টানেল যুগে বাংলাদেশ, সাধুবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
নদীর তলদেশে কোন সড়ক পথ বাংলাদেশের মানুষের কাছে নয় দক্ষিণ এশিয়াবাসীর কাছে কল্পকাহিনি ছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন এক অসাধ্য সাধনে স্বপ্ন বুনেছিলেন। দীর্ঘ ৪ বছর পর অবাক ও বিস্ময়কর এ টানেল আজ বাস্তবতায় রূপ নেয়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদীর তলদেশে টানেলের যুগে আজ প্রবেশ করতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ভূগর্বস্থে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল আমার কাছে ইট, পাথর বা কংক্রিটের রাস্তা নয়। এটা টানেলেও অধিক। এটা একটা স্বপ্নজয়। বাংলাদেশের মানুষের আরেক বিজয়। এই বিজয় শুধু এক সৎ ও সাহসী স্বপ্নদ্রষ্টার পক্ষেই অর্জন সম্ভব।
স্বপ্ন আসলে কোনো সাধারণ বিষয় নয়। স্বপ্ন থাকলেই মানুষ বেঁচে থাকে। স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়ে গেলে মানুষের মৃত্যু হয়। বেঁচে থাকে শুধু তার শরীর। ওই কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত এ টানেল শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম। টানেলটি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণের আনোয়ারা প্রান্তকে যুক্ত করেছে।
৬০ কিলোমিটার গতিতে টানেলটি পার হতে সময় লাগবে ৩ মিনিট। ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটিতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ প্রায় ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারের।
আজ ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন এই টানেলের। এরপর আগামীকাল ২৯ অক্টোবর সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে টানেলটি। খরস্রোতা কর্ণফুলির তলদেশ দিয়ে এমন অবকাঠামোকে দেশের সামর্থ্যের অনন্য উদাহরণ। এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত খুলতে যাচ্ছে । আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশগুলো যেমন মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর হয়ে আমাদের যে যাতায়াত করতে হতো সে সময়টি বেঁচে যাবে। এতে আমদানি-রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে এবং জিডিপিতে বড় অবদান থাকবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউব। দক্ষিণ পাশের টিউব দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী যান চলাচল করবে। আর উত্তরের টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা মুখী যান চলাচল করবে।
টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। সড়ক পথের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। কর্ণফুলী নদীর উভয় পাশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চীনের সাংহাই শহরের ন্যায় চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি অ্যান্ড টু টাউন’ মডেলে গড়ে তোলাই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল। টানেল চালুর পর বাণিজ্যিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। টানেলকে ঘিরে দেশের নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। সেই সঙ্গে হাজারো সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে প্রত্যাশা করছে সরকার।
বঙ্গবন্ধু টানেল আমাদের একটি প্রকৃত স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী একজন যোদ্ধা, একজন বীর, তিনি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য স্বপ্ন দেখেন। তিনি কখনও ক্লান্ত হন না। স্বপ্নজয়ে তাঁর কখনও ক্লান্তি আসে না। কারণ একজন প্রকৃত স্বাপ্নিকের থাকে সৎসাহস, দেশপ্রেম ও দেশের মানুষের জন্য ভালোবাসা। দেশে সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু নির্মানের সাফল্যের পর চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল নতুন আরেক সাফল্যের পথ রচনা করেছে। বঙ্গবন্ধু টানেলের
পরতে পরতে আছে স্বপ্ন, আর স্বপ্নজয়ের গান। এর প্রতিটি টিউভের সেই গান লেখা আছে। আছে বাধার পাহাড় পেরোনোর অজস্র গল্প। চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল বিজয়ের গান ছড়িয়ে দিচ্ছে সবদিকে। দেশে-বিদেশে। ছড়াবে কাল থেকে কালে। সেই স্বপ্নের এক নতুন সঞ্চারণ বঙ্গবন্ধু টানেল । আর তার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাই বঙ্গবন্ধু টানেল আমাদের আরেক বিজয়, আরেক স্বপ্নজয়।
আজ ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে আসবেন। তিনি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ টানেল উদ্বোধনের পাশাপাশি আরও ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। তিনি আনোয়ারা উপজেলায় দলীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে গত ১৫ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টিয়ে দিয়েছেন তিনি।
টানেল যুগে প্রবেশ উপলক্ষে জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে সাজ সাজ রব উঠেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। প্রিয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে চট্টগ্রামে স্বাগতম। অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
লেখক: মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, প্রকাশক ও সম্পাদক চট্টলার খবর।
চখ/ফখ