উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য কৃষি বিভাগের, ১৮৯ টাকা প্রণোদনার ঘোষণা
রবি মৌসুম
চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি খাত। বন্যায় পানিতে ভেসে গেছে এসব এলাকার অধিকাংশ সবজি ক্ষেত। এ বাস্তবতায় রবি মৌসুমের ১০ ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে ১৮৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
শহরের চাহিদার বেশিরভাগ সবজির আসত দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে। ‘সবজির ভান্ডার’ খ্যাত দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে শহরে সবজি আসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে নগরীর সবজির বাজারে। দামবৃদ্ধির পাশাপাশি উত্তর বঙ্গের সবজির উপর নির্ভরতা বেড়েছে। তবে এই সমস্যার সমাধান হিসেবে দ্রুত ফলশীল সবজির চাষ ও রবি মৌসুমে সবজির আবাদ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও বন্যায় জেলার ১৫ উপজেলায় কৃষিখাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫ হাজার ৬৭ হেক্টর জমির শরৎকালীন সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার আর্থিক মূল্য ১১২ কোটি ৩১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৩২ হাজার ৪৯৫ জন। এদিকে উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ায়। দুই উপজেলায় ফসলের ক্ষতির আর্থিক মূল্য ৫৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে চন্দনাইশ উপজেলায় ১ হাজার ৪০ হেক্টর জমির সবজির সিংহভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে সাতকানিয়া উপজেলায় ২১২ হেক্টর জমির সবজির আবাদ নষ্ট হয়ে যায়।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বন্যায় সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রভাব পড়েছে বাজারে। ভোক্তাপর্যায়ে দাম বেড়েছে প্রতিটি সবজির। এই অবস্থার তাৎক্ষণিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ে ফলন হয় এমন সবজি আবাদ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সর্বোপরি রবি মৌসুমে আবাদ বাড়ানোর জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, বন্যায় ক্ষেতের বেশিরভাগ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। পানির নিচে চার দিন নিমজ্জিত থাকায় অধিকাংশ সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। পানি কমে আসার পর পলি ও বালু জমে ক্ষেতের অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। ফলে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় সবজি সরবরাহ কমে গেছে। এ বন্যায় আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থও নেই বললেই চলে। কৃষকের ফসলের ক্ষতি নির্ণয়পূর্বক তা প্রশমন করা জরুরি।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. ওমর ফারুক বলেন, সাম্প্রতিক বন্যার প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। তবে ধীরে ধীরে কমে আসবে বলে আশা করছি। আমরা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছি। কৃষকদের সহযোগিতার পাশাপাশি নানা সহায়ক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত সময়ে ফলন হয় এমন সবজির আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, আর্থিক সংকটের কথা বিবেচনা করে কৃষকদের জন্য কৃষি ঋণ সহজ করা হয়েছে। ভর্তুকিমূল্যে বীজ কেনার জন্য দোকান ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এসব দোকান থেকে কৃষকরা তাদের প্রয়োজনীয় বীজ কমদামে কিনতে পারবে।ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বন্যার প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। দাম বেড়ে গেছে প্রতি কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা। ১০০ টাকার কমে কোনো সবজিই পাওয়া যাচ্ছে না। নগরীর বহদ্দাহাট কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সিংহভাগ সবজিই আসে চন্দনাইশ, দোহাজারী, চকরিয়া, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও সীতাকুন্ড থেকে। কিন্তু সাম্প্রতিক টানা বৃষ্টি ও বন্যার কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে এক কেজি সবজিও আসছে না। রাঙ্গামাটি থেকেও সবজি সরবরাহ কমে গেছে। বর্তমানে আড়তে যা সবজি আসছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তাও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
১৮৯ টাকা প্রণোদনার ঘোষণা
এদিকে চলতি অর্থবছরে রবি মৌসুমের ১০ ধরনের ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে ১৮৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রণোদনার ঘোষণা করেছে সরকার।এ প্রণোদনার আওতায় ৬৪টি জেলার ১৯ লাখ ৫৩ হাজার ৭০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হবে।
সোমবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, সয়াবিন, শীতকালীন পেঁয়াজ, মুগ, মসুর ও খেসারি ডাল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একজন কৃষক ১০ ফসলের যেকোনো একটি চাষের জন্য এ প্রণোদনা পাবেন। প্রণোদনার আওতায় একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য পাবেন প্রয়োজনীয় গমবীজ ২০ কেজি, ভুট্টার বীজ ২ কেজি, সরিষা ও সূর্যমুখীর বীজ ১ কেজি, চিনাবাদামের বীজ ১০ কেজি, সয়াবিনের বীজ ৮ কেজি, শীতকালীন পেঁয়াজের বীজ ১ কেজি, মুগ ও মসুরের বীজ ১ কেজি এবং খেসারির বীজ ৮ কেজি। এর সঙ্গে সার পাবেন বিনামূল্যে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বাজেট কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা এবং বীজ ও চারা খাত থেকে এ প্রণোদনা দেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত আদেশ ইতিমধ্যে জারি করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে শিগগিরই এসব প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।
চখ/ এআর