজারে সহজে যাওয়া আসার সুযোগ হলো ট্রেনে চেপে।

কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, আজ ১১ নভেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে উদ্বোধন করবেন কক্সবাজারবাসীর বহু কাঙ্ক্ষিত দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন। এরপর তিনি মহেশখালীতে যাবেন আর দুপুরে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন।

সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়। এবারের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন

নতুন যুগের সূচনার অপেক্ষায় পর্যটন নগরী কক্সবাজার। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারে ট্রেন যাবে- এখন শুধু তার অপেক্ষা। আক্ষরিক অর্থে ঝিনুক না হলেও সমুদ্র দর্শনে যাওয়ার পথে প্রথমেই সামুদ্রিক একটা আবহ পাবে কক্সবাজারে নির্মিত দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশনে এসে। কেবল আসা-যাওয়ার জন্যই নয় এই স্টেশন, দেয়া হয়েছে বহুমাত্রিক রূপ। এখন চোখ ধাঁধানো আইকনিক স্টেশনটি দৃশ্যমান।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আইকনিক রেলস্টেশনটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বমানের সব সরঞ্জাম। নানা জটিলতা পেরিয়ে পরিপূর্ণতা পেয়েছে ভবনটি। আর আইকনিক রেলস্টেশন দেখে সবাই মুগ্ধ; আর প্রশংসাও কুড়িয়েছে এডিবিরও।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের আওতায় ৩৯টি বড় সেতু, ২২৩টি ছোট সেতু ও কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হয়েছে। হাতি চলাচলের জন্য রয়েছে আন্ডারপাস। নির্মাণ করা হয়েছে ৯টি স্টেশন। স্টেশনগুলো হলো- দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার। ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।

এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৯২ কিলোমিটার অংশে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই ভাগে কাজটি করছে।

চোখ ধাঁধানো আইকনিক স্টেশন

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের একমাত্র বিশ্বমানের দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন। এটি শুধু স্টেশন নয়, পরিপূর্ণ একটি কমপ্লেক্স। রয়েছে তারকামানের হোটেল, লকার, শপিংমল, রেস্তোরাসহ বিশ্বমানের সব সুযোগ-সুবিধা।

আইকনিক রেলস্টেশনের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে আইকনিক রেলস্টেশনটি। আইকনিক ভবনটি নির্মাণ অত্যন্ত জটিল ছিল। যেমন: যে স্টিলগুলো দেখা যাচ্ছে, এর যত দাম না; তৈরি করতে তার চেয়ে চার গুণ বেশি টাকা ব্যয় হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা টাকার দিকে তাকাইনি। এতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও সহযোগিতা করেছে।

ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, কক্সবাজারে নির্মিত আইকনিক রেলস্টেশনটি দেখে মুগ্ধ এডিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, এ রকম সুন্দর ও নান্দনিক আইকনিক রেলস্টেশন বিশ্বে আর কোথাও নেই। এটা দেখে অন্যান্য দেশেও এরকম আইকনিক ভবন নির্মাণ করবেন; তা গর্বের সঙ্গে বলে গেছেন এডিবির কর্মকর্তারা।

কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নপূরণ

সারা দেশের সঙ্গে পর্যটননগরীর রেল যোগাযোগ স্থাপন কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পেলো।

পর্যটন ব্যবসায়ী আবু তালেব শাহ বলেন, আজ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন। এরপরই হয়তো পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেন ছুটে আসবে। এতে সাশ্রয়ী মূল্যে পর্যটকরা আসবেন পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। এতে করে কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন বাড়বে। বিশেষ করে, আইকনিক স্টেশনটি কথা না বললেই নয়। আইকনিক রেলস্টেশনটি চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। আশা করি, অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনবে এই রেলপথ।

দোহাজারি-কক্সবাজারে যাতায়াত অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

শ্রিম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সেব) এর মহাসচিব মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, দোহাজারি-কক্সবাজার রেল চালু হলে পর্যটকদের যাতায়াত সহজ হবে। পাশাপাশি স্বল্প সময়ে ও কম খরচে কৃষিপণ্য, মাছ, লবণ পরিবহণ করা যাবে। এতে কক্সবাজারের পর্যটনসহ অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।  কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এই রেলপথ এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, রেল চালু হলে পর্যটক যাতায়াত সহজ হবার পাশাপাশি স্বল্প সময়ে ও কম খরচে কৃষিপণ্য, মাছ, লবণ পরিবহন করা যাবে। এতে কক্সবাজারের পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

চখ/ফখ

এই বিভাগের আরও খবর