চট্টগ্রামে পেঁয়াজ,আলু ডিমে সরকারি মূল্যে পাত্তা নেই
শুধু এবারই নয়, কখনো কোনো পণ্যই সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করেন না দোকানিরা। সরকার নির্ধারিত মূল্যের কথা বললে উল্টো বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় ভোক্তাদের। এমনটিই জানালেন কয়েকজন ক্রেতা। চট্টগ্রামে বেপরোয়া আলু, পেঁয়াজ, ডিমের বাজার। সরকারের নির্ধারিত দামের প্রতিফলন নেই সেখানে। বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে।
ভোক্তাদের দাবি, আগেও কয়েক দফায় ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বেঁধে দিয়ে তা কার্যকর করতে পারেনি সরকার। তাই পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের ক্ষেত্রে যে এটা কার্যকর হবে, সে ব্যাপারে খুব একটা আশবাদী হতে পারছেন না তারা। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার দেশে প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম বেঁধে দিলেও তা কার্যকর হওয়ার কোনো চিত্র চোখে পড়েনি চট্টগ্রামের বাজারে।
আজ শনিবারের সকালের বাজারে খুচরা পর্যায়ে নির্ধারিত ৬৪ থেকে ৬৫ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৯৫ টাকায়, ৩৫ থেকে ৩৬ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়, আর ১২ টাকার ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে সাড়ে ১৩ টাকার মধ্যে। সকাল ৮ টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্নঅংশের পাড়া-মহল্লার মুদি ও সবজির দোকান, স্থানীয় বাজার, কয়েকটি সুপারশপের আউটলেট এবং চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাঁচাবাজার রিয়াজউদ্দিন বাজার ও বহদ্দারহাট বাজার ঘুরে এমনটি দেখা গেছে। এ সময়ের ভেতর অন্তত ২০ জন দোকানি, ব্যবসায়ী ও ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ দোকানি ও ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় এই ৩টি কৃষিপণ্যের বেঁধে দেওয়া দামের বিষয়ে তারা অবগত আছেন। কিন্তু আগের দামেই যেহেতু তাদের পণ্য কিনতে হচ্ছে, তাই তারা সরকার নির্ধারিত দামে তা বিক্রি করতে পারছেন না।
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে “নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী
টিপু মুনশি বাড়তে থাকা দামের লাগাম টানতে পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দেন। তাতে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কথা হয় নগরীর বাকলিয়ার বউ বাজারের মুদি দোকানি সাইরা বানুর সঙ্গে। তার দোকানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৮০ টাকায় । পাশাপাশি ডিম ১৩ টাকায় ও আলু ৪৮ টাকায় বিক্রি করছিলেন তিনি।
সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের প্রসঙ্গে কথা উঠলে তিনি বলেন, ‘সরকার তো ঘোষণা দিয়েই খালাস। আমরা যে পাইকারি আড়ৎ থেকে মাল কিনি, সেইখানে তো দাম কমে নাই। ৭০ টাকা দিয়ে পেঁয়াজ কিনে তো ৬৫ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব না।’ একই এলাকার সবজি বিক্রেতা আতর আলভ দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা ও আলু ৫০ টাকায় বিক্রি করছিলেন।
চট্টগ্রামে সুপারশপ স্বপ্ন’র একটি আউটলেটে প্রতি পিস ডিম ১২ টাকায় বিক্রি হলেও পেঁয়াজ ৭৫ টাকা ও আলু ৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
এদিকে বাকলিয়ার কালা মিয়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী সজল দাশ প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেল ৪০০ টাকায়। সে হিসেবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে ৮০ টাকা। কাছাকাছি আরও কয়েকজন একই দামে পেঁয়াজ বিক্রির কথা জানালেন। আর চট্টগ্রামের বৃহত্তর আলুর বাহার দোহাজারীর বিভিন্ন হাটে শুক্রবার আকার ও ধরনভেদে প্রতি পাল্লা আলু ২২০ থেকে ২৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে দেখা যায়। সে হিসাবে প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ে ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা।
এ ছাড়া বহদ্দারহাট, কালামিয়া বাজার, কাজীর দেউরি বাজার, পতেঙ্গা বাজার, ষোলশহর বাজার, চান্দগাঁওয়ের কামাল বাজার, বাকলিয়ার বউ বাজার, জামাই বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রতি ডজন লাল ফার্মের ডিমের দাম ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা চাইলেন বিক্রেতারা। জানালেন, আড়তদারদের কাছ থেকে তারা যে দামে কিনেছেন, সে অনুসারেই ডিম বিক্রি করছেন তারা।
মআ/চখ