chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ভবিষ্যৎ নেতা হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাত পরামর্শ

ভবিষ্যতে নেতা হতে কাতার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (২৩ মে) দুপুরে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্স কমপ্লেক্স অডিটরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা এবং সংগ্রাম থেকে ভবিষ্যত নেতাদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ তুলে ধরতে চাই।

শেখ হাসিনার দেওয়া ৭টি পরামর্শ হলো:

১. নেতার মূল্যবোধ থাকতে হবে; ২. লক্ষ্যের প্রতি অটল থাকতে হবে; ৩. লক্ষ্য অর্জনে পরিপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে; ৪. দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী নেতৃত্ব দিতে হবে এবং সমাজে ‘চেঞ্জ মেকার’ হতে হবে; ৫. জনগণ এবং দলের ওপর আস্থা রাখতে হবে; ৬. মাতৃত্বের চেতনাকে জাগিয়ে তোলতো হবে এবং ৭. নতুন ও ভবিষ্যতকে গ্রহণ করতে হবে।

জীবনে লক্ষ্য থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, জীবনে ভিশন এবং মিশন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর লক্ষ্যে পৌঁছাতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।

জ্ঞান অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর তার সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।

বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নযন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিযে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই। স্মার্ট বাংলাদেশে, একটি স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট মানবসম্পদ থাকবে।

প্রযুক্তির বিকাশে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে যাতে তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অবদান রাখতে পারে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক পর‌্যায় থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করছি। সারাদেশে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার এবং হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এক্ষেত্রে ন্যানো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আইন পাসের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক খাতের সকল বিভাগে বাংলাদেশ অসাধারণ অগ্রগতি লাভ করেছে।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়, আমাদের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যয় আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ-আয়ের দেশ উন্নীত হওয়া। এরইমধ্যে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে।

সরকারের নানা কর্মসূচিতে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে আসার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ সালে দারিদ্রের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বর্তমানে দারিদ্রের হার কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অতি দারিদ্রের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি, সঙ্গে ৪৬০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি। যেখানে ২০০৫-০৬ সালে দেশের জিডিপি ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় ২০০৫-০৬ সালে ৫৪৩ ডলার, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে এটি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ ডলার।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ একটি বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এটিকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। দেশে ক্ষুধা, দারিদ্র, অপুষ্টি, নিরক্ষরতা দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই অগ্রগতি কোনো ‘মিরাকল’ নয়, এটি কষ্টার্জিত সফলতা। এটা আমাদের নারী-পুরুষের সম্মিলিত কাজ। আমি শুধু তাদের কাঙ্খিত পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছি।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বাংলাদেশ আজ যে অবস্থানে এসেছে এই অবস্থানে পৌঁছানোর যাত্রা সহজ ছিল না। এ জন্য তাকে (শেখ হাসিনা) সারাজীবন অগ্নিপরীক্ষা এবং নিপীড়নের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর